- Home
- India News
- ফোকাসে করোনা, কোয়ারেন্টাইনে সেনা-পুলিশ - কীভাবে চলছে স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি, দেখুন
ফোকাসে করোনা, কোয়ারেন্টাইনে সেনা-পুলিশ - কীভাবে চলছে স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি, দেখুন
২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবস আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। দেশজুড়েই স্বাধীনতা দিবস পালনের প্রস্তুতি চলছে। করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষিতে বলাই বাহুল্য অনেকটাই বদলে যাচ্ছে প্রতি বছরের চেনা স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের ছবিটা। বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে ভাঙতে হচ্ছে দীর্ঘদিনের বহু ঐতিহ্যও।
- FB
- TW
- Linkdin
গত ২৪ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দিল্লির লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মুখোশ পরা, সঠিকভাবে স্যানিটাইজেশন করা, বড় জমায়েত না করা, ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য দুর্বল ব্যক্তিদের সুরক্ষিত রাখার মতো বেশ কিছু মহামারি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
প্রতি বছর, শিশুরা যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করে এই বছর স্বাধীনতা দিবসে তা থাকছে না। শিশুরা বাদ যাচ্ছে পুরো অনুষ্ঠান থেকেই। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ২ হাজারেরও বেশি শিশু লালকেল্লার মাঠে জাতীয় পতাকা গঠনে অংশ নেয়। এইবার হয় মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী তা করবে, আর নাহলে তা বাতিল করা হবে। তবে, জাতীয় ক্যাডেট কর্পস বা এনসিসি-র সদস্যরা প্রতিবারের মতোই অনুষ্ঠানে অংশ নেবে।
১৫ অগাস্ট লালকেল্লার অনুষ্ঠানসূচিতেও অনেক কিছু কাটছাঁট করা হচ্ছে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, ২১টি তোপধ্বনি-তে সেলাম জানানো, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে এই অনুষ্ঠান। থাকছে না সাধারণ মানুষের সামিল হওয়ার সুযোগ-ও। অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য লালকেল্লার দুপাশের দুটি মাঠই বন্ধ রাখা হবে।
প্রতিবার সম্মান জানানো হয় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের। এই বছর করোনা মহামারির প্রেক্ষিতে সেই বীরের সম্মানে ভাগ বসাতে চলেছেন ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাই কর্মীদের মতো 'কোভিড যোদ্ধারা'। জানা গিয়েছে, মহামারি রুখতে তাঁদের মহৎ পরিষেবার স্বীকৃতি হিসাবে এই আমন্ত্রণ জানানোর সুপারিশ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। কোভিড-জয়ী প্রায় ১,৫০০ ব্যক্তিও উপস্থিত থাকবেন বলে শোনা যাচ্ছে। যার মধ্যে থাকবেন করোনা-জয়ীরা প্রায় ৫০০ জন স্থানীয় পুলিশ সদস্য-ও। বাকিরা দেশের অন্যান্য অংশ থেকে আসবেন। এইবারের স্বাধীনতা দিবসের উদযাপনের মূল ফোকাসটা এই করোনাযোদ্ধা ও করোনাজয়ীদেরা উপরই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনার ব্যান্ডরা সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে করোনার যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবে।
লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও প্রতিবছর বেশ কয়েকহাজার দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন। এবারেও তাঁরা থাকবেন, তবে ভিভিআইপি এবং অন্যান্য আমন্ত্রিতদের সংখ্যার কমে দাঁড়াবে মাত্র ২০ শতাংশে।
লালকেল্লায় গার্ড অব অনার অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন যে ৩৫০ পুলিশ সদস্য, তাদেরকেও দিল্লি ক্যান্টনমেন্টে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কনস্টেবল পদ থেকে থেকে শুরু করে ডেপুটি কমিশনার পদ অবধি সব স্তরের পুলিশ কর্মীরাই রয়েছেন। তাঁদের কারোর দেহে কোভিড-১৯'এর কোনও লক্ষণ নেই। প্যারেড মহড়া দেওয়ার পরই তাঁদের স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। সাধারণত ৪০ জন একসঙ্গে প্যারেডের রিহার্সালে অংশ নেন। এইবার স্যানিটাইজড গাড়িতে একসঙ্গে মহড়ার অনুমতি পাচ্ছেন ২০ জন কর্মী।
দিল্লি পুলিশ ছাড়াও ভারতীয় সেনা, বায়ুসেনা এবং নৌসেনার যাঁরা স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, তাঁদের সকলকেই ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। পৃথকীকরণে আছেন তাঁদের ড্রাইভার, গৃহপরিচারক, রাঁধুনি, বাস ড্রাইভার, কুচকাওয়াজ প্রশিক্ষকরাও। অফিসাররা শুধুমাত্র মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন এবং সরাসরি ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের অন্য কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেইসঙ্গে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি সরকারি গাড়িকে বারবার স্যানিটাইজ করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস মহামারির প্রয়োজনীয় সুরক্ষার পাশাপাশি নাশকতা রোখারও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দিল্লির পুলিশ কমিশনার এসএন শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, স্বাধীনতা দিবসের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ড্রোন বা মাইক্রোলাইট বিমানের মতো উড়ন্ত যান থেকে যাতে কোনও হামলা না তে পারে, সেই দিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদী হামলা ঠেকাতে সাহায্য চাওয়া হয়েছে জনসাধারণেরও। সোমবার থেকেই রাজধানীর ইন্ডিয়া গেট, কনট প্লেস-সহ বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন চেক করা শুরু হয়ে গিয়েছে।
শুধু লালকেল্লাতেই নয়, দেশের অন্যান্য রাজ্যেও কোভিড মহামারির প্রেক্ষিতে অনেকটাই বদল ঘটছে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে। ঝাড়খণ্ডে দর্শনার্থীর সংখ্যা সীমিত রাখা হবে। সেইসঙ্গে এখানেও আমন্ত্রণ পাচ্ছেন চিকিত্সক, স্বাস্থ্যকর্মী, স্যানিটাইজেশন কর্মী এবং সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড -১৯ রোগীরা। রাজস্থানে অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়ছে স্কুল শিশুরা। তথ্য প্রযুক্তির শহর বেঙ্গালুরুর অধিকাংশ স্কুল আবার অনলাইনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।