৯ বছর অরুণাচলের সুমডোরং দখল করে রেখেছিল ড্রাগনরা, চোখ রাখুন সেই ভয়ঙ্কর অতীতে
- FB
- TW
- Linkdin
১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিবাদ অব্যাহত। তবে সবকিছু কাটিয়ে উঠে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছিল দুই দেশের পরিস্থিতি। কিন্তু চলতি লাদাখ সংঘর্ষের কারণে আবারও দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছে ভারত আর চিনের মধ্যে। বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতিতর প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর। কিন্তু এটাই প্রথম নয় যে ভারত আর চিন দুই দেশের মানুষ সংঘর্ঘে জড়িয়েছে।
২০১৭ সালে অরুণাচল সংলগ্ন ডোকালাম মরুভূমি এলাকায় ভারত আর চিনের মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছিল। দীর্ঘ ১৩ দিন দুই দেশের সেনা বাহিনী মুখোমুখি অবস্থান করেছে। ভারত আর চিনা সেনার স্ট্যান্ড অফের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে অরুণাচল প্রদেশএর সুমডোর চু এলাকায়। ১৯৮৬ সালে তৈরি হয় উত্তজেনা। আর তা প্রসমিত হয় ৯টি বছর পার করে ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৫ সালে এই এলাকা থেকে সম্পূর্ণ রূপে সেনা সরিয়ে নেয় দুই দেশের বাহিনী। কিন্তু তার আগে দফায় দফায় হয়েছিল সামারিক আর কূটনৈতিক বৈঠক।
ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চিন সীমান্তে গুরুত্ব দেন। তৎকালীন সেনা প্রধান জেনালের ভি কৃষ্ণ রাওয়ের সেনা মোতায়েন রাখার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। পাশাপাশি জোর দেওয়া হয়েছিল চিন সীমান্ত ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা এলাকার পরিকাঠামো তৈরির ওপর। আর সেই সময়ই নজর দেওয়া হয় তাওয়াং এর ওপর। যা দীর্ঘদিন ধরেই চিন তাদের বলে দাবি করে আসছিল।
ইন্দিরা গান্ধীর সীমান্ত নীতি অনুযায়ী ১৯৮৪ সালে ভারত সিমডোরং চু নদীর তীরে একটি পর্যবেক্ষণ পোস্ট তৈরি করেছিল। এই নদীটির অবস্থান ভারত আর চিন সীমান্তের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে। কিন্তু গ্রীষ্ণকালে ভারত ওই এলাকায় দখল নিলেও শীতকালে তা ফাঁকা পড়ে থাকত। কিন্তু ১৯৮৬ সালে দেখা যায় ওই এলাকায় নজর পড়েছে ড্রাগনদের।
গ্রীষ্ণকালে ভারতীয় বাহিনী ফিরে গিয়ে দেখে ভারতীয় সীমান্তে বেশ কিছু এলাকা দখল করেছিল চিন। তৈরি হয়েছিল চিনা পর্যবেক্ষণ পোস্ট। তারপরই ভারত অভিযোগ জানাতে শুরু করে। কিন্তু চিন সেই সময়ও অনুপ্রবেশের অভিযোগ উড়িয়ে দেয়।ওই বছরই অগাস্ট মাসে চিনা সেনা আরও ২০০ সেনা মোতায়েন করে সুমডোরংচু এলাক। ফলে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা পরিস্থিতি। তৈরি হয়েছিল একটি হেলিপ্যাডও।
ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী হন রাজীব গান্ধী। তিনিও ওই শান্তিপূর্ণভাবে এলাকাটি উদ্ধারের জন্য চিনের সঙ্গে কথাবার্তা চালান। প্রস্তাব দেন যে চিন এলাকা খলি করলেও এই এলাকা ভারত দখল করবে না। কিন্তু চিন তা প্রত্যাক্ষামণ করে। তারপরই ভারতীয় বাহিনী হাতুংলা, নামকা চ সহ বেশ কয়েকটি এলাকা আগ্রাসী মনোভাব গ্রহণ করে। উদ্দেশ্য ছিল চিনা সেনার ওপর চাপ তৈরি করা। কিন্তু প্রথম দিকে চিন সেদিকে কান না দিয়ে অরুণাচল দখলের হুমকি দিয়েছিল।
১৯৮৭ সালে প্রায় ২০০০ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল ভারতও। বাড়িয়েছিল সেনা। সক্রিয় হয়েছিল বাহুসেনাও। আর এই সময়ই পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে চিন সফরে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী।
রাজীব গান্ধীর সঙ্গে চিন প্রশাসনের বৈঠকের পরই কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছিল সিমডোরংচু বা ওয়াংডুংএর পরিস্থিতি। উল্লেখযোগ্য ভাবে সেনা সংখ্যা কমিয়েছিল চিন।
তারপরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেকটা সময় লেগেছিল। ১৯৯৩ সাল থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা কম হয়।
বেজিং অরুণাচল সংলগ্ন সুমডোরং চু নদীর ধার থেকে সম্পূর্ণরূপে সেনা প্রত্য়াহার করে ১৯৯৫ সালে।