- Home
- India News
- নেতাজি রহস্যের এক বীজ এখনও কি রয়েছে গান্ধী পরিবারের হাতে, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিল এই বই
নেতাজি রহস্যের এক বীজ এখনও কি রয়েছে গান্ধী পরিবারের হাতে, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিল এই বই
- FB
- TW
- Linkdin
নেতাজির অন্তর্ধান তদন্ত নিয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারি তরফে তিনটি তদন্ত চালানো হয়েছে। ১৯৫৬ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজের (Azad Hind Fouz) একজন প্রাক্তন লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল শাহ নওয়াজ খান-এর নেতৃত্বে একটা তিন সদস্যের শাহ নওয়াজ কমিটি, ১৯৭০ সালে পাঞ্জাব হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জি ডি খোসলার এক সদস্যের খোসলা কমিশন এবং ২০০৫ সালের সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি বিচারপতি মনোজ কুমার মুখোপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বাধীন মুখার্জি কমিশন (Mukherjee Commission)। 'ভ্যানিশিং অব সুভাষ বোস'-এ (Vanishing Of Subhas Bose) এই তিনটি তদন্ত কমিশনের রিপোর্টই বিশ্লেষণ করে, সুভাষ বসুর নিখোঁজ অথবা মৃত্যুরহস্যের আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন রাজেশ তলোয়ার। উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন জওহরলাল নেহেরুর চরিত্র ও আচরণ বিশ্লেষণের মাধ্যমেও।
বইয়ের একাদশতম অধ্যায়ের শিরোনাম হল 'নেহেরু কী জানতেন'। রাজেশ তলোয়ার লিখেছেন, সুভাষ বসু সংক্রান্ত সোভিয়েত রাশিয়ার কাছ থেকে পাওয়া বেশ কিছু চিঠিপত্র অত্যন্ত যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করেছিল ভারত সরকার। সেগুলিতে সম্ভবত, সোভিয়েত রাশিয়া থেকে নেহরু-কে বলা হয়েছিল যে, ভারত স্বাধীন হওয়ার আগেই মৃত্যু হয়েছিল সুভাষ বসুর। রাজেশ তলোয়ারের দাবি, নেহরু ও তাঁর কন্য়া ইন্দিরা, দুজনেই বুঝেছিলেন পরবর্তীকালে নেতাজির অন্তর্ধানের বিষয়ে তাঁদের দিকে আঙুল উঠতে পারে। সেই সময়ে এই নথিগুলিই তাঁদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে। সেই কারণেই এগুলিকে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে দশকের পর দশক ধরে।
বস্তুত, পরবর্তী সময়ে জওহরলাল নেহরুর বিরুদ্ধে নেতাজি অন্তর্ধান নিয়ে বহু অভিযোগই উঠেছে। বিশেষ করে তাঁকে ইতিহাসের নিন্দিত নায়ক করে দিতে পারত দুটি মারাত্মক অভিযোগ। কী কী? অনেকেরই দাবি, সোভিয়েতদের কাছ নেহেরু সুভাষ বসুর জীবিত থাকার এবং সুস্থ থাকার খবর পেয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে কী করা হবে, এই প্রশ্নও তাঁকে করেছিল সোভিয়েত। কেউ কেউ বলেন, নেহেরু বলেছিলেন নেতাজি-কে কারাবন্দী করে রাখতে। দ্বিতীয় মত হল, হেফাজতে রাখা নয়, নেতাজিকে একেবারে খতম করার পরামর্শই সোভিয়েতকে দিয়েছিলেন নেহেরু। বিজেপি সাংসদ সুব্রমণিয়ন স্বামী এই মতের তীব্র সমর্থক। আর এই ধরমের অভিযোগকে খণ্ডন করার জন্য়ই নেতাজি সংক্রান্ত বিশেষ করে তাঁর অন্তর্ধআন রহস্য সংক্রান্ত বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর নথিগুলি যত্ন করে সরিয়ে রেখেছেন নেহরু-গান্ধিরা, এমনটাই দাবি করেছেন রাজেশ তলোয়ার।
তবে নেহেরুর চরিত্র বিশ্লেষণ করে 'ভ্যানিশিং অব সুভাষ বোস'-এ রাজেশ তলোয়ার সাফ জানিয়েছেন 'পুরোনো কমরেড'-কে কারাবন্দি রাখা বা হত্যার নির্দেশ দেওয়ার মতো মানসিকতা জওহরলালের ছিল না। নেতাজির সঙ্গে তাঁর যে মতপার্থক্য ছিল, তা তিনি মেনে নিয়েছেন। ব্যক্তিগত রেষারেষিও ছিল। জওহরলাল নেহেরুর কাজকর্মেও বহু ত্রুটি ছিল, এমনটাও বলেছেন। কিন্তু, তিনি কোনও 'খলনায়ক' ছিলেন না।
তবে জওহরলাল এবং ইন্দিরা দুজনেই যে নেতাজির অন্তর্ধান সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতেন, এই সন্দেহ তিনি প্রকাশ করেছেন দেশের প্রথম অ-কংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই-এর আচরণ বিশ্লেষণ করে। ক্ষমতায় আসার পর মোরারজি দেশাই সংসদে আচমকাই জানিয়েছিলেন, তাইপেই-এ বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করার মতো নতুন নথি তাঁর হাতে রয়েছে। পরে অবশ্য সেইসব নথির কথা বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন। কেন? রাজেশ তাঁর বইয়ে লিখেছেন, নেতাদির অন্তর্ধানের মতো টপ সিক্রেট নথি দেখার ছাড়পত্র থাকে একমাত্র দেশের প্রধানমন্ত্রীর। সেই চেয়ারে বসার সম্ভবত মোরারজি দেশাই-এর হাতেও ওই ধরণের কোনও গোপন নথি এসেছিল। প্রাথমিক উত্তেজনায় তা বলে ফেললেও, পরে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে পিছিয়ে এসেছিলেন। সেইসব নথি প্রকাশ্যে আনলে হয়তো সোভিয়েত রাশিয়া এবং ব্রিটেন-এর সঙ্গে ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক প্রশ্নের মুখে পড়ত।
তাহলে সেই নথিপত্র কোথায় গেল? সবই কী নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে? রাজেশ তলোয়ার বলেছেন, কখনই না। তবে সেগুলি সরকারি সংরক্ষণাগারে আছে, না সনিয়া গান্ধীর বাড়িতে কোনও নিরাপদে স্থানে সরিয়ে ফেলা হয়েছে, সেটাই বিরাট প্রশ্ন। রাজেশ-এর বিশ্বাস গান্ধী পরিবারের কাছে মূল নথিগুলি যদি নাও বা থাকে, অন্তত সেইসব গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্রের কপি নিশ্চয়ই আছে।
নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর নেতাজি সংক্রান্ত বহু ফাইলই ডিক্ল্যাসিফাই করেছেন, জনসমক্ষে এনেছেন। কিন্তু, তাতে সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান হয়নি, বরং বেড়েছে। রাজেশ তলোয়াড় যে ধরণের নথির কথা বলছেন, তা সরকারের প্রকাশিত ফাইলগুলিতে পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে সেগুলি গেল কোথায়? রাজেশের দাবি, গান্ধী পরিবারের কাছে এই ধরণের নথিগুলির মূল সংস্করণটি না থাকলেও, কপি করা তো নিশ্চয়ই থাকবে। বলা তো যায় না, কোনদিন নাম থেকে কালি তুলতে কাজে লাগে!