- Home
- Sports
- Cricket
- বাবা দিনমজুর, মা মুরগি বিক্রেতা, জুটত না দুবেলা খাওয়া, টি নটরাজনের জীবনযুদ্ধ অনুপ্রাণিত করবে আপনাকেও
বাবা দিনমজুর, মা মুরগি বিক্রেতা, জুটত না দুবেলা খাওয়া, টি নটরাজনের জীবনযুদ্ধ অনুপ্রাণিত করবে আপনাকেও
থঙ্গরাসু নটরাজন। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারকা। প্রথমে আইপিএলে দুরন্ত সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে দুরন্ত পারফরমেন্স। তার সৌজন্যে অস্ট্রেলিয়া সফরে সীমিত ওভারের সিরিজে ভারতীয় দলে সুযোগ। জাতীয় দলের হয়ে সুযোগ পেতেই নজরকাডা় পারফরমেন্স করেছেন বাঁ-হাতি তারকা পেসার। কিন্তু অতি দরিদ্র পরিবার,গ্রামের মেঠো পথ থেকে স্বপ্নের রাজপথের সফরটা মোটেই সহদ ছিল না নটরাজনের। আজ আপনাদের জানানো টি নটরাজনের জীবন যুদ্ধের কাহিনি।
- FB
- TW
- Linkdin
তামিলনাড়ুর সালেম থেকে ৩৬ কিমি দূরে প্রত্যন্ত গ্রাম চিন্নাপ্পমপট্টি। সেই গ্রামেরই দীন দরিদ্র পরিবারে ১৯৯১ সালের ২৭ মে জন্মগ্রহণ করেন টি নাটরাজন। গ্রামের স্কুলে ভর্তি হলেও দরিদ্র পরিবারে বই-খাতা-পেনসিল টুকুও কিনতে হিমসিম খেতে হত নটরাজনের পরিবারের।
সেই গ্রামেরই ধুলোমাখা মাঠে ৫ বছর বয়সে টেনিস বলে ক্রিকেট খেলা শুরু নটরাজনের। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও, পরিবারের সেই সামর্থ ছিল না। বাবা ছিলেন দিন মজুর ও মা মুরগি বিক্রেতা। সব সময় ভাল করে দু’বেলা খাবারও জুটত না নটরাজনের।
বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেনিস বলের ক্রিকেটে দক্ষতা বাড়তে থাকে নটরাজনের। ধীরে ধীরে ডাক পেতে লাগলেন স্থানীয় টুর্নামেন্টে। কিন্তু যোগ দেবেন কী করে! না আছে ভাল জামা, না বোলিং করার উপযুক্ত জুতো। এমনই এক ম্যাচে প্রতিবেশি জয়প্রকাশের চোখে পড়েন নটরাজন। ভালো সাগে নটরাজনের ইয়র্কার দেওয়ার দক্ষতা।
তারপরই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নটরাজনের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব নেন জয়প্রকাশ। জহর চিনতে ভুল করেননি জয়প্রকাশ। বুঝতে পেরেছিলেন এই ইয়র্কার দেওয়ার দক্ষতা ঘষামাজা করলে অনেক দূর পৌছতে পারে নটরাজন। তখন থেকেই জয় প্রকাশকে নিজের গডফাদার হিসেবে মানেন নটরাজন।
তিনি প্রথম নজরে আসেন তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের চতুর্থ ডিভিশনে বিএসএনএল-এর হয়ে খেলে। গ্রামের ধুলোয় টেনিস বলে ক্রিকেট খেলতে শুরু করা নটরাজনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল তামিলনাড়ুর হয়ে খেলা। সেই স্বপ্ন পূরণ হয় ২০১৪ সালে। তিনি সুযোগ পান রঞ্জি দলে।
কিন্তু মাঝে ক্রিকেট জীবনেও অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছিল নটরাজনের। যখন বোলিং অ্যাকশনের জন্য ‘চাকার’ পরিচয় হয়েছিল নটরাজনের।বিসিসিআই-এর কাছ থেকে ‘চাকার’ তকমা পেয়ে এক বছর ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়েচিল নটরাজনকে। বহু পরিশ্রমে আবা ফিরে এসেছিলেন বাইশ গজে। সেই সময় সবসময় তার পাশে ছিলেন জয়প্রকাশ। কখনও ভেঙে পড়তে দেননি।
তারপর একসময় দুবেলা খেতে না পাওয়া নটরাজনের জন্য খুলে যায় ভারতের কোটিপতি লিগ আইপিএলের দরজা। ২০১৭ সালে তাকে ৩ কোটি টাকায় কেনে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। তারপরের বছর থেকে খেলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে। ২০২০ আইপিএলে ১৬ টি উইকেট নিয়ে প্রতিযোগিতার সেরা দশ বোলারের মধ্যে জায়গা করে নেন নটরাজন।
আইপিএলে দুরন্ত পারফরমেন্সের সৌজন্য খুলে য়ায় স্বপ্নের দরজাও। ডাক পান ভারতীয় জাতীয় দলে। অস্ট্রেলিয়ায় সীমিত ওভারের সিরিজের জন্য মোননীত করা হয় নটরাজনের নাম। আর তৃতীয় একদিনের ম্য়াচে সুযোগ পেয়েই নিজের কামাল দেখান তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রথম শিকার হন মার্নাস লেবুশাঙে। এরপর টি২০ সিরিজেও অনবদ্য বল করেন নটরাজন।
বর্তমানে আর্থিক সমস্যা মিটেছে নটরাজনের পরিবারের। তবে দায়িত্বে অবিচল তিনি। দুই বোনের বিয়ে লক্ষ্য নটরাজনের। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ভাইয়ের পড়াশোনার দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে নিজের গ্রামে খুলেছেন ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পও।
সাফল্যের সিঁড়িতে চড়েও অতীতে ভুলে যাননি নটরাজন। তাই তো আইপিএলে তার জার্সিতে নামের জায়গায় লেখা ‘জে পি নাট্টু’। অর্থাৎ জয়প্রকাশ নাট্টু। হাতের ট্যাটুতেও রয়েছে জয়প্রকাশের নাম। এমনকী ছোট বেলার খেলার জুতোগুলিকেও যত্নে রেখে দিয়েছেন নটরাজন।
মা-বাবা, নটরাজনের পাশাপাশি আরও একজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন নাটরাজন। তিনি হলেন, নটরাজনের স্ত্রী প্রতিভা। জীবনের অনেক কঠিন সময় নটরাজনের পাশে ছিলেন প্রতিভা। মানসিক শক্তিও জুগিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ফিরে পরিবারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাবেন তিনি। আগামি দিনে ভারতীয় দলের হয়ে আরও ভালো পারফর্ম করাই লক্ষ্য তার। দীন দরিদ্র , দু বেলা খেতে না পাওয়া পরিস্থিতি থেকে আজকে যে জায়গায় পৌছেছেন নটরাজন তা সকলের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।