অপেক্ষ এবার শেষের পথে, দেশে শুরু করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল
- FB
- TW
- Linkdin
পরিকল্পনা মাফিক সব এগোলে বুধ বা বৃহস্পতিবার থেকেই সম্ভবত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনা প্রতিষেধক ‘কোভিশিল্ড’-এর তৃতীয় তথা শেষ দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হতে চলেছে ভারতে।
গত মাসেই এদেশে মানবদেহে ‘কোভিশিল্ড’ প্রতিষেধকটি পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছিল পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট। সূত্রের মতে, চলতি সপ্তাহেই এই সংস্থা মানবদেহে পরীক্ষার শেষ তথা তৃতীয় ধাপটি শুরু করতে চলেছে।
প্রায় দু’মাস পরীক্ষার শেষে ফলাফল ইতিবাচক হলে এই ভ্যাকসিন দেশবাসীর উপর প্রয়োগের ছাড়পত্র দেবে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে আশা করা যাচ্ছে, এ বছরের শেষে বা নতুন বছরের শুরুতে দেশীয় বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে এই প্রতিষেধকের।
অক্সফোর্ড করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ভারতের ২০টি কেন্দ্রকে। তারমধ্যে মহারাষ্ট্রের মুম্বই, গুজরাতের আহমেদাবাদ রয়েছে। প্রায় ১৬০০ স্বেচ্ছাসেবীর উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। ৫টি রিজিয়নে ভাগ করে ২০টি কেন্দ্রে হবে ট্রায়াল।
করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য আইসিএমআরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আইসিএমআরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে হবে এই করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল। ১১-১২টি হাসপাতালে ট্রায়াল রান দেওয়া হবে। তার অনুমতি দিয়েছে আইসিএমআর।
ভারতে করোনার প্রতিষেধক গবেষণার প্রশ্নে এই মুহূর্তে তিনটি ভ্যাকসিন মানব শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’ ও জাইডাস ক্যাডিলার ‘জাইকোভ-ডি’ টিকা মানবদেহে প্রয়োগের প্রথম ধাপ পেরিয়েছে।
সিরাম সংস্থার সঙ্গে অক্সফোর্ডের টিকা ‘কোভিশিল্ড’-এর উৎপাদন সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী, মোট উৎপাদনের অর্ধেক ভারতে ব্যবহার করতে চায় পুণের ওই সংস্থা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে অক্সফোর্ডের ওই টিকাটির প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ইতিবাচক ফল মিলেছে তাতে। কিন্তু নিয়মানুযায়ী কোনও বিদেশি সংস্থার টিকা দেশীয় বাজারে ছাড়তে হলে তৃতীয় ধাপে, দেশের জনগণের উপরে তা পরীক্ষা করে দেখার নিয়ম রয়েছে। সে কারণেই সিরাম ভারতে ‘কোভিশিল্ড’ টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকদের দু’দফায় ওই টিকা দেওয়া হবে। এ জন্য চোদ্দো দিন তাঁদের অন্তরালে রাখা হবে। এবং পর্যবেক্ষণে রাখা হবে প্রায় দু’মাস। তার পর ওই পরীক্ষার ফল ও বিশ্বের অন্য প্রান্তে হওয়া পরীক্ষার ফল খতিয়ে দেখে তবেই এই টিকা বাজারে ছাড়ার প্রশ্নে উপযুক্ত কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অক্সফোর্ড।
সূত্রের খবর, সব যদি আশানুরূপ ভাবে এগোয়, সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ভারতের বাজারে অক্সফোর্ডের টিকা ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টিকা উৎপাদন সংস্থা সিরামের। অক্সফোর্ডের টিকাটি শেষ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেলে প্রতি মাসে অন্তত ১০ কোটি টিকা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
এদিকে ডিসেম্বরেই ভারতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আনার দাবি করেছে সাইনো ফার্মা নামে এক চিনা ওষুধ কোম্পানি। কয়েকদিন আগেই চিন সরকার করোনা টিকার অনুমোদন দিয়েছে। তার পেটেন্ট পেয়েছে এই সাইনো ফার্মা। তারাই তৈরি করছে এই ভ্যাকসিন।
চিনে এক একটি করোনা টিকার জন্য ১০০০ ইয়ান খরচ হচ্ছে। ভারতে সেই টিকার জন্য খরচ করতে হবে ১০,০০০ টাকা। অর্থাৎ এক একটি করোনা টিকার জন্য ১০,০০০ টাকা খরচ করতে হবে। ২টি টিকা নিলে ১০০শতাংশ সুরক্ষিত থাকবেন এক জন ব্যক্তি। অর্থাৎ চিনা টিকায় নিজেকে সুরক্ষিত করতে হলে এক এক জনকে ২০,০০০ টাকা খরচ করতে হবে।
এদিকে নোভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে রাশিয়ার ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি উৎপাদনের প্রথম ব্যাচ তৈরি হতেই মস্কোয় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস রাশিয়ার মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
রাশিয়ার শিল্পমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরোভ একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রতি মাসে কয়েক হাজার হাজার ডোজ তৈরি হবে এই ভ্যাকসিন। ২০২১ এর মধ্যে তা কয়েক লক্ষে পৌঁছে যাবে। ব্রাজিল, ভারত এবং আরও অনেক দেশ এই ভ্যাকসিন নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে।”