হিমালয়ের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলেই কি উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়, কতটা গলেছে হিমবাহ
রবিবার হিমবাহ ভেঙে গিয়ে তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে যায় উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলা। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের কারণে প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয় ধৌলিগঙ্গা ও অলোকানন্দা নদীতে। ভেসে যায় বেশ কয়েকটি গ্রাম। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে প্রচুর মানুষ নিখোঁজ হয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ১৮ জনের দেহ। ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। প্রশ্ন উঠছে কী কারণে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়?
| Published : Feb 08 2021, 04:30 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
বিশেষজ্ঞদের মতে হিমবাহ হ্রদ বিস্ফোরণ হয়ে প্লাবিত হয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকায়। সেই জলই বয়ে যায় সংশ্লিষ্ট নদীগুলিতে। জলবায়ু পরিবর্তনেই দায়ি করা হয়েছে এই বিপর্যয়ের জন্য।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে হিমালয় পর্বর্তের প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তবে এখনও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে আগ্রহী নয় সংস্থার আধিকারিকরা। তাঁরা জানিয়েছেন আরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। রিমা ফ্যাসি এটি ঋষিগঙ্গা ও ধৌলিগঙ্গা অঞ্চলের সর্বোচ্চ উঁচু এলাকায় অবস্থিত একটি হিমবাহ। সেটিতেই ফাটল চিড় ধরেছে বলেও আশা করা করছেন আধিকারিকরা।
প্রথামিকভাবে তাঁরা মনে করছেন, হিমবাহটি থেকে তৈরি হয়েছে একটি নদী। পরবর্তীকালে ট্রিগারটি পরিবর্তে এটি হিমবাহ লেকে পরিণত হয়। যার ফলে আউটব্রস্ট বন্যা নামে পরিচিত একটি ঘটনা হয়ে দাঁড়াতে পারে। হিমবাহ যখন লেকের সীমানা অতিক্রম করে তখন প্রচুর জল প্রবাহিত হয়। তখনই এজাতীয় বন্যা দেখা দিতে পারে।
মেঘ ফেটে বৃষ্টি পাহাড়ে প্রায় পরিচিত ঘটনা। কিন্তু হিমবাহ ফেটে তুষার ধস থেকে বন্যার ঘটনা প্রায়ই বিরল।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে একবিংশ শতকের শুরু থেকে হিমালয়ের হিমবাহগুলি দ্বিগুণ হারে গলে যাচ্ছে। প্রতিবছরই লম্বায় একফুট করে বরফ গলে যাচ্ছে। যা আগামী দিনে ভারত সহ বেশ কয়েকটি দেশের কাছে রীতিমত হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
৪০ বছর ধরে উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ভারত, চিন, নেপাল, ভূটান সহ একাধিক দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এজাতীয় ঘটনা ঘটছে। হিমালয়ের হিমবাহ যে এত তাড়াতাড়ি গলে যাচ্ছে তা এখনও পরিষ্কার বিজ্ঞানীদের কাছে।
২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রায় এক ডিগ্রি করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। গবেষকরা পশ্চিম থেকে পূর্ব দিক পর্যন্ত ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত প্রায় ৬৫০টি হিমবাহের উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছ। আর সেখানেই উচ্চতার পরির্তন নির্ণয় করেই পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত হিমালয়ের উচ্চতা গড়ে ০,২৫ মিটার হ্রাস পেয়েছে। যার অর্থ ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে হিমবাহ।
রবিবার উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের কারণে প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয় ধৌলিগঙ্গা ও অলোকানন্দা নদীতে। ভেসে যায় বেশ কয়েকটি গ্রাম। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে প্রচুর মানুষ নিখোঁজ হয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ১৮ জনের দেহ। ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।