ফিরে দেখা ২০১৯, একনজরে বছরের সেরা একডজন খবর, যেগুলি গোটা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছে
| Published : Dec 30 2019, 12:09 PM IST / Updated: Dec 30 2019, 12:14 PM IST
ফিরে দেখা ২০১৯, একনজরে বছরের সেরা একডজন খবর, যেগুলি গোটা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছে
Share this Photo Gallery
- FB
- TW
- Linkdin
112
পুলওয়ামা হামলা, বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক ও অভিনন্দন - ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক সিআরপিএফ কনভয়ের উপর আত্মঘাতি হামলা চালায় পকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। এই ঘটনায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। জবাবে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোর-রাতে ভারতীয় বায়ুসেনা নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে, জইশ-ই-মহম্মদ'এর শিবিরে এয়ারস্ট্রাইক করে। এর পরদিনই পাক বায়ুসেনা ভারতীয় আকাশে ঢুকে পড়েছিল। উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান-এর নেতৃত্বে ভারতীয় বায়ুসেনা তাদের ফিরে যেতে বাধ্য করে। কিন্তু উইং কমান্ডার অভিনন্দন-এর মিগ ২১ বিমান-টি পাক ভূখণ্ডে ভেঙে পড়লে তিনি পাক সেনার হাতে বন্দি হন। কুটনৈতিক চাপের মুখে ৪৮ ঘন্টা পরই তাঁকে প্রত্যার্পন করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। ভারতে তিনি যুদ্ধনায়কের সম্মান পেয়েছেন। গুগল জানিয়েছে, সবাইকে ছাপিয়ে তাঁর নামেই এই বছর ভারতে সার্চ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
212
লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ - ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত সাত দফায় ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। ২৩ মে ফল প্রকাশ করা হয়। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি ৩০৩টি আসন জিতে সরকার গঠন করে। এনডিএ জোট মোট ৩৫৩টি আসনে জয়ললাভ করে। অপরদিকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মাত্র ৫২টি আসন পায়। তাদের ইউপিএ জোটের ভাগ্য়ে জোটে ৯১টি আসন। নির্বাচনের পরই খারাপ ফলের দায়ভার গ্রহণ করে দলের সর্বভারতীয় সভাপতির পদ থেকে সরে যান রাহুল গান্ধী।
312
৩৭০ ধারা বাতিল ও কাশ্মীরের অবস্থা বদল - ৫ অগাস্ট কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে। ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত হয়। একই সঙ্গে সরকার রাজ্যটিকে ভেঙে দিয়ে 'জম্মু-কাশ্মীর' ও 'লাদাখ' এই দুই কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল গঠন করে। দীর্ঘদিন জম্মু ও কাশ্মীরের মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। একই সঙ্গে রাজ্যের বহু রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে, যাদের এখনও মুক্তি দেওয়া হয়নি।
412
অর্থনৈতিক মন্দা - সরকারের পক্ষ থেকে না মানা হলেও এই বছর ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিস্কুট থেকে গাড়ি - সব শিল্পেরই বেহাল অবস্থা। সবচেয়ে আশঙ্কার হল কয়লার মতো আটটি প্রধান শিল্পের বৃদ্ধি ক্রমেই নামছে। ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে প্রকৃত জিডিপি এবং সম্ভাব্য জিডিপির মধ্যে পার্থক্যের জন্য প্রায় ২.৮ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি হবে ভারতের। আইএমএফ-ও এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ভারতের অর্থনীতি ফের ট্র্যাকে ফিরে আসবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছে।
512
চিদম্বরমের কারাবাস - ২১ অগাস্ট আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরম-কে গ্রেফতার করে সিবিআই। সিবিআই ও ইডি, দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফেই তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এর একদিন আগেই দিল্লি হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করেছিল। ১০০ দিনেরও বেশি কারাবাসের পর আপাতত জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।
612
অসম ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জী - ৩১ অগাস্ট অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। ৩,৩০,২৭,৬৬১ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে ১৯,০৬,৬৫৭ জন বাদ পড়েন। এঁরা অবশ্য ফরেন ট্রাইবুনাল থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ পাবেন। তবে এই তালিকায় অসংখ্য ভুল আছে বলে বিতর্ক রয়েছে। পরে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গোটা দেশেই এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জীকরণের কথা বলেছেন।
712
চন্দ্রযান ২ - ২২ জুলাই দুপুর ২টো বেজে ৪৩ মিনিটে, সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওণা দিয়েছিল চন্দ্রযান ২। এটি ছিল ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্র অভিযান। প্রথম চন্দ্রযান অভিযানে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করাই লক্ষ্য থাকলেও দ্বিতীয় অভিযানে ভারত চাঁদের বুকে নামতেও চেয়েছিল। ৬ সেপ্টেম্বর রাতে প্রজ্ঞান রোভার-কে পেটে নিয়ে বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে নামতে শুরু করে, কিন্তু চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে বিক্রম তার লক্ষ্যপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ে। তবে চন্দ্রযানের অরবাইটর ভালোভাবেই চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে করতে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চাঁদে নামার স্বপ্ন এইবারে সফল না হলেও সারা দেশে ইসরোর বিজ্ঞানীরা জাতীয় নায়কের সম্মান পেয়েছেন। মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ে ভারতে এই অভিযানকে ঘিরে যে আগ্রহ তৈর হয়েছে, তেমনটা আগে দেখা যায়নি।
812
দিল্লির বায়ুদূষণ - দীপাবলির ঠিক পরেই অক্টোবর মাসের শেষে এবং নভেম্বরের শুরুতে রাজধানী দিল্লি প্রায় গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। প্রতিবেশী রাজ্যগুলির খড় পোড়ানোর দৌলতে বায়ুদূষণ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছায়। বেশ কয়েকদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হয়। স্বাস্থ্য নিয়ে জরুরি অবস্থা পর্যন্ত ঘোষণা করতে হয়েছে। এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অবিলম্বে দিল্লি ও সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে খড় পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা সঠিকভাবে কার্যকর না করতে পারায় মুখ্যসচিবদের তিরস্কার পর্যন্ত করেছেন শীর্ষ আদালতের বিচারক।
912
অযোধ্যা রায় - ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা অযোধ্যার জমি বিতর্ক মামলার রায় ঘোষণা করে। তৎককাললীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্যরা একমত হয়ে রায় দেন বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমির মালিকানা পাবে রামলালা। তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট গঠন করে রামমন্দির তৈরির কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। এরসঙ্গে মুসলিম পক্ষকে অযোধ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মসজিদ তৈরির জন্য ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারকে।
1012
হায়দরাবাদ গণধর্ষণ ও হত্যা - ২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পর আরও একটি ভয়াবহ গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় শিউরে উঠেছিল গোয়া দেশ। ২৭ নভেম্বর রাতে হায়দরাবাদের ২৬ বছরের এক তরুণী পশু চিকিৎসককে ষড়যন্ত্র করে গণধর্ষণ ও হত্যা করে চার দুষ্কৃতী। নির্যাতিতার দেহ পেট্রোল সহযোগে পুড়িয়েও দেওয়া হয়। পুলিশ চারজনকেই গ্রেফতার করে। এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই দেশ জুড়ে ধর্ষকদের শাস্তি আরও কঠোর করার দাবি ওঠে। একই সঙ্গে অভিযুক্তদের দ্রুত ফাঁসি দেওয়ার দাবি করা হয়। কিন্তু ৬ ডিসেম্বর রাতে ঘটনার পুনর্নির্মানের সময় পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে তারা চারজনই মারা যায়। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
1112
অগ্নিমূল্য পেঁয়াজ - সাড়া দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছে পেঁয়াজের অগ্নিমূল্যও। প্রথমে অগাস্টে, তারপর নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আবার বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। ডিসেম্বরে কর্নাটকে কেজি প্রতি ২০০ টাকা দরেও খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে। ভারতের মূল পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্রে অনিয়মিত বর্ষণের ফলেই দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তার জন্যই এই মূল্যবৃদ্ধি।
1212
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও দেশ জুড়ে বিক্ষোভ - ১১ ডিসেম্বর সংসদে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ২০১৯ পাস হয়। এর ফলে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আগত ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত অমুসলিম উদ্বাস্তুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। তবে এই আইনটি পাস হওয়ার পর থেকেই 'সংবিধান বিরোধী' বলে দেশের প্রায় সর্বত্র এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। উত্তরপূর্বে শুরু হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও আন্দোলন হিংসাত্মকও হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র-যুবদের মধ্য় থেকে এই আইনের প্রবল বিরোধিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।