জরুরী অবস্থার ছয় খলনায়ক, যারা শাস্তির বদলে পেয়েছিল পুরস্কার, চিনে নিন ছবিতে ছবিতে
- FB
- TW
- Linkdin
বংশী লাল (ইন্দিরা সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী)
দোষ - শাহ কমিশন বলেছিল, বংশী লাল একেবারে ব্যক্তিগত কারণে তাঁর ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের র চূড়ান্ত অপব্যবহার করেছেন। ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে তিনি 'ক্ষুদ্র ও প্রতিহিংসাপরায়ণ স্তরে' নেমেছিলেন।
পুরস্কার - জরুরি অবস্থার পরে তিনি রাজীব গান্ধী সরকারে রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং গত শতাব্দীর ৮ ও ৯-এর দশকে দু'বার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর নামে একটি খালও রয়েছে। ২০০৬ সালের মার্চে তাঁর প্রয়াণ ঘটে।
ভি সি শুক্লা (ইন্দিরা সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী)
দোষ - সাংবাদিক ও স্বাধীন সংবাদপত্র, প্লেব্যাক গায়ক কিশোর কুমারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার এবং সরকারী কর্মচারীদের কংগ্রেস দলের হয়ে কাজ করতে বাধ্য করার জন্য বিদ্যাচরণ শুক্লাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
পুরস্কার - রাজীব গান্ধী সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং তারপর ভি পি সিং এবং নরসিমা রাও মন্ত্রিসভার-ও সদস্য ছিলেন। ২০১৩ সালের মে মাসে তিনি মারা যান।
আর কে ধাওয়ান (ইন্দিরা গান্ধীর অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব)
দোষ - কিসের ভিত্তিতে গ্রেফতারি, তা না দেখেই মিসা আইনের আওতায় গ্রেফতারি পরোয়ানায় স্বাক্ষর করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের চাপ দিতেন আর কে ধাওয়ান। একাধিক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছিলেন, তাদের আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেওয়া হত, কোনও বিলম্ব বা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে তা তাদের পক্ষে বিপদজনক হতে পারে।
পুরস্কার - ১৯৮০ ইন্দিরার ক্ষমতায় ফিরতেই তাঁরও দাপট ফিরেছিল। পরে তিনি কংগ্রেসের হয়ে রাজ্যসভার সদস্য এবং পি ভি নরসিমা রাও সরকারের মন্ত্রী হন।
নবীন চাওলা (দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর কৃষ্ণ চন্দ, তাঁর সেক্রেটারি):
দোষ - ইন্দিরা সরকারের প্রতি সামান্য প্রতিরোধের মানসিকতা দেখলেও কারাগার বিভাগের আইএএস কর্মকর্তাদের হুমকি দিতেন নবীন চাওলা। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরেক সেক্রেটারি হিসাবে কারাগারের বিভাগের পদক্রমের কোনও অবস্থানেই তিনি ছিলেন না। তা সত্ত্বেও জেলকর্তাদের উপর তার খবরদারি চলত। কিছু বাছাই করা বন্দিদের উপর অত্যাচারের জন্য তিনি তাদের অ্যাসবেস্টসের ছাদওয়ালা কক্ষে রাখতে বাধ্য করতেন। কিছু বন্দিকে আবার সমস্যায় ফেলতে তাদের পাগলদের সঙ্গে রাখার নির্দেশ দিতেন। এমনকী দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর কৃষাণ চাঁদ জানিয়েছেন, তাঁকেও সচিবের কথা শুনেই চলতে হত।
পুরস্কার - গণতান্ত্রকে এইবাবে হত্যা করেছিলেন যিনি, তাঁকেই মনমোহন সিং-সোনিয়া গান্ধী জুটি ২০০৩ সালে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার-এর মতো উচ্চপদে নিয়োগ করেছিলেন। এমনকী এই পদে তাঁর পূর্বসূরী এতে সরকারিভাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন চাওলার নিরপেক্ষতা নিয়ে।
পি এস ভিন্দার (তৎকালীন দিল্লি পুলিশের ডিআইজি)
দোষ - শাহ কমিশন বলেছিল, প্রীতম সিং ভিন্দার-এর আচরণ 'যে কোনও প্রশাসনের জন্য কলঙ্ক'। গুলি করে মারার আদেশনামায় স্বাক্ষর করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের উপর নিয়মিত চাপ দিতেন ভিন্দার। এমনকী, জোর করে প্রাক-তারিখের আদেশনামাও সই করাতেন। ককেউ সামান্য অনীহা দেখালেই তিনি খবর দিতেন ইন্দিরা পুত্র সঞ্জয় গান্ধী-কে।
পুরস্কার - ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় ফিরে আসার পরে পিএস ভিন্দার দিল্লির পুলিশ কমিশনার হন এবং শেষে ডিজিপি হিসাবে অবসর গ্রহণ করেছেন।
জয়রাম পাড়িক্কাল (কেরল পুলিশের তৎকালীন অপরাধ দমন শাখার ডিআইজি)
দোষ - পুলিশ হেফাজতে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কৃতি ছাত্র পি রাজন-কে নির্যাতন ও হত্যার মামলায় তিনিই ছিলেন প্রধান আসামী। ইন্দিরা সরকারের স্রৈরাচারের বিরদ্ধে এক স্বাক্ষর সংগ্রহ আন্দোলনে অংশ নিয়ে ফেরার সময় পি রাজন-কে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ।
পুরস্কার - পরবর্তী তালে তিনি কেরল পুলিশের ডিজিপি হয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
কৃষাণ চাঁদ (দিল্লির তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর)
এই তালিকায় তাঁর নাম জোড়া হল ব্যতিক্রম হিসাবে। জরুরী অবস্থার সময়ে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন তিনি। অনেক আপত্তিজনক কাজ করেছিলেন। শাহ কমিশন তাকে কঠোর অপরাধে অভিযুক্ত করেছিল। এরপর তাঁকে শাস্তি দেয় তাঁর বিবেকই। ১৯৭৮ সালের ৯ জুলাই রাতে দক্ষিণ দিল্লির বাসভবন থেকে বেরিয়ে একটি পরিত্যক্ত কূয়োয় ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি।