সংক্ষিপ্ত
ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ (Ukrain Russia War) আসলে পশ্চিমী শক্তিগুলির সাজানো প্রোপাগান্ডা, প্রমাণ-সহ দাবি সোশ্যাল মিডিয়ায়। কী জানা গেল ফ্যাক্ট চেকে?
গত ১৩ দিন ধরে রুশ আক্রমণ চলছে ইউক্রেনে (Ukrain Russia War)। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিয়েভ-সহ বিভিন্ন শহর। দেখা দিয়েছে চরম শরণার্থী সংকটও। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (United Nations Human Rights Office) জানিয়েছে, রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ৪০৬ জন অসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে এবং ৮০১ জন আহত হয়েছেন। কিন্তু, সত্যিই কি সেখানে যুদ্ধ হচ্ছে? নাকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা তৈরির জন্য বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে দেখাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমী শক্তিগুলি? অন্তত ইন্টারনেটে 'প্রমাণ' সহকারে এই দাবি করা হচ্ছে। সত্যিই কি তাই, দেখে নেওয়া যাক, ফ্যাক্ট চেকে কী জানা গেল -
দাবি -
ইন্টারনেটে সম্প্রতি একাংশের নেটিজেনরা দাবি করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ আসলে পশ্চিমী শক্তিগুলির তৈরি প্রোপাগান্ডা। যা ঘটছে, আদতে তার থেকে অনেকটাই বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। আর এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে অভিনেতাদের। তারাই রুশ আক্রমণের হতাহত হওয়ার অভিনয় করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই দাবির সপক্ষে দুটি ভিডিও-ও পোস্ট করা হয়েছে। প্রথম ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক যুবকের মুখে এক যুবতী নকল রক্ত লাগিয়ে দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন - একটি জাগুয়ার আর একটি প্যান্থারের সঙ্গে বাঙ্কারে, ইউক্রেন ছাড়তে নারাজ ভারতীয় ডাক্তার
আরও পড়ুন - চারিদিকে শুধু ধ্বংস আর মৃত্যুর হাহাকার - ছবিতে ছবিতে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেন
আরও পড়ুন - দেশের সেনায় যোগ দিতে ব্যর্থ, ইউক্রেনে যুদ্ধে নামলেন ভারতীয় যুবক - কী বলছেন বাবা-মা
পরের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকটি বডি ব্যাগের (মৃতদেহ রাখার ব্যাগ) সামনে দাঁড়িয়ে একটি পোলিশ চ্যানেলের একজন সাংবাদিক প্রতিবেদন দিচ্ছেন। কয়েক সেকেন্ড পরই, একটি বডি ব্যাগকে নড়তে দেখা যাচ্ছে এবং আরেকজন সেই ব্যাগের আচ্ছাদনটি সরিয়ে দেন। অর্থাৎ, বডিব্যাগে থাকা ব্যক্তি আসলে জীবিত।
যাচাই -
সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই দুটি ভিডিও। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে প্রথম ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট নিয়ে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে বিপরীত চিত্রানুসন্ধান করা হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, ভিডিওটি মোটেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ওই যুবক একজন অভিনেতা ঠিকই, এবং তার মুখে নকল রক্তই লাগানো হচ্ছে। তবে, ভিডিওটি আসলে ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ইউক্রেনিয় টিভি সিরিজ 'কন্টামিন'এর (Contamin) একটি দৃশ্যের প্রস্তুতির ভিডিও।
দ্বিতীয় ভিডিওটির ক্ষেত্রেও একইভাবে গুগলে বিপরীত চিত্রানুসন্ধান চালানো হয়। তাতে জানা গিয়েছে, এই ভিডিওর সঙ্গেও চলমান যুদ্ধের দূর-দূরান্ত পর্যন্ত সম্পর্ক নেই। ভিডিওটি আসলে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ট্রিয়ার (Australia) ভিয়েনা (Viena) শহরে তোলা। সেখানে 'ফ্রাইডে ফর ফিউচার' নামে এক প্রতিষ্ঠান, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে এক প্রতিবাদ জমায়েতের আয়োজন করেছিল। ভিডিওটি সেই প্রতিবাদ সভার। বডি ব্যাগগুলি ছিল ওই প্রতিবাদেরই অংশ। পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য কার্বন নির্গমনের বিপদকে প্রতীকি হিসাবে দেখাতে সেগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল।
সিদ্ধান্ত -
প্রথম ভিডিওটির ক্ষেত্রে একজন অভিনেতাকে দেখা গিয়েছে এবং তাঁর মুখে নকল রক্ত লাগানো হয়েছে - এই কথা সত্যি। এটাও সত্যি যে, দ্বিতীয় ভিডিওতে বডি ব্যাগের মধ্যে কোনও মৃতদেহ ছিল না। তবে দুটি ভিডিওর ক্ষেত্রেই, ভিডিওগুলির সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কোনও সম্পর্ক ছিল না। কাজেই, এই দুটি ভিডিওকে ব্যবহার করে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে যে পশ্চিমী প্রোপাগান্ডা বলে দাবি করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। গত কয়েকদিনে ইউক্রেন থেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা যে খবর ও ছবি পাঠাচ্ছেন, তাতেই এই যুদ্ধের ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়েছে।