চার দশকের এক অমর প্রেমকাহিনি, নামী নায়িকা থেকে ঋষির ছায়া হয়েছিলেন নীতু
বলিউডের চকোলেট বয় ঋষি কাপুর। সত্তর দশক থেকে তার মতো দ্বিতীয় আরও চকোলেট বয় খুঁজে পাওয়া যায়নি বলিউডে। '১৯৭৩' সালে ববি সিনেমায় ডিম্পল কাপাডিয়ার সঙ্গে রূপোলি পর্দায় অভিনয় শুরু, এবং সেখান থেকেই গাঢ় বন্ধুত্ব এবং পরস্পরের প্রতি প্রেমে পড়লেও সেই ভালবাসা পরিণতি পায়নি। সালটা ১৯৭৪। 'জেহরিলা ইনসান ' ছবির সেটে প্রথম দেখা নীতু সিং -এর সঙ্গে। একদিকে সদ্য প্রেম ভেঙেছে, ডিম্পল তখন রাজেশ ঘরণী। আর সেই ক্ষততে যেন মলম লাগাতে চলে আসেন নিতু সিং। তারপর থেকে পথচলা শুরু দুজনের। বন্ধুত্ব-প্রেম চলতে চলতেই তা পরিণতি পেয়েছিল ১৯৮০ সালে ২২ জানুয়ারী। দীর্ঘ ৪০ বছরের পথ চলা মুহূর্তে থমকে গেল আজ। কেমন ছিল ৪০ বছরের সেই পুরোনো দিনগুলি। ফিরে দেখা ঋষি-নীতুর ভালবাসার রঙিন ক্যানভাস।
- FB
- TW
- Linkdin
ছোটবেলা থেকে লাজুক ছিলেন ঋষি কাপুর। ডিম্পল কাপাডিয়ার সঙ্গে 'ববি' সিনেমায় সম্পর্ক তৈরী হলেও সুপারস্টার রাজেশ খান্নার কাছে প্রেমের যুদ্ধে হেরে গেছিলেন তরুণ ঋষি। আর তা যেন অকপটে মেনেও নিয়েছিলেন।
যদিও তরুণ বয়সে প্রেমের আঘাতটা বেশ দগদগে ছিল অভিনেতার মনে। ডিম্পলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এতটাই বেড়েছিল যে সেই সময় পার্সি বান্ধবী ইয়াসমিন মেহেতাও ঋষিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।
ঠিক তার পরের বছরেই ১৯৭৪ সালে 'জেহরিলা ইনসান ' ছবির সেটে প্রথম দেখা নীতু সিং -এর সঙ্গে। সেখান থেকে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল।
নীতুর সঙ্গে এতটাই গাঢ় বন্ধুত্ব হয়েছিল যে নীতুর সাহায্যেই ইয়াসমিনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন অভিনেতা। এমনকী নীতুই তাকে ইয়াসমিনকে টেলিগ্রাম করার জন্য সাহায্য করত।
জীবনে যতবার প্রেমে পড়েছেন ঋষি তার সমস্তটাই যেন নির্ধিদ্বায় নীতুকে বলে ফেলতেন অভিনেতা। এমনকী কোনও প্রেমিকার সঙ্গে ঝামেলা হলে বা কারোর সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেও নীতুর কাছে কেঁদে নিজের দুঃখটা কমাতেন।
তাদের এই সম্পর্কও কিছুদিনের মধ্যে নজর কেড়েছিল নেটিজেনদের। কিন্তু নিজেদের সম্পর্কটাকে 'বন্ধুত্ব' বলে দাবি করেছেন এই যুগল।
১৯৭৬ সালে 'কভি-কভি' ছবির শ্যুটিং করেই 'বারুদ'ছবির শ্যুটিংয়ের জন্য প্যারিস চলে গিয়েছিলেন ঋষি। সেখানে গিয়ে নীতুকে মিস করতে শুরু করেছিলেন। শেষমেশ থাকতে না পেরে নীতুকে টেলিগ্রাম করেছিলেন, আর তাতে লিখেছিলেন,'ইয়ে শিখনি বড়ি ইয়াদ আতি হ্যায়'। নীতু তো তা পেয়ে খুব খুশি।
কিন্তু সেখানেও ছিল শর্ত। বিয়ে নয়, শুধু ডেটিং। সেটাও নিশর্তভাবে মেনে নিয়েছিলেন নীতু। এতটাই ভালবাসতেন ঋষিকে যে সব জেনেও টানা চার বছর সম্পর্ক রেখেছিলেন নীতু।
এইরকম করতে করতেই কখন যে নিতুকে ভালবেসে ফেলেছেন অভিনেতা, তা উপলব্ধি করেছেন অনেক পরে। বন্ধুত্বের মোড়কে ভালবাসার প্রথম পর্ব কেটে গেছে ঋষি-নীতুর।
ঋষি ১৯, নীতু ১৪। কৈশর থেকে যৌবনে সদ্য পা দেওয়া ঋষির চারিপাশে তখন সুন্দরী রমনীরা। ঠিক তখনই ধুমকেতুর মতো আবির্ভাব হয়েছিল নীতি। ঝগড়া মধ্যেই প্রেমের সূত্রপাত।
'খেল খেল ম্যায়' ছবিতেই মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল ঋষি কাপুর ও নীতু সিংয়ের। তারপর থেকেই একের পর এক সিনেমায় জুটি বেধেছিলেন বলিউডের এই কাপল।
'কাভি-কাভি', 'অমর-আকবর-অ্যান্টনি', 'লাভ আজ কাল', 'রাফু চক্কর', 'বেসরম', 'দো দুনি চার', 'জিন্দা দিল', 'খেল খেল ম্যায়', 'দুসরা আদমি', 'আনজানে ম্যায়', 'ধন দৌলত' সহ একাধিক ছবিতে জুটি বেধেছিলেন এই লাভবার্ডস।
বিয়ে থেকে শত হস্ত নিজেকে দূরেই যেন সরিয়ে রাখতেন বলি অভিনেতা ঋষি কাপুর। প্রেমে মশগুল হলেও বিয়েতে সিরিয়ায় ছিলেন না ঋষি। অবশেষে বাবা রাজ কাপুরের বকার কারণে ১৯৮০ সালে ২২ জানুয়ারি নীতুর সঙ্গে গাটছড়া বাধেন ঋষি।
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই আর কোনও ছবি করেননি অভিনেত্রী নীতু সিং। যদি তা নিয়েও একাধিক বিতর্ক রয়েছে টিনসেল টাউনে। কিন্তু অভিনেত্রী নিজে একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তিনি নিজের ইচ্ছায় ছবি ছেড়েছেন এবং তিনি সংসারে বেশি সময় দিতে চান। বর্তমানে তাদের দুই সন্তান রয়েছে রণবীর কাপুর এবং ঋদ্ধিমা কাপুর।
দীর্ঘ ৪০ বছরের বিবাহিত জীবনে প্রেম, বিয়ে, বিতর্কে আজ ছেদ ঘটল। জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আজ একে অপরের থেকে আলাদা। কিন্তু মৃত্যুর শেষ লগ্নে এসেও মাথায় পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন নীতু। সুদীর্ঘ দাম্পত্যের ভাঙন ধরলেও তাদের অমর প্রেম বলি ইতিহাসে মাইলস্টোন হয়ে আজীবন রয়ে যাবে।