দেশে ফিরল ঐতিহ্য, মোদীর সঙ্গে বৈঠকের আগেই ২৯টি প্রাচীন মূর্তি ফেরাল অস্ট্রেলিয়া
এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার তরফে। ২৯টি প্রাচীন মূর্তি অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরানো হয়েছে ভারতে। পুরাকীর্তিগুলি থিম অনুসারে ছয়টি ভাগে বিভক্ত রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে শিব এবং তাঁর শিষ্যরা, শক্তির উপাসনা, ভগবান বিষ্ণু এবং তাঁর রূপ, জৈন ঐতিহ্য, প্রতিকৃতি এবং আলঙ্কারিক বস্তু। এই মূর্তিগুলি কোনও নির্দিষ্ট একটি সময়ের নয়। বিভিন্ন সময়কালে এগুলি তৈরি করা হয়েছিল। এই ভাস্কর্যগুলি তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে। কোনওটি বেলেপাথর তো কোনওটি মার্বেল, ব্রোঞ্জ, পিতল, কাগজ দিয়ে তৈরি এগুলি। এমনকী এগুলি দেশের নির্দিষ্ট কোনও স্থানে তৈরি হয়নি। রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, তেলাঙ্গানা এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো বিভিন্ন রাজ্যে তৈরি করা হয়েছিল এগুলি। আসলে এই ভাস্কর্যগুলি দেশের সব রাজ্যেপই ঐতিহ্য বহন করে।
| Published : Mar 21 2022, 11:11 AM IST / Updated: Mar 21 2022, 11:33 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। ঠিক তার আগেই অস্ট্রেলিয়ার তরফে ওই পুরাকীর্তিগুলি ভারতকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সেই তালিকায় রয়েছে ২৯টি প্রাচীন মূর্তি।
প্রাচীন এই মূর্তিগুলির মধ্যে রয়েছে শিব ও ভগবান বিষ্ণুর একাধিক মূর্তি। তবে এগুলি দেশের কোনও একটি স্থানে তৈরি হয়নি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময়কালে এগুলি তৈরি করা হয়েছিল। যা আজ একেবারেই দুষ্প্রাপ্য। সমগ্র দেশের ঐতিহ্য বহন করে এই মূর্তিগুলি।
অস্ট্রেলিয়া সেই ২৯টি মূর্তি ফিরিয়ে দেওয়ার পর তা পর্যবেক্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। মূর্তিগুলির কাছে গিয়ে তার কারুকার্য খতিয়ে দেখেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে একটি বড় হল ঘরের মধ্যে ঘুরে ঘুরে তাঁকে মূর্তিগুলি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গিয়েছে।
শিব ভৈরব শিবের উগ্র মূর্তি। ট্রিকা পদ্ধতিতে ভৈরব সর্বোচ্চ বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব করে। পরব্রহ্মের সমার্থক। হিন্দুধর্মে, ভৈরবকে দণ্ডপানি বলা হয়। এই মূর্তির হাতে একটি দণ্ড রয়েছে। এই দণ্ড বর্জনকারীদের শাস্তি দিতে ব্যবহার করা হয়েছে। আর মূর্তির গায়ে শোভা পাচ্ছে একটি মুণ্ডমালা। সাধারণত শিবের এই ধরনের মূর্তি দেখতে পাওয়া যায় না।
এই ভাস্কর্য সম্ভবত লক্ষ্মী ও নারায়ণের। মূর্তির মাঝে রয়েছেন তাঁরা দু'জনে। আর তার চারপাশে রয়েছেন শিব ও ব্রহ্মা। আর নারায়ণের হাতে রয়েছে শঙ্খ। আর অন্য হাত দিয়ে লক্ষ্মীকে ধরে রয়েছেন। তাঁদের দু'জনের পরনেই রয়েছে একাধিক গয়না।
সম্বন্দর, সপ্তম শতাব্দীর জনপ্রিয় শিশু সাধক। দক্ষিণ ভারতের প্রধান তিন সাধুর মধ্যে ইনিও একজন ছিলেন। এই মূর্তির এক হাতে রয়েছে বাটি। আসলে সেই বাটিতে তাঁকে দুধ খেতে দিয়েছিলেন দেবী উমা। শিশু সম্বন্দর শিবের উপাসক ছিলেন। এই মূর্তির মধ্যে এক শিশুকে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া শিশু সাধক সম্বন্দর আরও একটি মূর্তি রয়েছে। সেখানে তাঁকে নৃত্যরত অবস্থায় দেখা গিয়েছে। তেষট্টি জন সাধু যাঁরা শিবের উপাসক ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সম্বন্দর।
সাধু চন্ডীকেশ্বরের হাতে রয়েছে একটি কুড়ুল। আর পদ্মের উপর হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। তাঁর গায়ে রয়েছে গয়না ও ধুতি কোমরে বাঁধা। এই সূক্ষ্ম আবেগ একটি নম্র ভক্তি দেখান। সাধু চন্ডীকেশ্বরের কুঠারটি তাঁর বাম হাতে ধরে রয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার তরফে শুধুমাত্র মূর্তিই ফেরানো হয়নি, ফেরানো হয়েছে একাধিক ছবিও। তার মধ্যে রয়েছে শিব ও পার্বতীর ছবি। জলরং দিয়ে ছবিটি আঁকা হয়েছে। হিমাচল প্রদেশের কাংরায় সেই ছবিটি তৈরি করা হয়। এছাড়া পাঠানো হয়েছে আরও একটি ছবি। যা তৈরি করা হয়েছিল রাজস্থানের জয়পুরে। বিভিন্ন রং ব্যবহার করে সেই ছবি তৈরি করা হয়েছে।
দুর্গার আরও এক নাম হল মহিষাসুরমর্দিনী। আর এই মূর্তিতে রাক্ষসের চুল ধরে থাকতে দেখা গিয়েছে দেবী দুর্গাকে। দুর্গার রূপও বেশ ভয়ঙ্কর। জিভ বের করে রেখেছেন তিনি। একেবারে আক্রমনাত্মক অভিব্যক্তি। তাঁকে দেখানো হয়েছে চার অস্ত্র হাতে। তলোয়ার, ঢাল ও ত্রিশূল হাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।