আইএসএলে কোন কোন ফুটবলরারা হতে পারেন লাল-হলুদের তুরুপের তাস, দেখে নিন এক নজরে
- FB
- TW
- Linkdin
অ্যান্থনী পিলকিংটন-
দীর্ঘদিন ধরে ইংল্যান্ডে ফুটবল খেলা ৩২ বছর বয়সী উইঙ্গার আসন্ন মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে চলেছে। নিজের দীর্ঘ ফুটবল জীবনে পিলকিংটন খেলেছেন ব্ল্যাকবোর্ন রোভার্স, কার্ডিফ সিটি, নরউইচ সিটির মতো বড় ক্লাবগুলিতে। ইতিমধ্যেই কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে ২ গোল করে নিজের জাত চিনিয়েছেন। দলের ভালো পারফরম্যান্সের জন্য তার ফর্মে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
জেজে লালপেখলুয়া-
চোটের কারণে দীর্ঘদিন ফুটবল থেকে দূরে ছিলেন। আগের দল চেন্নাইয়ান এফসি-তে নিয়মিত প্রথম একাদশে জায়গা নিশ্চিত না থাকায় এসেছেন ইস্টবেঙ্গলে। নিজেকে প্রমাণ করে আবার ভারতীয় ফুটবলের মুলস্রোতে ফিরে আসা ও আরও একবার জাতীয় দলে জায়গা পাকা করাই এখন পাখির চোখ জেজের। সাফল্যের খিদে বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি তার। লাল হলুদ জার্সিতে নিজেকে উজাড় করে দিতে মরিয়া মিজো স্নাইপার।
জ্যাক ম্যাঘোমা-
টট্যেনহ্যাম হটস্পার্স অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া কঙ্গোর মিডফিল্ডার জ্যাক ম্যাঘোমা আসন্ন মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা হতে চলেছেন। ইনিও দীর্ঘদিন খেলেছেন ইংলিশ ফুটবলে। বার্মিংহাম সিটির হয়ে ১৬৮ টি ম্যাচ খেলে ২০ টি গোল করেছেন ৩৩ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। এবার লাল হলুদ জার্সি গায়ে মাঝমাঠের দায়িত্ব সামলাতে প্রস্তুত তিনি।
ম্যাটি স্টেইনম্যান-
ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে প্রথম জার্মান ফুটবলার স্টেইনম্যান। হামবুর্গের মতো বুন্দেশলিগার অতি পরিচিত ক্লাবের অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন তিনি। খেলেছেন হামবুর্গের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে। খেলেছেন বুন্দেশলিগার আর এক পরিচিত ক্লাব মেইনজ-এ। তারপর গতবছর অস্ট্রেলিয়া এ লিগের ওয়েলিংটন ফনিক্সে খেলে সেখানেই তিনি নজরে পড়েন রবি ফাওলারের। ইস্টবেঙ্গলে কোচ হয়ে আসার পর তার সুপারিশেই ২৫ বছর বয়সী তরুণ জার্মান মিডিওকে নিয়ে আসে ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজমেন্ট। মাঝমাঠ থেকে খুব সুন্দরভাবে দুই উইংয়ে খেলা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম ম্যাটি। এখন দেখার এটাই যে, ফাওলার কিভাবে তাকে ব্যবহার করেন।
সামাদ আলি মল্লিক-
গত দুই মরশুম ধরে ইস্টবেঙ্গলের রাইট ব্যাক পজিশনে নিজের জাত চিনিয়েছেন। গত বছর বেশ কিছু ম্যাচে পরিবর্ত হিসাবে নেমে ডান প্রান্ত থেকে মাপা ক্রস করে স্ট্রাইকারদের গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলন। চুল্লোভার চোট থাকায় তিনি যে এই মরশুমে রাইট ব্যাক পজিশনে তার প্রথম একাদশে জায়গা প্রায় নিশ্চিত। নিন্দুকেরা বলে থাকেন আক্রমণে ওঠার সময় তিনি যতটা ভয়ংকর ডিফেন্ড করার অতটা নিখুঁত নন তিনি। তবে ফাওলারের তত্ত্বাবধানে নিজেকে শানিয়ে নিয়ে তিনি যে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করতে মরিয়া থাকবেন তা বলাই বাহুল্য।
রফিক আলি সর্দার-
অভিজ্ঞতা তুলনামূলকভাবে কম হলেও দক্ষতার কোনও অভাব নেই। কানাঘুষো শোনা গিয়েছে এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল শিবিরের সবথেকে অভিজ্ঞ গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদারের ফিটনেস দেখে সন্তুষ্ট নন রবি ফাওলার। আর অনুশীলনে রফিককে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মাত্র ২২ বছর বয়সেই জাতীয় শিবিরের একবার ডাক পেয়েছেন তরুণ গোলকিপার। শেষপর্যন্ত দেবজিৎ-এর ফিটনেস ইস্যুতে যদি খুশি না হলে ফাওলার, তাহলে সুযোগ চলে আসতে পারে রফিক আলির সামনে। এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল শিবিরের সবচেয়ে তরুণ ও দীর্ঘকায় গোলকিপার তিনি। ফলে চলতি মরশুমে যদি তিনি ফাওলারের এক্স ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেন, তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
ড্যানি ফক্স-
চলতি মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সের অন্যতম ভরসা হতে চলেছেন এই ব্রিটিশ ডিফেন্ডার। ৩৪ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার এভার্টনের অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন এবং খেলেছেন সেল্টিক, বার্নলে, সাউদাম্পটনের মতো বিখ্যাত ক্লাবগুলিতে। তবে কেরিয়ারের বেশিরভাগ সময়টাই তিনি কাটিয়েছেন একসময় ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা ক্লাব নটিংহ্যাম ফরেস্টে। ওই ক্লাবে ৫ বছরে মোট ১১৫ টি ম্যাচ খেলছিলেন। সেন্টার ব্যাক পজিশনে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সমর্থকদের মধ্যে তাকে খুব জনপ্রিয় করে তুলেছিল। এবার ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সকে সামলে লাল হলুদ সমর্থকদের নয়নের মনি হয়ে উঠতে বদ্ধপরিকর তিনি।
স্কট নেভিল-
ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরে এ বার আইএসএলে খেলবেন এ লিগে খেলা ডিফেন্ডার স্কট নেভিল। ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে কোচ রবি ফাওলার ব্রিসবেন রোরকে কোচিং করিয়েছেন। সেখানেই ফাওলারের কোচিংয়ে খেলেছেন নেভিল। ২০১৯-২০ মরসুমে নেভিল ব্রিসবেন রোরের হয়ে প্রায় সবক'টি ম্যাচেই খেলেছেন। ডিফেন্সকে জমাট রেখেছিলেন তিনি। নেভিল ১২ মরসুম খেলছেন এ লিগে। দুশোর বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে নেভিলের। ডিফেন্সের পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে সেট পিস থেকে গোল করার ক্ষমতাও রয়েছে তার। রবি ফাওলারের সিস্টেমে অভ্যস্ত তিনি। তাই বলাই যায় তিনি প্রথম একাদশের সবথেকে নিয়মিত খেলোয়াড় হতে চলেছেন।
ইয়ামনূম গোপী সিং-
এটিকের যুব দল থেকে এই তরুণকে নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এটিকের রিজার্ভ দলের হয়ে ২ বছরে মোট ১৮ টি ম্যাচ খেলে ৬ টি গোল করেছেন তিনি। সম্প্রতি আই লিগ কোয়ালিফায়ারে ভবানিপুরের হয়েও দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছেন তিনি। ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তুতি ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে একটি গোলও করেছেন তিনি। প্রথম একাদশে নিয়মিত না হলেও পরিবর্ত হিসাবে নেমে অনেক ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন তিনি।
রবি ফাওলার-
শুধু প্লেয়ার নয় কোচ হিসেবে রবি ফাওলারও হয়ে উঠতে পারেন লাল হলুদের নয়নের মণি। কোচ হিসেবে ইনাকে খুব অভিজ্ঞ বলা যায় না। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেও তার পরিসংখ্যান কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তাছাড়া ভারতে পা দেওয়ার পর থেকে টুকটাক সামান্য যে কয়েকটি সাক্ষাৎকার তিনি দিয়েছেন, তা থেকে এইটুকু ইস্টবেঙ্গল ভক্তরা বুঝতেই পেরেছেন যে, আর যাই হোক নিজের কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে তার নিজের সুস্পষ্ট ধারণা আছে। আর একবার যদি ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা তার স্ট্র্যাটেজির সাথে মানিয়ে নিতে পারেন, তাহলে কে বলতে পারে আইএসএলে নিজেদের প্রথম বছরেই অভাবনীয় সাফল্য পাবে না লাল হলুদ শিবির।