কৃষ্ণকালী রূপে পুজিত হবেন মা কালী, রইল দমদম মিলন সংঘের পুজোর নেপথ্যের কাহিনি
চারিদিকে চলছে পুজো পুজো রব। চলেছে আলো লাগানোর কাজ। আর কদিন পরই আলোর উৎসব। সর্বত্র পালিত হবে ধনতেরাস দিয়ে শুরু হবে মায়ের আরাধনা। কালীপুজোর আগের দিন চোদ্দ শাক খাওয়া ও চোদ্দ প্রদীপ দেওয়ার রীতি বহু যুগ ধরে প্রচলিত। বাঙালি ঘরে এই দিন পালিত হয় ভূত চতুর্দশী। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে পুজিত হন মা কালী। এই সময় চারিদিকে মায়ের আরাধনা করেন সকলে। বাড়িতে তো বটেই, বিভিন্ন প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে পুজিত হন মা কালী। প্রতি বছর দমদমে মিলন সংঘে পুজিত হন মা কালী। এবছরও তার অন্যথা হবে না। প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।

এবছর ৪৯ তম বছরে পা দিল দমদমের মিলন সংঘের পুজো। এই ক্লাবটি ২০,০০০ বর্গ ফুটের। এখানে মায়ের মূর্তি ১৪০ ফুট উচ্চতার। এবছর পুজোর থিমের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণের কালী রূপের কাহিনি উঠে আসতে চলেছে। মন্ডপে ঢোকার মুখেই রয়েছে কৃষ্ণের বাঁশি। দুদিকে দুটো স্তম্ভ করে তার ওপর রয়েছে কৃষ্ণের হাত। তাতে ধরা তাঁর বাঁশি।
মন্ডপের ঢুকতেই চোখে পড়বে কৃষ্ণের কালীরূপ। এক বেদীর ওপর রাখা সে মূর্তি। তার পিছনের অংশে সুসজ্জিত গাছ-পালা। এই মঞ্চের পিছন দিয়েই রয়েছে রাস্তা। যা দিয়ে মূল মন্ডপে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে রয়েছে মায়ের মূর্তি। যার উচ্চতা ১৪০ ফুট। মুন্ড মালা পরিহিত সেই মূর্তিতে শিল্পী ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁরা শিল্প কলা।
দমদমে মিলন সংঘে পুজো বেশ খ্যাত। প্রতি বছরই কোনও না কোনও বিশেষ ভাবনার প্রকাশ করতে চান ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এর বছরও তার অন্যথা হয়নি। ২১ অক্টোবর উদ্বোধন হয়েছে পুজো প্যান্ডেল। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ইসকন থেকে এসেছিলেন রাধা রামন দাস। ছিলেন ডেপুটি হাই কমিশনার বাংলাদেশ এমবাসি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী তৃণা সাহা। টলিউড খ্যাত অভিনেতা সৌরভ সাহা। এরা দুজনই চলচ্চিত্র জগতের বেশ পরিচিত মুখ। দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরিন্দর সিং। ছিলেন দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নট্ট। সঙ্গে ছিলেন আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এই দিনের অনুষ্ঠান ছিল একেবারে অন্যরকম। গতকাল ২১ অক্টোবর এই সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পুজো উদ্বোধন হয়।
কালীপুজো ছাড়াও একাধিক সামাজিক কাজ ও খেলাধূলা মূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ক্লাবের পক্ষ থেকে। বেঙ্গল ফুটবল টুর্নামেন্ট, ফ্রি ডাক্তার ক্যাম্প, রক্তদান শিবির, বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস, বার্ষিক খেলাধুলো ইত্যাদি আয়োজন করা হয়। এছাড়া, সারা বছর ডান্স স্কুল, কোচিং স্কুল, ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, মাল্টি স্পেশ্যালিটি জিমের সুবিধা পান স্থানীয়রা।
এই পুজোর ইউএসপি রয়েছে একাধিক। এদের প্রায় ১৫০০০ দর্শক হয় ফুটবল প্রতিযোগিতা। এই ক্লাবের দেবীর মূর্তির উচ্চতা ১৪০ ফুট। দমদম পুরসভা ও দমদম পুলিশের সমর্থনে এরা পুজো করে থাকেন। এই ক্লাবে প্রায় ৪দিন ধরে নানান ইভেন্টের আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর ক্লাবের পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখানে থাকে বিভিন্ন খাবারের স্টল।
এবছরের পুজোর থিম হল মায়ের কৃষ্ণ কালী রূপ। জানা যায়, দ্বাপর যুগে শ্রীমতি রাধারাণী কৃষ্ণ প্রেম মত্ত ছিলেন। তিনি একদিন হঠাৎ শ্রীকৃষ্ণের রাঁশি ধ্বনি শুনতে পেয়ে হতচকিত হয়ে যান। রাধারাণী তখন আয়ান ঘোষের আলয়ে নিত্যদিনের মতো রন্ধনরতা ছিলেন।
কৃষ্ণের এই মুরলী বংশীর ধ্বনি শুনে রাধার কানে পৌঁছানো মাত্রই রাধা উতলা হয়ে পড়ে। তিনি সেই স্থানে উপস্থিত হন। তখন জটিলা ও কুটিলা আয়ান ঘোষ (রাধার স্বামী)কে গিয়ে নালিশ করেন। তিনি তৎক্ষণাত সেই উপস্থিত হন।
কৃষ্ণ জানতে পেতে তিনি রাধাকে দ্রুত বন্য ফুল তুলে নিতে বলেন। সেই ফুলগুলো তুলে কৃষ্ণের পায়ে দেন। সেই সময় আয়ান পৌঁছে দেখেন রাধা নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে কৃষ্ণকালীর পুজো করছেন। আয়ান আনন্দে আপ্লুত হয়ে যান। তিনি ছিলের কালীভক্ত। এতে রক্ষা পান শ্রীমতি রাধারাণী।
এবছর পুজোর থিমের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণের কালী রূপের কাহিনি উঠে আসতে চলেছে। এমনই কাহিনি দেখা যাবে দমদম পুজোর থিমে।