গালওয়ান থেকে প্যাংগং, ফিরে দেখা পূর্ব লাদাখ সেক্টরের উত্তপ্ত দিনগুলি
৫০ বছরেরও বেশি সময় পরে চলতি বছর ভারত ও চিন মুখোমুখি হয়। গত সাত মাস ধরে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে চলমান অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ভারত ও চিন উভয় দেশই কূটনৈতিক ও সামরিক বৈঠকের ওপরেই আস্থা রেখেছিল। দুই দেশের আলোচনার জন্য তৈরি হওয়া ডাবলুএমসিসির বেশ কয়েকটি বৈঠকও হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সমাধান সূত্র পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর শেষবারের মত ডাবলুএমসিসি ভার্চুয়াল বৈঠকে কথা বলেন দুই দেশের কূটনৈতিকরা। সেই সময় দুই দেশই পূর্ব লাদাখ সেক্টর সংলগ্ন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে এক মত হন। কিন্তু তারপরে কেটেছে বেশ কয়েক দিন কিন্তু সীমান্ত এলাকায় কোনও উন্নয়ন দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে এই মূহুর্তে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
| Published : Dec 29 2020, 09:46 AM IST / Updated: Dec 29 2020, 09:48 AM IST
- FB
- TW
- Linkdin
গালওয়ান সংঘর্ষ
গত এপ্রিল মাস থেকেই চিনা সেনার আগ্রাসনের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। যদিও প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় সরকার পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। গত ২০ জুন গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সেখানে ২০ ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু হয়। যদিও তারআগেই প্যাংগং লেক ও অরুণাচল সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছিল। তবে তা কখনও গাওয়ান সংঘর্ষের মত প্রাণঘাতী আকার নেয়নি। ওই সংঘর্ষে নিহত হয়েছিল চিনা সেনাও। কিন্তু চিন এখনও পর্যন্ত সেই তথ্য প্রকাশ করেনি।
রাজনৈতিক উত্তাপ
গালওয়ান সংঘর্ষকে কেন্দ্র করেই বিরোধীরা রাজনৈতিক দলগুলি চাপ বাড়াতে থাকে কেন্দ্রের ওপর। প্রবল চাপের মুখে দাঁড়িয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। সেখানে বিরোধীদলগুলি একাধিক প্রশ্ন করতে থাকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়ে দিয়েছিলেন কেউ ভারতীয় সীমানায় অনুপ্রবেশ করেনি। কেউ ভারতীয় জমি অধিগ্রহণ করেনি। কিন্তু তারপরেই বিরেধীরা একাধিকবার কেন্দ্রের মোদী সরকারকে চিন ইস্যুতে নিশানা করে থাকে।
চিনা অ্যাপ
লাদাখ সংঘর্ষের পরই চিনা পণ্য বয়কটের ডাক ওঠে। সাধারণ নাগরিকরা চিনা পণ্য পরিহার করার ডাক দেন। সেই অবস্থায় জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ ও জাতীয় নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিয়ে একাধিক চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে দেশে। যাতে উষ্মা প্রকাশ করে চিনও। কিন্তু তারপেরই কেন্দ্রীয় সরকার অদম্য মনোভাব বজায় রেখে যায়।
লাদাখে প্রধানমন্ত্রী
চিনো আগ্রাসন যাখন বাড়ছে তখন আচমকাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাদাখ সফর করেন। তিনি ফরোয়ার্ড এলাকাতেও যান। সেখানে সেনাদের মনোবল বাড়িয়ে তুলতে তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনও পর্যন্ত নাম না করেই চিনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অন্যদিকে সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, সেনা প্রধান এমএম নারাভানে ও চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন।
এগিয়ে ভারত
অন্যদিকে লাদাখ পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য চিন ও ভারত একাধিক কূটনৈতিক ও সামরিক বৈঠক করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মেলেনি কোনও সমাধান সূত্র। এই পরিস্থিতি দুই দেশই শীতকালে প্রবল প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করেই মোতায়েন রয়েছে। তবে চিনা সেনার তুলনায় ভারতীয় সেনারা অনেকটাই ভালো অবস্থানে রয়েছে। কারণ কৌশগত দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত।
আত্মনির্ভর ভারত
লাদাখের চলমান স্ববিরতার মধ্যেই ভারত একের পর এক মিসাইল পরীক্ষা করেছে। রণসজ্জায় আত্মনির্ভর হওয়ার পথেই হাঁটছে দেশ। ডিআরডিও ও একাধিক সংস্থার শক্রুপক্ষের বুকে ভয় ধরিয়ে একের পর এক অস্ত্র পরীক্ষা করে যাচ্ছে।