- Home
- Sports
- Cricket
- T20 WC 2021 - ফেভারিট হয়েও কেন ব্যর্থ হল ভারত, কোথায় ভুল করল কোহলি-বাহিনী - ময়নাতদন্ত
T20 WC 2021 - ফেভারিট হয়েও কেন ব্যর্থ হল ভারত, কোথায় ভুল করল কোহলি-বাহিনী - ময়নাতদন্ত
টি২০ বিশ্বকাপ ২০২১ (T20 World Cup 2021) শুরু হওযার আগে ভারতকেই টুর্নামেন্ট জেতার ফেভারিট বলে ধরা হচ্ছিল। কিন্তু, সুপার ১২ পর্বে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই পাকিস্তান (Pakistan) এবং নিউজিল্যান্ডের (New Zealand) বিপক্ষে লজ্জাজনক হারের ফলে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) বাহিনীর টুর্নামেন্টে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। পরের দুই ম্যাচে আফগানিস্তান (Afghanistan) এবং স্কটল্যান্ডকে (Scotland) বড় ব্যবধানে হারালেও, রবিবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ড (New Zealand) জিতে যাওয়ায় সেমিফাইনালের আগেই থেমে গিয়েছে ভারতের দৌড়। কেন এত হতাশাজনক হল ভারতের পারফরম্যান্স। দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপে ভারতের ব্যর্থতার ময়না তদন্তে কী কী বিষয় উঠে এল -
| Published : Nov 07 2021, 11:04 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
অধিনায়ক বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, জসপ্রিত বুমরা এবং মহম্মদ শামি, ঋষভ পন্থ-সহ বেশিরভাগ ভারতীয় ক্রিকেটারই গত জুন মাসে ইংল্যান্ডে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচ থেকেই একের পর এক জৈব সুরক্ষা বলয়ে রয়েছেন। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্টের সিরিজ, তারপর সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আইপিএল ২০২১-এর বায়ো বাবল, তারপর ১৫ অক্টোবর থেকে টি২০ বিশ্বকাপের জৈব সুরক্ষা বলয়ে রয়েছে ভারতীয় দল। জসপ্রিত বুমরা ইতিমধ্য়েই জানিয়ছেন বায়ো-বাবলের ক্লান্তি ভারতের খারাপ প্রদর্শনের অন্যতম কারণ। তিনি বলেছেন ব্যস্ত ক্রিকেট সূচির মধ্যে বায়ো-বাবলের ক্লান্তি ক্রিকেটারদের অজান্তেই মনের মধ্যে ঢুকে যায়।
টি২০ বিশ্বকাপে হার্দিক পান্ডিয়ার নির্বাচন নিয়ে দারণ সমালোচনা হয়েছে। অলরাউন্ডার হিসাবে দলে সুযোগ পেলেও টুর্নামেন্টে পিঠের চোটের সমস্যার কারণে তিনি বল করেছেন মাত্র ২ ওভার। ব্যাট হাতেও একমাত্র স্কটল্যান্ড ম্যাচ ছাড়া বিশেষ অবদান রাখতে পারেননি। তিনি বল করতে না পারায় এবং ব্যাট হাতেও ফর্মে না থাকায় ভারতীয় দলের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। আইপিএল ২০২১-এর দ্বিতীয় পর্বে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ১ ওভারও বল না করার পর, নির্বাচকরা তাঁকে টি২০ বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দিতে চেয়েছিলেন, এমএস ধোনির বদান্যে দলে টিতে যান। তাঁকে খেলানো নিয়ে নিয়ে চারচি ম্যাচেই প্রশ্ন উঠেছে।
টি২০ বিশ্বকাপের ৫টি ম্যাচেই পাকিস্তান প্রথম একাদশ অপরিবর্তিত রেখেছে। টাইমাল মিলস চোট পাওয়ায়, অন্য সফলতম দল ইংল্যান্ড বাধ্য হয়ে একটি পরিবর্তন করেছে। আর ভারত দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ সহ মোট ৬টি খেলায় দুটি ভিন্ন ওপেনিং কম্বিনেশন খেলিয়েছে। বরুণ চক্রবর্তী দলে ঢুকেছেন, আবার বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার দলে ফেরানো হয়েছে। শার্দুল ঠাকুরকে একটি ম্যাচে সুযোগ দিয়েই আবার বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ২ ম্যাচ বসিয়ে রাখার পর ৪ বছর পর প্রথম একাদশে পেরানো হয়েছে রবি অশ্বিনকে।
টি২০ বিশ্বকাপের পরই ভারতের টি২০ দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা করে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। এখনও পর্যন্ত তিনি ৪ টি আইসিসি প্রতিযোগিতায় ভারতের নেতৃত্ব দিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০১৭, ওডিআই বিশ্বকাপ ২০১৯, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২০-২০২১ এবং চলতি টি২০ বিশ্বকাপ। একটি প্রতিযোগিতাতেও ভারত ট্রফি জিততে পারেনি। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার সময় অধিনায়ক ছিলেন এমএস ধোনি। সেটাই ভারতের শেষ আইসিসি টুর্নামেন্টে সাফল্য। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ জয়ও এসেছিল রোহিত শর্মার নেতৃত্বে। ফলে কোহলির অধিনায়কত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে। একটি আইপিএল ট্রফিও তিনি জিততে পারেননি। তার উপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর কোহলির 'আমরা যথেষ্ট সাহসী ছিলাম না' গোছের মন্তব্যে তাঁর শরীরি ভাষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কপিল দেবের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটাররা।
কোহলি টি২০ অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করার দু'দিন পরই, বএশ কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ভারতীয় ড্রেসিংরুমে বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার অধিনায়ক কোহলির মনোভাব নিয়ে বিরক্ত। বলা হয়েছিল কোহলি ক্রমশ দলের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। দলকে অনুপ্রেরিতও করতে পারছেন না, খেলোয়াড়দের সম্মানও আদায় করতে পারছেন না। বিশ্বকাপে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড ম্য়াচের পর প্রাক্তন পাকিস্তানি জোরে বোলার শোয়েব আখতার বলেছিলেন, চলতি টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের পারফরম্যান্স দেখে তাঁর মনে হচ্ছে, দলের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। দুটি শিবির বিভক্ত ভারতীয় দল এবং এক পক্ষ কোহলির বিরুদ্ধে।
টি২০ বিশ্বকাপের আগে থেকেই ভারতকে ফেবারিট বলা হচ্ছিল। তার উপর টি২০ এবং ৫০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বকাপেও ভারত কখনই পাকিস্তানের কাছে হারেনি, বারবারই সেই তথ্য তুলে ধরা হচ্ছিল। এতে করে ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা কিছুটা হলেও পাকিস্তানকে হাল্কাভাবে নিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। রহিত-রাহুলকে আফগানিস্তান বা স্কটল্যান্ড ম্যাচে যেরকম বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে দেখা গিয়েছে, ভারতের পরিকল্পনায় সেটাই ছিল। আর বাঁহাতি পাক জোরে বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি শুরুতেই কেএল রাহুল এবং রোহিত শর্মাকে আউট করে দেওয়ায়, ভারত নিজেদের ত্রমতাকে প্রশ্ন করা শুরু করেছিল বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। আর তা বজায় ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও। যে কারণে ভারতীয়রা কিউই ম্যাচে শরীরি ভাষাতেই গুটিয়ে ছিল।
অন্তত তিনজন ক্রিকেটারের নির্বাচন ভুল হয়েছে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা - হার্দিক পান্ডিয়া, ভুবনেশ্বর কুমার এবং রাহুল চাহার। হার্দিক তাঁর সেরা ফর্মের ধারেকাছেও ছিলেন না, সবাই জানতেন। টিম ম্য়ানেজমেন্ট ব্যাট হাতে তাঁর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার উপর আস্থা রেখেছিল, কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ক্যামিও ইনিংস ছাড়া কিছুই করতে পরেননি তিনি। হাতের কাছেই ভেঙ্কটেশ আইয়ার, শার্দুল ঠাকুররা ছিলেন। গতি কমে গিয়েছে, ফিটনেসও বারবার ভোগাচ্ছে ভুবনেশ্বর কুমারকে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়েই আইপিএল ২০২১-এর দ্বিতীয় লেগে তাঁর রান আটকানোর এবং উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা যে কমে গিয়েছে, তা ধরা পড়েছিল। তাও হর্ষল প্যাটেল বা আবেশ খানদের নেওয়া হয়নি। তরুণ লেগ-স্পিনার রাহুল চাহারকে নেওযা হয়েছিল যুজবেন্দ্র চাহালকে বাদ দিয়ে। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়া তাঁকে খেলানোই হয়নি। আইপিএল-এ প্রতি ম্যাচেই উইকেট নিয়েছিলেন চাহাল, মাঝের ওভারে ভয়ঙ্কর ছিলেন। প্রথম দুই ম্যাচে ভারতীয় বোলারদের ভেদ শক্তির ক্ষমতা দলকে ভুগিয়েছে। কেন চাহালকে উপেক্ষা করে রাহুল চাহারকে খেলানো হল, তা সত্য়িই রহস্য।