হাইপারসনিক প্রযুক্তি কী, যা ভারতকে যুদ্ধক্ষেত্রে আমেরিকার থেকেও এগিয়ে দিয়েছে
সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব দেশের চেয়ে এগিয়ে, সেটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে, বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে চলে আসা এই কাহিনিতে সম্প্রতি লেগেছে মোচড়। আর সেটা হল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি (Hypersonic Missile Technology)। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমানে আমেরিকাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে আমাদের ভারত। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। আসুন, জেনে নেওয়া যাক, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি আসলে কী, যা ভারতকে সামরিক ক্ষেত্রে আমেরিকারও আগে এগিয়ে দিচ্ছে -
- FB
- TW
- Linkdin
মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ, সেনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির (Senate Armed Services Committee) চেয়ারম্যান তথা প্রভাবশালী মার্কিন সেনেটর জ্যাক রিড (Jack Reid), সম্প্রতি সেনেটে জানিয়েছেন, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে তাঁদের দেশ শুধু রাশিয়া (Russia) ও চিন (China) নয়, ভারতের থেকেও পিছিয়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, একটা সময় প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমেরিকার আধিপত্য ছিল। কিন্তু এখন সময় বদলে গিয়েছে। হাইপারসনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চিন, ভারত ও রাশিয়া অনেক উন্নতি করেছে।
মার্কিন সেনেটর জ্যাক রিড আরও বলেন, এর ফলে পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আমেরিকা। এতদিন এই ব্যাপারে দেখা যেত দ্বিমুখী প্রতিযোগিতা - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে। এবার, প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে ত্রিপাক্ষিক প্রতিযোগিতার, যোগ দিয়েছে চিনও।
চিন, ভারত, রাশিয়া এবং আমেরিকা-সহ বিশ্বের বহু দেশই, বর্তমানে হাইপারসনিক অস্ত্র প্রযুক্তির অগ্রগতিতে নিযুক্ত রয়েছে। গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের ভাইস প্রেসিডেন্ট, জেনারেল জন ই হাইটেন (General John E. Highten) বলেছিলেন, চিনের হাতে এখন এমন হাইপারসনিক মিসাইল রয়েছে, যাতে করে তারা যে কোনওদিন আচমকা আমেরিকার উপর পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে। তিনি আরও বলেন, চিনের হাইপারসনিক মিসাইলের পুরো বিশ্বকে প্রদক্ষিণ করার ক্ষমতা রয়েছে।
সেইসঙ্গে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির গতি এবং দিক পরিবর্তন করার ক্ষমতা এতই সুনির্দিষ্ট এবং শক্তিশালী, যে তাদের ট্র্যাক করা এবং ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব। একেবারে নিখুঁত মাপজোক করে এগুলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধে, রাশিয়াকে তাদের হাইপারসনিক মিসাইল, 'কিঞ্জল' (Kinzel) ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে।
হাইপারসনিক প্রযুক্তিকে, ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একেবারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বলে মনে করা হয়। এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি শব্দের গতির ৫ গুণেরও বেশি গতিতে চলে, গতিবেগ হয় অন্তত ঘণ্টায় ৬৫০০ কিলোমিটার।
ভারতও গত কয়েক বছর ধরে হাইপারসনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। মার্কিন পার্লামেন্টে পেশ করা এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত দেশীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে হাইপারসনিক মিসাইল তৈরিতে দারুণ সাফল্যও পেয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারত এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, যা প্রচলিত অস্ত্রের পাশাপাশি পারমাণবিক ওয়ারহেডও নিক্ষেপ করতে পারে। ২০১৯ সালের জুন মাসে এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির বেশ কয়েকটি সফল পরীক্ষা করেছে।
এই পরীক্ষার সময়, স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিনে (Scramjet Engine) সজ্জিত হাইপারসনিক টেকনোলজি ডেমোনস্ট্রেটর ভেহিকেল (Hypersonic Technology Demonstrator Vehicle) এর গতি পরিমাপ করা হয়েছিল প্রতি ঘন্টায় ৭৫০০ কিলোমিটার। শুধু তাই নয়, মার্কিন রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভারত এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির পরীক্ষার জন্য ১২টি হাইপারসনিক উইন্ড টানেলও (Hypersonic Wind Tunnels) তৈরি করেছে। এই সুড়ঙ্গগুলিতে, শব্দের গতির ১৩ গুণ বেশি গতির মিসাইল প্রযুক্তিও পরীক্ষা করা যায়।