ফের বেজিংকে ঝটকা দিল দিল্লি, এবার চিন থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করল ভারত
লাদাখে চিনের সাথে সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় সংস্থাগুলি এবার বেজিংয়ের বিরুদ্ধে আরেকটি সিদ্ধান্ত নিল। জানা গিয়েছে, ভারতীয় সরকারি রিফাইনারি সংস্থাগুলি এখন থেকে চিনা সংস্থাগুলির থেকে আর অপরিশোধিত তেল কিনবে না।
- FB
- TW
- Linkdin
লাদাখ উত্তেজনা মাঝেই ভারত সরকার প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আমদানি সংক্রান্ত নিয়ম কঠোর করেছিল। ২৩ জুলাই মোদী সরকার এই বিষয়ে নতুন বিধি ঘোষণা করে।
নতুন আদেশ জারির পর থেকে সরকারি রিফাইনারি সংস্থাগুলি তাদের আমদানি টেন্ডারে বদল এনেছে। সূত্র মারফত খবর, গত সপ্তাহে ভারতের সরকারি রিফাইনারি চিনা বাণিজ্য সংস্থা থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির টেন্ডার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তেল আমদানির জন্য চিনের কোনো তেল ট্যাংকারও ব্যবহার করছে না নয়াদিল্লি। যদিও ভারত সরকারের ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পস, ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পস, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্প, ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি এবং পেট্রোকেমিক্যাল এখনও কোনও বিবৃতি জারি করেনি।
নতুন নিয়মে প্রতিবেশী দেশগুলির সংস্থাগুলিকে ভারতীয় টেন্ডরে অংশ নিতে বাণিজ্য বিভাগের রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। চিন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপাল এবং ভুটানের সাথে সীমান্ত ভাগ করে ভারত, কিন্তু সরকারের জারি করা বিবৃতিতে আলাদা আলাদা করে কোনও দেশের নাম নেওয়া হয়নি। তবে এটিকে পরিষ্কারভাবে চিনা বিনিয়োগকে লাগামের একটি পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে।
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম উপভোক্তা দেশ। অশোধিত তেলের চাহিদার ৮৪ শতাংশই আমদানি করতে হয়। যদিও চীন ভারতে প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত তেল রফতানি করে না। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন যে এই পদক্ষেপের খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
প্রায় তিন মাস ধরে ভারত-চিনের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঘাঁটি গেড়েছে চিন। বার বার তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও এই বিষয়ে এখনও কোনো সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
সীমান্ত নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ভারত ও চিনের মধ্যে বেশ কয়েক দফা সামরিক আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে, কূটনৈতিক পর্যায়েও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে আলোচনায় এখনও কোনও সমাধান পাওয়া যায়নি। লালফৌ এখনও প্যাংগং এলাকায় রয়েছে এবং ফিঙ্গার-৫ থেকে পিছিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। ভারতও তার অবস্থান পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে যে এই অবস্থায় কোনওরকম পরিবর্তন গৃহীত হবে না।
সম্প্রতি দেশের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ১৯৬২ সালের পর থেকে লাদাখের পরিস্থিতি সবচেয়ে গুরুতর বলে বর্ণনা করেছেন। জয়শঙ্কর বলেন, “এটি অবশ্যই ১৯৬২ সালের পরে সবচেয়ে গুরুতর পরিস্থিতি। গত ৪৫ বছরে প্রথমবার আমাদের সেনারা সীমান্তে মারা গেছে। এলএসি-র উভয়পক্ষেই প্রচুর সেনা মোতায়েন রয়েছে, যা নজিরবিহীন।”
ভারত ও চিনের মধ্যে দ্বিপক্ষিক সম্পর্কের টানাপড়েন ইতিমধ্যে দুই দেশের বাণিজ্যের ওপর পড়ছে। ইতিমধ্যে দিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন কমেছে।
ইতিমধ্যে ভারত সরকার চিন থেকে বিদ্যুৎ সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রেও নতুন কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। চিন থেকে আসা সব বিদ্যুৎ সরঞ্জাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নয়া দিল্লি জানিয়েছে।
বেজিংয়ের রাজনৈতিক ও সামরিক আচরণের কারণে চিনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায় ভারত। এজন্য ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া একটি ত্রিপক্ষীয় সাপ্লাই চেইন রেসিলিয়েন্স ইনিশিয়েটিভ (এসসিআরআই) চালু করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে।