মহাগুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২১ - কী কী প্রত্যাশা করদাতাদের, দেখে নিন এক নজরে
- FB
- TW
- Linkdin
কর্পোরেট কর ছাড়
মহামারির আগে কর্পোরেট করের হার সংস্থাগুলির জন্য ২২ শতাংশ এবং উত্পাদনকারীদের জন্য ১৫ শতংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল। এই ক্ষেত্রে কর হ্রাস কার্যত অসম্ভব বলে মনে হলেও, লকডাউনের সময় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা মোকাবিলা করতে সরকারি সহায়তা হিসাবে বিনিয়োগভিত্তিক আর্থিক ত্রাণ এবং আগের বছরের ক্ষয়ক্ষতি সামঞ্জস্য করার ক্ষেত্রে নমনীয়তা আশা করা হচ্ছে।
বীমা ক্ষেত্রে উদ্দীপনা
ভারতে বীমা ক্ষেত্রে মানুষের যোগদান খুবই কম। মহামারি চলাকালীন চিকিত্সা উচ্চ ব্যয় অনেককেই বীমামুখী করবে বলে আশা করা হচ্চএ। এই অবস্থায় বীমা ক্ষেত্রের ভারতের যোগদান বৃদ্ধির জন্য জীবন বীমা ও স্বাস্থ্য বীমা করানোর জন্য করদাতাদের আরও উৎসাহিত করতে কর ছাড়ের সীমা বাড়ানো হতে পারে। এছাড়া কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলিকে তাদের কর্মীদের জন্য গ্রুপ চিকিত্সা বীমার জন্য উচ্চতর করের সুবিধাও দেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আবাসিক অবস্থা
আয়কর না দিয়ে বছরে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেশে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় অনাবাসী ভারতীয়দের। গত বছর করোনার কারণে দেশব্যাপী লকডাউন এবং বিমান পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে, অনেক অনাবাসী ভারতীয়ই সেই নির্দিষ্ট সময় পার করে ফেলেছিলেন। কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ ট্যাক্স বোর্ড এই অনাবাসীদের 'অনৈচ্ছিক অবস্থানের' জন্য এই ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে। কিন্তু তা ছিল এক বছরের জন্য। এছাড়া এই সময়ে বহু বিদেশী সংস্থার কর্মীও ভারতে তাদের বাড়ি থেকে কাজ করেছেন। যার ফলে তাদের ভারতের 'স্থায়ী প্রতিষ্ঠান' হিসাবে বিবেচিত হওয়ার এবং করের আওতায় পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। সেখানেও ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এই দুই ক্ষেত্রেও আগামী অর্থবর্ষেও উপযুক্ত ছাড় দেওয়ার প্রত্যাশা করছেন অনাবাসীরা।
চাপে থাকা শিল্পক্ষেত্রকে সহায়তা
লকডাউনের সময় কার্যত কোনও চাহিদাই না থাকায় উড়ান, পর্যটন, খাদ্য ও পানীয়ের মতো বেশ কয়েকটি শিল্পক্ষেত্রের শুধু ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তাইই নয়, এই ক্ষেত্রগুলির প্রাক-কোভিড স্তরের চাহিদা অর্জন করতে এখনও অনেক সময় লাগবে বলে জানাচ্ছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাই এই ক্শিল্পক্ষেত্রগুলিকে সম্পূর্ণরূপে আগের অবস্থায় ফেরানোর জন্য সরকার তাদের ৮ বছর দীর্ঘ লস-ক্যারিং-ফরোয়ার্ড ব্যবস্থার মেয়াদ আরও অন্তত এক বছর বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
লভ্যাংশ আয়ের করের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর
২০২০ সালের বাজেটের লভ্যাংশ বিতরণ কর বাতিল করা হয়েছিল। এরফলে লভ্যাংশ আয়করের ক্ষেত্রে অনাবাসী এবং ভারতে বসবাসকারীদের প্রদত্ত আয়করের মধ্যে একটি অনিয়ন্ত্রিত বৈষম্য তৈরি হয়েছে। অনাবাসীদের উপার্জিত লভ্যাংশের উপর আয়করের দিতে হয় ২০ শতাংশ হারে। এরমধ্যে আবার বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভারতের কর বিষয়ক চুক্তি রয়েছে, সেইসব দেশের বাসিন্দা হলে এই করের হার পড়ে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ। সেখানে ভারতে বসবাসকারীদের ক্ষেত্রে একই লভ্যাংশ আয়ের করের হার ৩৫.৮৮ শতাংশ (প্রযোজ্য সারচার্জ এবং সেস সহ)। এই বিষয়ে একটা সামঞ্জস্য় আনবে সরকার, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বড় মাপের কর ছাড়
কোভিড মহামারি সকলকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কাজেই বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য, বিশেষ করে রোগ বিষয়ক গবেষণা ও নিরাময়ের টিকা বিকাশের ক্ষেত্রে ব্যয়ভার কমানোর জন্য এই ক্ষেত্রে সরকার বড় মাপের কর ছাড়ের কথা বিবেচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে সংস্কার
মহামারির আগেই ঝিমিয়ে ছিল রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্র। মহামারি এবং লকডাউনের ফলে দারুণ ভাবে পড়ে গিয়েছে বাড়ি-জমির ন্যায্য বাজার মূল্য। তবে এ জাতীয় সম্পত্তির স্ট্যাম্প শুল্ক মূল্য ও সার্কেলের হার একই রয়েছে। ফলে কোনও স্থাবর সম্পত্তি ন্যায্য বাজার মূল্যে বিক্রি করা হলেও, আয়কর আইনের অধীনে অপব্যবহার বিরোধী বিধির আওতায় সেগুলির কর স্ট্যাম্প শুল্ক মূল্যেই গণনা করা হয়। এই ক্ষেত্রে সরকারের ওই বিধান সংস্কারের বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
'বিবাদ সে বিশ্বাস' প্রকল্প
২০২০ সালের বাজেটের অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল 'বিবাদ সে বিশ্বাস' প্রকল্প। যে সমস্ত শুল্কপ্রদান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ মিটিয়ে শুল্ক মিটিয়ে দিলে সুদ ও জরিমানা ছাড়াই মামলাগুলির নিষ্পত্তি করবে সরকার। এইভাবে রাজস্ব বাড়বে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। মহামারির কারণে এই প্রকল্পের কাজ বেশি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি সরকার। এইবার আরও বেশি করদাতাকে এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করার বিষয়ে আকৃষ্ট করতে সরকার এই প্রকল্পের সুবিধা আরও বাড়াতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ মহামারি পরবর্তী ক্ষেত্রে রাজস্ব বৃদ্ধিই এখন মোদী সরকারের আশু লক্ষ্য।