ভ্যাকসিনের দৌঁড়ে আরও এগোল ভারত, দেশে শুরু হয়ে গেল 'কোভ্যাকসিন'-এর হিউম্যান ট্রায়াল
মারণ ভাইরাস করোনার থাবা থেকে বাঁচতে এখন বিজ্ঞানীদের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্বের মানুষ । পৃথিবীর তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরাও দিনরাত এক করে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে থেকে ইতিউতি আসতে শুরু করেছে আশার খবরও। রাশিয়া দাবি করছে অগস্টেই করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে আসছে তারা। যদিও তা নিয়ে বিতর্কও বেঁধেছে। দৌড়ে আছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিনও। আর এই ভ্যাকসিনের দৌঁড়ে কিন্তু পিছিয়ে নেই ভারতও। এদেশের বিজ্ঞানীরাও রাতদিন এক করে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজে মন দিয়েছেন। আগেই সেই ভ্যাকসিনকে ঘিরে দেখা গিয়েছিল আশার আলো। এবার তা আরও সারা ফেলে দিল। কারণ শুরু হয়ে গেল একেবারে দেশীয় ভ্যাকসিন 'কোভ্যাকসিন'-এর ট্রায়াল।
- FB
- TW
- Linkdin
হায়দরাবাদের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা ভারত বায়োটেক আগেই ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছিল। এবার সেই ভ্যাকসিনেরও হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করে দিল সংস্থা।
হরিয়ানার রোহতকে শুরু হল করোনার টিকা ‘কোভ্যাকসিন’-এর ট্রায়াল। রোহতকের পোস্ট পিজিআই অফ মোডিক্যাল সায়েন্সে শুরু হয়েছে এই ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খবর হল, ভ্যাকসিন দেওয়া প্রথম তিন করোনা আক্রান্তই ভালো আছেন বর্তমানে।
হরিয়ানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল বিজ জানিয়েছেন, 'তিনজন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করা হয়েছিল, আর ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ওই তিন জনই ভাল আছেন।' মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘আগামীতে আরও স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ হবে।’
এই তথ্য সামনে আসতেই আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, এটা সবেমাত্র প্রথম পর্ব। আশাবাদী হওয়া যায়, কিন্তু এখনই নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই।
পরীক্ষামূলক এই ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে ভারত বায়োটেকের জেনেমো ভ্যালির বায়ো সেফটি লেভেল থ্রি হাই কনটেনমেন্ট ফেসিলিটিতে। ভারতে তৈরি এই ভ্যাকসিনের নাম দেওয়া হয়েছে কোভ্যাকসিন।
পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি করোনাভাইরাসের একটি স্ট্রেইন আলাদা করে ভারত বায়োটেকের হাতে তুলে দিয়েছিল। তারপরই ভ্যাকসিন তৈরির কাজে লেগে পড়ে সংস্থাটি। প্রিক্লিনিক্যাল গবেষণার উপর ভিত্তি করে পাওয়া তথ্য সরকারের কাছে জমাও দিয়েছিল এই সংস্থা। তারপরই তাঁদের হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, জুলাই মাস থেকেই সারা দেশজুড়ে শুরু করা হবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। সেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর প্রথম ধাপেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেল কোভ্যাকসিন। প্রথম পর্যায়ে ৩৭৫ জনের উপরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে।
দেশে তৈরি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে মানব দেহে প্রয়োগের জন্য যে ১২টি হাসপাতালকে বেছে নেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হরিয়ানার রোহতকের পোস্ট পিজিআই অফ মোডিক্যাল সায়েন্স। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য ইতিমধ্যেই ২২ স্বেচ্ছাসেবকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিজিআই-এর আধিকারিক। প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল ৮ থেকে ১০টি বিষয়ের উপর চলবে।
এদিকে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে পার্টনারশিপে গিয়েছে। তা ছাড়া তারা দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম নিজস্ব করোনা ভ্যাকসিন বানানোর জন্য ডিজিসিআইয়ের অনুমতিও পেয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিন তৈরির জন্য পার্টনারশিপে যাওয়া ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট। টিকা তৈরির লাইসেন্স পেয়ে গেলে আগামী ৩ মাসে লাখ লাখ করোনা টিকা তৈরি করবে সেরাম।
পাশাপাশি সেরাম ইনস্টিটিউটের নিজেদের রয়েছে ভিপিএম১০০২ টিকা। তাদের ধারণা, যক্ষা নির্মূলে কার্যকর এই টিকা করোনা যুদ্ধেও গেমচেঞ্জার হতে পারে। ১,০০০-এর বেশি রোগীর ওপর এই টিকা পরীক্ষা হয়েছে, আগামী ২ মাসে জানা যাবে, তাঁদের করোনা সংক্রমণ কমাতে এই টিকা ফলপ্রসূ হয়েছে কিনা।