কে কতবারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন, এক নজরে ১২ টি ফাইনালের কাহিনি
১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আরব আমিরশাহিতে শুরু হতে চলেছে আইপিএলের ১৩ তম মরসুম। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৯ ১২ টি মরসুমে ১২টি টানটান ফাইনাল দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। এর মধ্যে সর্বাধিক ৪ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ৩ বার চ্যম্পিয়ন হয়েছে ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। ২ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতা ও হায়দরাবাদ। শেষ ২০১৯ মরসুমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ১৩ তম মরসুমে নতুন চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার অপেক্ষায় আইপিএল। ১০ নভেম্বর ঠিক হবে চলতি মরসুমে কোন দলের মাথায় উঠতে চলেছে শিরোপা। তার আগে দেখে নেওযা যাক আইপিএলের ১২টি মরসুমের চ্যাম্পিয়নদের ইতিহাস।
| Published : Aug 24 2020, 05:40 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
আইপিএল ফাইনাল ২০০৮
২০০৮ সালেই প্রথম শুরু হয়েছিল আইপিএল। টুর্নামেন্টে সকলকে চমকে দিয়ে ফাইনালে উঠেছিল শেন ওয়ার্নের রাজস্থান রয়্যালস। অপরদিকে প্রতিপক্ষ ছিল এমএস ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। মেগা টুর্নামেন্টের প্রথম মেগা ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে চেন্নাই সুপার কিংস। নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৩ রান করে সিএসকে। চেন্নাই হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন সুরেশ রায়না। রাজস্থানের হয়ে ৩ উইকেট নেন ইউসুফ পাঠান। রান তাড়া করতে নেমে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের সাক্ষী থেকেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। শেষ ওভারে গিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। রাজস্থানের হয়ে ৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ইউসুফ পাঠান। ব্যাটে বলে দুরন্ত পারফরমেন্সের জন্য ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন ইউসুফ। ম্যান অব দ্য সিরিজ হন শেন ওয়াটসন। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আইপিএল জিতে নজর কেড়েছিলেন শেন ওয়ার্ন।
আইপিএল ফাইনাল ২০০৯
২০০৯ সালে আইপিএলের ফাইনালে উঠেছিল ডেকান চার্জার্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালোর। লো স্কোরিং রুদ্ধশ্বাস ফাইননালের সাক্ষী থেকেছিল ক্রিকেকেট বিশ্ব। প্রথমে ব্যাট করে ১৪৩ রান করে ডেকান চার্জার্স। ডেকানের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৩ রান করে হার্সাল গিবস। ব্যাঙ্গালোরের হয়ে বল হাতে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন অনিল কুম্বলে। রান তাড়া করতে নেমে নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ব্যাঙ্গালোর। ১৩৭ রানে শেষ হয় আরসিবির ইনিংস। বল হাতে ডেকানের হয়ে ৩ উইকেট নেন প্রজ্ঞান ওঝা। ৬ রানে ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় আইপিএলের চ্যাম্পিয়ন হয় ডেকান চার্জার্স।ফাইনাল হারলেও ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন অনিল কুম্বলে। ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।
আইপিএল ফাইনাল ২০১০
২০১০ সালে তৃতীয় আইপিএলের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ফাইনালে মুম্বইকে ২২ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ধোনির সিএসকে। প্রথমে ব্যাট করে ১৬৮ রান করেছিল সিএসকে। সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেছিল সুরেশ রায়না। রান তাড়া করতে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রান করতে পেরেছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেছিল সচিন তেন্ডুলকর। ফাইনালে ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন সুরেশ রায়না ও প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর।
আইপিএল ফাইনাল ২০১১
২০১১ আইপিএলে ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ২০৫ রানের বিশাল স্কোর খাড়া করে ধোনির চেন্নাই। মুরলী বিজয় ৯৫ ও মাইক হাসি ৬৩ রানের ঝোডো় ইনিংস খেলেন চেন্নাইয়ের হয়ে। রান তাড়া করতে নেমে পাহাড় প্রমাণ টার্গেটের সামনে চাপে পড়ে যায় আরসিবি। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৭ রান করে ব্যাঙ্গালোর। চেন্নাইয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ৫৮ রানে ফাইনাল ম্যাচ জিতে পরপর দুবার আইপিএল জেতার নজির সৃষ্টি করে ধোনির সিএসকে। ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন মুরলি বিজয় ও ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন ক্রিস গেইল।
আইপিএল ফাইনাল ২০১২
২০১২ আইপিএলে তৃতীয়বারের জন্য আইপিএল ফাইনালে ওঠে চেন্নাই সুপার কিংস। প্রতিপক্ষ ছিল প্রথমবার আইপিএল ফাইনালে ওঠা কলকাতা নাইট রাইডার্স। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১৯০ রান করে সিএসকে। চেন্নাইয়ের হয়ে সুরেশ রায়না সর্বোচ্চ ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছিল। জবাবে রান তাড়া করতে নেমে প্রথমেই অধিনায়ক গম্ভীর আউট হয়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে যায় কেকেআর। তারপর মনবিন্দর সিং বিসলা ও জ্যাক কালিস অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেন। বিসলার ৮৯ ও কালিসের ৬৯ রানের ইনিংসের সৌজন্যে প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় শাহরুখ খানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স।
আইপিএল ফাইনাল ২০১৩
২০১৩ সালের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ফাইনালে চেন্নাইকে হারিয়ে প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। প্রথমে ব্যাট করে ১৪৮ রান করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দল। মুম্বইয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৬০ রান করেন ক্যারেবিয়ান তারকা ক্যারেন পোলার্ড। জবাবে রান তাড়া করতে নেমে ক্রমাগত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় সিএসকে। ধোনির একার কাঁধে দলকে টানলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বার করতে পারেননি। ৬৩ রানে নট আউট থাকে ধোনি। চেন্নাইয়ের ইনিংস শেষ হয় ১২ রানে । ২৩ রানে ফাইনাল জেতে মুম্বাই। ফাইনালে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন ক্যারেন পোলার্ড। সিরিজে দুরন্ত খেলে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন শেন ওয়াটসন।
আইপিএল ফাইনাল ২০১৪
২০১৪ সালের আইপিএল ফাইনালে প্রথমবার ফাইনালে ওঠে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। গোটা সিরিজে দুরন্ত খেলেছিল পঞ্জাব দল। কিন্তু ফাইনালে প্রতিপক্ষ কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হার স্বীকার করতে হয় প্রীতি জিনতার দলের। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১৯৯ রানের বিশাল ইনিংস খাড়া করে পঞ্জাব। দলের হয়ে অনবদ্য সেঞ্চুরি করেছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। রান তাড়া করতে নেমে ১৯ ওভার ৩ বলেই পর্য়োজনীয় রান তুলে নেয় কেকেআর। কলকাতার হয়ে সর্বোচ্চ ৯৪ রানের ইনিংস খেলেন মণীশ পাণ্ডে। এছাড়াও ঝোড়ো ৩৬ রান করেন ইউসুফ পাঠান। পঞ্জাবকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় কেকেআর। ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন মণীশ পাণ্ডে ও ম্যান অব দ্য সিরিজ হন পঞ্জাবের গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
আইপিএল ফাইলান ২০১৫
২০১৫ সালের আইপিএল ফাইনালে ফের মুখোমুখি হয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ২০২ রান করে মুম্বই। দলের হয়ে সিমন্স ৬৮ ও রোহিত শর্মা ৫০, পোলার্ড ও রায়ডু ঝোড়ে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। রান তাড়া করতে ২০ ওভারে ১৬১ রানে থামে চেন্নাই সুপা কিংস দল। সিএসকের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন ডেভন স্মিথ। মুম্বইয়ের সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন ম্যাকলানাঘন। ৪১ রানে ধোনির দলকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের চ্য়াম্পিয়ন হয় রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন রোহিত শর্মা ও ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন কেকেআরের আন্দ্রে রাসেল।
আইপিএল ফাইনাল ২০১৬
২০১৬ সালের আইপিএল ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্য়াঙ্গালোর ও ডেভিড ওয়ার্নারের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ২০৮ রান করে সানরাইজার্স। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৯ রনা করেন খোদ অধিায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। শেষের দিকে ৩৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন বেন কাটিং। জবাবে রান তাড়া করতে নেমে দুরন্ত শুরু করে ক্রিস গেইল ও বিরাট কোহলি। ১১৪ রানের পার্টনারশিপ করেন তারা। একটা সময় পর্যন্ত আরসিবির প্রথম ট্রফি জয় সময়ের অপেক্ষা বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু গেল ৭৬ ও কোহলি ৫৪ রানে আউট হতেই আরসিবির পুরো ব্যাটিং লাইনআপ তাসের ঘরের মতে ভেঙে পড়ে। ২০০ রানে শেষ হয় বিরাটদের ইনিংস। ৮ রানে ম্যাচ জিতে ট্রফি ঘরে তোলেন ওয়ার্নার। ফাইনালে ব্যাট হাতে ৩৯ রান ও বল হাত উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন বেন কাটিং ও সিরিজ নির্বাচিত হন বিরাট কোহলি।
আইপিএল ফাইনাল ২০১৭
২০১৭ সালে আইপিএল ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল রাইসিং পুণে সুপার জায়েন্ট ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। লো স্কোরিং ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১২৯ রান করে রোহিত শর্মার দল। মুম্বইয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন ক্রুণাল পাণ্ডিয়া। পুণের হয়ে বল হাতে দুটি করে উইকেট পান উনাদকাট, জাম্পা ও ক্রিস্টিয়ান। ছোট রান তাড়া করতে নেমেও বিপাকে পড়ে যায় স্টিভ স্মিথের পুণে। রাহানে ৪৪ ও স্মিথ ৫০ রানের ইনিংস খেললেও পুণের ইনিংস থামে ১২৮ রানে। মাত্র ১ রানে ম্যাচে জিতে তৃতীয় বারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় রোহিত শর্মার দল। ফাইনালে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন ক্রুণাল পাণ্ডিয়া ও ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন বেন স্টোকস।
আইপিএল ফাইনাল ২০১৮
২০১৮ সালের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ফাইনালে প্রথম ব্যাট করে ১৭৮ রান করে সানরাইজার্স।দলের হয়ে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ৪৭ ও ইউসুফ পাঠান ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন। রান তাড়া করতে নেমে বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন সিএসকের অজি তারকা শেন ওয়াটসন। ৫৭ বলে ১১৭ রানের ইনিংস খেলে একাই দলকে জয় এনে দেন ওয়াটো। ১৮ ওভার তিন বলেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় চেন্নাই সুপাক কিংস। এর সঙ্গে তৃতীয় বারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় সিএসকে। ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন ওয়াটসন ও ম্যান ইব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন কেকেআরের সুনীল নারিন।
আইপিএল ফাইনাল ২০১৯
২০১৯ সালের শেষ আইপিএল ফাইনালে ফের মুখোমুখি হয় চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। আরও এক রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের সাক্ষী থাকে ক্রিকেট বিশ্ব। সিএসকে-কে ১ রানে হারিয়ে চতুর্থবারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় রোহিত শর্মার দল। ফাইবালে প্রথমে ব্যাট করে ১৪৯ রান করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান করে ক্যারেন পোলার্ড। রান তাড়া শুরুটা ভালই করেছিল সিএসকের ডুপ্লেসি ও ওয়াটসন। কিন্তু ব্যাক্তিগত ২৬ রানে ডুপ্লেসি আউট হওয়ার পর থেকেই তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে সিএসকের ইনিংস। একধার থেকে একা লড়াই করে যায় ওয়াটস। ৮০ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে অজি তারকা। কিন্তু ওয়াটসন রান আউট হতেই জয়ের আশা শেষ হয় সিএসকের। শেষে ১৪৮ রানে থামে ধোনির দলের ইনিংস। ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন বুমরা ও ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন আন্দ্রে রাসেল।