- Home
- Entertainment
- Bollywood
- The Superstar রাজেশ খান্না, বলিউডের প্রথম সুপারস্টারের তকমার নেপথ্যে এক বম্বের বাঙালি
The Superstar রাজেশ খান্না, বলিউডের প্রথম সুপারস্টারের তকমার নেপথ্যে এক বম্বের বাঙালি
তপন মল্লিক
বলিউডের এক সুপারস্টার আরেক সুপারস্টার সম্পর্কে একসময় বলেছিলেন, তিনি নিজে তারকা হতে পেরেছিলেন একটি ছবিতে ওই সুপারস্টারের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে। অমিতাভ বচ্চন কথাটা বলেছিলেন রাজেস খান্না সম্পর্কে, দুজনের অভিনীত ছবিটি ছিল ‘আনন্দ’। হৃষীকেষ মুখোপাধ্যায় নির্মিত এই ছবিতে সঙ্গী ছিলেন আরও এক বাঙালি, সুরকার সলিল চৌধুরী। সুপারহিট ছবি ‘আনন্দ’-এর জন্য রাজেশ খান্না নামমাত্র পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন। এ কথা জানা যায় ছবির চিত্রনাট্যকার গুলজারের কথা থেকে। তবে এ কথা ঠিক বলিউডে রাজেশ খান্নাই প্রথম সুপারস্টার। ষাটের দশকের শেষ থেকে শুরু করে পুরো সত্তর দশক ধরে বলিউডের সুপারস্টার ছিলেন কাকা। কেবল তাই নয় সেই সময় তাঁর কোনও প্রতিদ্বন্দি ছিল না। ষাট ও সত্তরের দশকের বলিউদকে তিনি একাই মাতিয়ে রেখেছিলেন। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার, প্রেম ও বিয়ে সব দিক থেকেই আলোচিত ছিলেন এই সুপারস্টার।
- FB
- TW
- Linkdin
হ্যাঁ রাজেস খান্নাই ভারতীয় সিনে দুনিয়ার প্রথম সুপারস্টার। তার আগে অনেকেই রূপালি পর্দা মাতিয়েছেন, তুমুল জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন কিন্তু রাজেশ খান্নাকে বলিউডের প্রথম সুপারস্টার বানিয়েছে বম্বের বাঙালি।
খান্না শুরু থেকে যেভাবে দর্শকের মনের ঘরে জায়গা করে নেন তা আগে কেউ পারেন নি। দিলীপ কুমার, দেবানন্দ সবাই ছিলেন স্টার কিন্তু কাকা হয়ে ছিলেন সুপারস্টার। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১- মাত্র তিন বছরে টানা ১৫ টি হিট ছবি উপহার দিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। এই রেকর্ড বলিউডে বিরল।
রাজেশ খান্না শুধু হিট ছবি নয়, পাশাপাশি জনপ্রিয় ছিলেন তাঁর নিজস্ব স্টাইল ও ফ্যাশন সচেতনার জন্য। রাজেস খান্নার পরা শার্ট ও প্যান্টের বিশেষ স্টাইল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো তখনকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। রাজেশ খান্নার পরা বিশেষ কাটের শার্টটিকে আজও ‘গুরু পাঞ্জাবি’ বা কলার বলা হয়। এ ছাড়াও বিশেষ কাটের সাফারি-কুর্তার প্রচলন করেন তিনি।
রোমান্টিক হিরো হিসেবে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। সহঅভিনেত্রীদের সঙ্গে পর্দায় রসায়ন জমিয়ে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার! ‘আরাধনা’ ছবিতে শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে রাজেশ খান্নার রোমান্টিক দৃশ্যগুলি আজও দর্শকের মনে দোলা দিয়ে যায়।
‘আনন্দ থেকে শুরু করে ‘আও মিলো সাজনা’, ‘মেরে জীবন সাথি’, ‘দুশমন’ ইত্যাদি ছবিতে রাজেশ খান্নার রোমান্টিক সংলাপগুলো সে সময় বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। রাজেশ খান্নার বলিউড জীবনে আরও একটি বিষয় বেশ আলোচিত তা হল তাঁর নারীসঙ্গ।
প্রথম জীবনে অভিনেত্রী অঞ্জু মাহেন্দ্র-র সঙ্গে তাঁর প্রেম। পরবর্তীতে ভালবেসে বিয়ে করেন ডিম্পল কাপাডিয়াকে। বিচ্ছেদের পর অভিনেত্রী টিনা মুনিমের সাথে দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্ক ছিল রাজেশের। ‘সওতান’, ‘ফিফটি-ফিফটি’ ছবিতে তাঁরা জুটি বেঁধেছিলেন। রাজেশ খান্নার সঙ্গে অনিতা আদভানির সম্পর্কও পরবর্তীতে আলোচিত হয়।
১৯৬৬ সালে ‘আখরি খত’ ছবিতে অভিনয়জীবন শুরু করেন। খুব তাড়াতাড়ি যতীন খান্না নাম পালটে হয়ে ওঠেন রাজেশ খান্না। যদিও তার আইডল ছিল স্কুল এবং কলেজে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রবি কাপুর। যিনি পরবর্তী সময়ে বলিউডে প্রতিষ্ঠা পান জিতেন্দ্র নামে। তাকে দেখেই নাকি রাজেশ খান্না অভিনয়ে এসেছিলেন।
রাজেশ খান্নার সুপারস্টার হয়ে ওঠার পিছনে ছিলেন বোম্বের বাঙালিরা। হৃষীকেশ মুখার্জির ছবি আনন্দ ছিল রাজেস খান্নার সিনেমা জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। বাঙালি ডাক্তার ভাস্কর ব্যানার্জি ওরফে অমিতাভ বচ্চনের উদ্দেশ্যে তাঁর ‘বাবু মশাই’ সম্বোধন এতটাই জনপ্রিয় হয় যে সারা দেশে বাঙালিদের সমার্থক শব্দ হিসেবে উচ্চারিত হত।
ঋতুপর্ণ ঘোষ বলেছিলেন, ধুতি পাঞ্জাবিতে রাজেশ খান্না নিজেকে বাঙালি হিসেবে বাঙালির ঐতিহ্য তুলে ধরেন সারা দেশের সামনে। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করেন শক্তি সামন্ত। রাজেশ খান্নার প্রায় সব ছবির গানেই রয়েছেন কিশোর কুমার। রাজেশের লিপে প্রায় আশিরও বেশি গান আছে কিশোরের।
রাজেশের লিপে মাত্র কয়েকটা কালজয়ী গান গেয়ে গেছেন মান্না দে-ও। রাজেসের লিপে বহু গানের সুর করেছেন শচীন কত্তা অথবা রাহুল দেব বর্মন। ‘আরাধনা’, ‘অমর প্রেম’ রাজেস খান্নার ব্লকবাস্টার ছবি আর সে ছবির নায়িকা শর্মিলা ঠাকুর।
কলকাতায় অমর প্রেম ছবির শুটিংয়ের সময় তাঁর ভক্তদের এমন ভিড় হয়যে হাওড়া ব্রিজে শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পরিচালক নকল হাওড়া ব্রিজ তৈরি করে শুটিং করেন। রাজেশ খান্নার হিট ছবিগুলির মধ্যে অন্তত দুটি ছবি প্রথমে বাংলায় দীপ জ্বেলে যাই ও গল্প হলেও সত্যি।
'অমর প্রেম' করার সময়ে 'নিশিপদ্ম' প্রায় সতেরোবার দেখার পরই রাজেশ বুঝেছিলেন উত্তম কী জিনিস! বলেছিলেন -' গ্রেটেস্ট লিভিং অ্যাক্টর অন দ্য আর্থ'। বাংলা ছবিতে রাজেশ খান্না কাজ করেননি, কিন্তু বাংলার সঙ্গে তাঁর যোগ ছিল গভীর। সত্যজিৎ রায়ের 'সোনার কেল্লা' উপন্যাসে রাজেশ খান্নার 'কাটি পতঙ্গ' ছবির উল্লেখ আছে।