- Home
- Lifestyle
- Health
- ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হলে অনুসরণ করুন এই ১৫টি বিষয় যা আপনাকে মানসিক শক্তি জোগাবে
ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হলে অনুসরণ করুন এই ১৫টি বিষয় যা আপনাকে মানসিক শক্তি জোগাবে
- FB
- TW
- Linkdin
যৌন নির্যাতন সবসময়ে যে কোনও কারও কাছেই একটা মানসিক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে। এটা এমন একটা দুঃসহ যন্ত্রণা যা এক বা ঘটনার সঙ্গে জড়িত একাধিক মানুষকে মানসিক যন্ত্রণায় নিংরে শেষ করে দিতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ারা আতঙ্কে হতবুদ্ধি হয়ে যান। কেউ কেউ ঠিক করে ঠাহরও করতে পারেন না যে তিনি কী করবেন। এমনকী অনেকে লজ্জায় লোকসমাজে মেলামেশা কমিয়ে দেন।
২০১৯ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর একটি প্রকাশিত তথ্য বলছে ভারতবর্ষ দিনে ৮৮টি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়। এগুলো তো গেল নথিবদ্ধ তথ্য। এমনকী এনসিআরবি-র মতে এই ধরনের যে অপরাধ দিনের পর দিন নথিবদ্ধ হচ্ছে না, তার সংখ্যাটা কল্পনা করতে পরিস্থিতি কী হতে পারে তা সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দেবে।
যৌন নির্যাতন স্বাভাবিকভাবেই একজনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টিকে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ারা চট করে কাউকে বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। তারা একটুতেই সন্দেহমনের হয়ে ওঠেন। কারণ তাঁরা সবসময়েই তাঁদের সঙ্গে হওয়া দুঃসহ যন্ত্রণাকে খেয়াল করে যান।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে মহিলা সবচেয়ে বেশি যৌন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাঁদেরই প্রিয়জনদের কাছ থেকে অথবা পরিবারেরই কোনও সদস্য দ্বারা। স্বামী, দাদা অথবা বাড়ির কোনও প্রবীণ পুরুষ সদস্যের বিরুদ্ধেও বহু সময় যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন বহু মহিলা।
জেনে রাখবেন কেউ যখন যৌন নির্যাতনের শিকার হন তখন তিনি মানসিকভাবে এক্কেবারেই ভেঙে পড়েন। এই সময় মানসিকভাবে একজন প্রচণ্ডরকমের হতাশ এবং উত্তেজিত থাকেন। যদি কেউ এমন অমানবিক যন্ত্রণার শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে নিজেকে সবার আগে শান্ত করতে হবে। বোঝাতে হবে যেটা ঘটে গিয়েছে সেটা যতই দুঃসহ হোক না কেন তা যে কাউকে মানসিকভাবে শেষ করে দিতে পারে। আতঙ্ক কাটিয়ে যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার চেষ্টা চালাতে হবে।
কোনওভাবে যৌন-নির্যাতনের শিকার হলে প্রথমে নিজেকে শান্ত করাটা জরুরি, তেমনি এই বিষয়গুলিতেও নজর দিতে হবে। যেমন- যদি যৌন-নির্যাতনকারীরা সামনে থাকে তাদের সামনে এমন আচরণ না করা যাতে তারা কোনওভাবে প্রাণনাশের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা নিজেকে শান্ত রেখে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা চিন্তা করা। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে- যা ঘটেছে বা ঘটছে সেটা আপনার জন্য ঘটছে না। আপনি একটা ঘটনার শিকার। এখান থেকে নিজেকে নিরাপদে বের করে আনাটা সবচেয়ে বড় বিষয়। কারণ, আপনি যেখানে রয়েছেন সেটা একটা প্রতিকূল পরিস্থিতি। সেখানে হয়তো কেউ নেই যিনি আপনাকে তৎক্ষণাত সাহায্য করতে পারে। তাই আগে নিজেকে সন্তর্পণে ডেন্জার জোন থেকে বাইরে আনতে হবে।
যৌন নির্যাতনের শিকার হলে নিজেরে নিরাপত্তাকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই সামান্য সুযোগ পেলে নিজেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন। যদি নিজের বাড়িতে যৌন নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে চেষ্টা করুন এমন একটি স্থানে আশ্রয় নেওয়ায় যেখানে নির্যাতনকারী চট করে পৌঁছতে পারবে না। অথবা, নিজেকে এমন একটা ঘরে লক করে দিন, যেখানে ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। যাতে পরে আপনি ফোনে সাহায্য চাইতে পারেন। অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। যদি রাস্তায় এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে লোকালয়ে ভিড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করুন। রাস্তা-ঘাটে মানুষ .কম থাকলে পার্শ্ববর্তী কোনও বাড়িতে ঢুকে গিয়ে আশ্রয় চান। যদি কোনও বন্ধুর বাড়ি কাছে থাকে, যে আপনাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে বলে মনে করেন তার কাছে চলে যান। অথবা সামনে কোনও হাসপাতাল বা পুলিশ স্টেশন থাকলে সটানে সেখানে চলে যান। লজ্জা বা আতঙ্কে কোনওভাবেই নিজেকে হতাশ করে ফেলবেন না। জানবেন আপনি এক অপরাধের শিকার। আর সেই অপরাধ যে কোনও মানুষের সঙ্গে যে কোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে।
নিজেকে একটু নিরাপদ স্থানে এনে ফেলতে পারলে এবার আপনার কাজ হেল্পলাইনে সাহায্য চাওয়া। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সদা সর্বদা রয়েছেন মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া নির্যাতনকে বন্ধ করতে এবং ভিকট্রিম-কে উদ্ধার করতে। তাই নিজের কাছে সবসময়ে হেল্পলাইনের নম্বরগুলো রাখুন। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ মহিলাদের জন্য ১০৯১ নম্বর রেখেছে। এখানে সাহায্য চাইতে পারেন। এছাড়াও ১০০ ডায়াল করে সাহায্য চাইতে পারেন। এছাড়াও ১০৯০ বলে একটি নম্বর রয়েছে যেখানে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে সব জানাতে পারেন। কলকাতা পুলিশেরও ডেডেকেটেড হেল্পলাইন নম্বর ১০০। কলকাতা পুলিশের এলাকায় থাকলে আপনি এই নম্বরে সাহায্য চাইতে পারেন। কলকাতা পুলিশের আরও একটি হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে, যেখানে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের জন্য সাহায্য চাওয়া যায়। সেখানেও ফোন করা যেতে পারে। নম্বরটি হল ৯৮৩০০৭৯৯৯৯।
কোনওভাবেই এমনকিছু করবেন না যাতে আপনার শরীরের সঙ্গে লেগে থাকা কোনও প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়। অনেকেই এই সময় আতঙ্কে ও মানসিক হতাশায় হাত-পা ঝাড়তে শুরু করেন। সে সব কিছু করবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত সরকারিভাবে আপনার শরীর থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং আইন রক্ষকরা আপনার অভিযোগ নথিভুক্ত করছে। ঘটনার পর আপনার শরীর যেভাবে রয়েছে ঠিক সেভাবেই রাখার চেষ্টা করুন। এটা সফলভাবে করতে পারলে ভবিষ্যতে আপনার আইনি লড়াই-এ বা ঘটনার প্রমাণে অনেকটাই সাহায্য হবে। অনেকেই আবার মানসিক হতাশায় দাঁত মাজতে থাকে অথবা মাথার চুলে সমানে হাত দিয়ে নাড়তে থাকে। এগুলো না করাই ভাল। এমনকী কেউ কিছু খেতে দিলেও তা না খাওয়ারই চেষ্টা করবেন। এইসব পরিস্থিতিতে তৎক্ষণাত কিছু পান করা বা ধূমপান করা অথবা সঙ্গে সঙ্গে কোনও কাটা-ছেঁড়ায় ওষুধ লাগানোর চেষ্টা প্রমাণ নষ্ট করে দিতে পারে। বরং চেষ্টা করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব আপনার শরীরের সঙ্গে লেগে থাকা যাবতীয় প্রমাণ আইনগতভাবে পরীক্ষিত করার জন্য চাপ দেওয়া এবং পুলিশের সামনেই মেডিক্যাল এক্সামিনেশন করিয়ে রিপোর্ট তৈরি করানো। জামা-কাপড়ের ফরেনসিক পরীক্ষা যাতে করানো হয় তার জন্য তদ্বির করা।
যদি কোনওভাবে পুলিশের কাছে যাওয়ার আগে হাসপাতালে পৌঁছন তাহলে চিকিৎসকের সামনে পুরো ঘটনা খুলে বলুন। তাঁর কাছে আইনগত দিক বজায় রেখে যাবতীয় মেডিক্যাল রিপোর্ট তৈরির জন্য তদ্বির করুন। হাসপাতাল থেকে যাতে পুলিশকে খবর দেওয়া হয় তার জন্য কথা বলুন। চিকিৎসকের নাম এবং তাঁর সঙ্গে থাকা বাকি স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিচয় জেনে রাখুন। প্রয়োজনে হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়ের কোনও আধিকারিককে সেখানে উপস্থিতি থাকার জন্য তদ্বির করুন।
যৌন নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশকে জানাতে চাইলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। কারণ, এই ধরনের ঘটনার পর যত দ্রুত সম্ভব আইন রক্ষকদের সঙ্গে কথা বলাটা জরুরি এবং পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করতে পারে। এমনকী বহুক্ষেত্রে দেখাও যায় এই ধরনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারিতে পুলিশ দ্রুত সাফল্য পেয়েছে যেখানে অতি দ্রুত তাদের সামনে বিষয়টি নথিবদ্ধ হয়েছে। দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে পুলিশ ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনায় ব্যবহৃত বাসটিকে সনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছিল এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অপরাধের মূল মাস্টারমাইন্ড মুকেশ-সহ ৩ জনকে পুলিশ ধরে ফেলে। আর এদেরকে জেরা করেই বাকি অপরাধীদেরও ২ দিনের মধ্যে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছিল। সুতরাং পুলিশকে অপরাধের তথ্য দিতে যত দেরি হয় ততই অপরাধীরা গা-ঢাকা দেওয়ার জন্য সময় পেয়ে যায়।
এই ধরনের ঘটনার শিকার হলে স্বাভাবিকভাবেই একজন ডিপ্রেশন অথবা আত্মঘাতী হওয়ার চিন্তা অথবা ঘটনাকে বারবার ফ্ল্যাশব্যাকের মতো খেয়াল করে যাওয়া অথবা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগতে পারেন। তাই এই ধরনের প্রবণতাকে নিজেকে রক্ষা করটা জরুরি। তাই সব সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কাউন্সেলারের নম্বর হাতের কাছে রাখুন। প্রয়োজনে সরকারি বিভিন্ন হেল্পলাইনের নম্বরে কথা বলুন। আত্মঘাতী হওয়ার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকতে সুসাউডাল টেন্ডেন্সি প্রিভেনশন নম্বরে ফোন করে সাহায্য নিন। প্রয়োজনে যাকে বিশ্বাস করেন তার সঙ্গে কিছুদিন নিজে বসবাস করুন।
এর জন্য দরকার কঠোর মানসিকতা। যা ঘটেছে তা একটি ঘটনা এবং অতীত বলে মেনে নিন। দেখবেন কষ্টটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাবেন। সব সময় মনে করবেন আপনার থেকেও আরও অনেকে অনেক বেশি কষ্টে রয়েছেন। তাঁরা যদি জীবনে লড়াই করে টিকে থাকতে পারে তাহলে আপনি পারবেন না কেন। মানুষের শরীরটা একটি নশ্বর দেহমাত্র। এর সঙ্গে অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু তা বলে নিজের ভালো থাকার রসদটা হারিয়ে যেতে পারে না। এভাবেই নিজেকে ভাবান এবং অনুপ্রেরণা জোগান। আমরা প্রতিনিয়ত চলতে ফিরতে কতটা আঘাত শরীরে পাই। তাহলে সেই আঘাতগুলোকে যদি আমরা আমল না দিয়ে স্বাভাবিক থাকতে পারি তাহলে এই আঘাতকে কেন আমল দিতে হবে- এটা একটা জীবনের অঙ্গ। এটা যে কোনও মানুষের সঙ্গেই হতে পারে। এই ভাবে নিজেকে মানসিক শক্তি জোগান। রাস্তায় চলতে গেলে আমরা অনেকেই অনেক সময় নর্দমায় পড়ে যাই। কিন্তু তা বলে তো আমরা নর্দমার মধ্যেই দাঁড়িয়ে পরি না। নর্দমা থেকে নিজেকে টেনে তুলে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে ফের আনন্দ-উন্মদনায় অংশ নেই। আর নর্দমায় একবার পরে গিয়েছি বলে রাস্তা দিয়ে চলাটাও বন্ধ করে দেই না। যে কোনও আঘাত মানুষকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে। তাই নিজেকে শক্তিশালী করুন। আরও বেশি করে লড়াই-এর জন্য প্রস্তুত করুন এবং স্বাভাবিক ছন্দে জীবনকে অতিবাহিত করুন।
যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া অনেকেই থেরাপিকে ভরসা করেন। আপনিও করতে পারেন। ভালো দেখে একজন থেরাপিস্ট ঠিক করুন এবং তার সঙ্গে কথা বলুন। তাঁর নম্বর নিজের কাছে রাখুন।
আমরা অনুধাবন করতে পারি যে যারা যৌন নির্যাতনের শিকার হন তারা মানসিকভাবে কতটা অসহায় হয়ে পড়েন। এমনকী বহু মানুষ দিনের পর দিন লাগাতার একই ঘটনার শিকার হচ্ছেন, এমন প্রমাণও ভুরি ভুরি। যারা এই ধরনের অপরাধের শিকার হননি তাঁদের পক্ষে এটা বোধগম্য করাটা স্বাভাবিকভাবেই কঠিন। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে একজনের দুঃখ, যন্ত্রণা বোঝার মতো মানসিকতা অন্যদের নেই। তাই এশিয়ানেট নিউজ বাংলা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়াদের উদ্দেশে একটি বার্তাই দিতে চায় যে ভরসা হারাবেন না, জীবনটা একটা প্রবাহমান স্রোতের মতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহু গ্লানি-দুঃখ-কষ্ট ধুয়েমুছে যায়। সাহায্য নিন নিজেকে জীবনযুদ্ধে টিকিয়ে রাখতে। ভেঙে পড়াটা দূর্বল মানুষের লক্ষণ। জানবেন, আপনি একজন ফাইটার বলেই এমন এক ঘৃণ্য অপরাধের শিকার হওয়ার পরও জীবনযুদ্ধে টিকে রয়েছেন।