- Home
- World News
- International News
- Afghanistan - মাথা কাটা থেকে জোর করে বিয়ে, আফগানিস্তান জুড়ে এখন ভয়ঙ্কর তালিবানি কাহিনি
Afghanistan - মাথা কাটা থেকে জোর করে বিয়ে, আফগানিস্তান জুড়ে এখন ভয়ঙ্কর তালিবানি কাহিনি
আফগানের উত্তরাংশে একের পর এক প্রদেশের রাজধানী দখল করছে তালিবানরা। গত পাঁচদিনে আটটি রাজধানী শহর দখল করেছে তারা। অধিকাংশ জায়গাতেই কোনও লড়াইই হয়নি, কিন্তু, যেখানে যেখানে তালিবানদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে, সেখানেই তৈরি হয়েছে একের পর এক ভয়াবহ দৃশ্য। হাজার হাজার আফগান নাগরিক এখন তালিবানদের দখলে চলে যাওায়া উত্তরের শহরগুলি থেকে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে আসছেন অপেক্ষাকৃত নিরাপদ জায়গা, দেশের রাজধানী কাবুলে। সংবাদ সংস্থা এএফপি-র কাছে তারা তালিবানদের নির্মম আচরণের ভয়াবহ বিবরণ দিয়েছেন - রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ থেকে শুরু করে তালিবানদের যৌনদাসী হওয়ার জন্য মেয়েদের অপহরণ, প্রকাশ্যে গর্দান নেওয়া - সবই রয়েছে।
| Published : Aug 11 2021, 06:29 PM IST / Updated: Aug 12 2021, 11:39 AM IST
- FB
- TW
- Linkdin
গত রবিবার, ৮ অগাস্ট, তাঁর ছয় সন্তানকে নিয়ে কুন্দুজ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন ৩৬ বছর বয়সী আফগান মহিলা ফ্রিবা। তালিবানদের প্রতিশোধের ভয়ে তিনি নিজের পুরো নাম জানাননি। তবে তিনি বলেছেন, তালিবানরা শহরটি দখল করার সময়ই তারা পালিয়েছিলেন। আসার পথে, তাঁরা কারাগারের কাছে প্রকাশ্য রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন। আর তাদের পাশেই ঘুরছিল কয়েকটা কুকুর।
তিন দিন আগে কুন্দুজ থেকে পালিয়েছিলেন ২২ বছরের যুবক মিরওয়াইস খান আমিরি। এএফপি-কে তিনি জানিয়েছেন, ওইদিন সে তালিবানদের হাতে সামান্য এক নাপিতকে খুন হতে দেখেছিল। কারণ, তাসলিবানদের সন্দেহ ছিল, সে আফগান সরকারের হয়ে কাজ করত। পালানোর সময় তার আমিরির গাড়ি লক্ষ্য করেও গুলি চলেছিল। তাঁর গাড়িতে সেই বুলেটের দাগ রয়ে গিয়েছে।
কুন্দুজ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আব্দুলমানানও। তিনি এএফপির কাছে দাবি করেছেন, তাঁর সামনেই তালিবানরা তাঁর ছেলের শিরচ্ছেদ করেছে। তাঁর কথায়, 'তারা তাকে নিয়ে গেল... যেন সে একটি ভেড়া। আর তারপর, ছুরি দিয়ে ওর মাথাটা কেটে পাশে ফেলে দিল'।
গত শনিবার, ৭ অগাস্ট তালোকান শহর থেকে পালিয়ে এসেছিলেন ২৫ বছর বয়সী মারওয়া। বিধবা মারওয়ার পালানোর কারণ, তালিবান কোনও যোদ্ধা কে বিয়ে করার আতঙ্ক। এএফপি-কে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ১৬ বছর বয়সী খুড়তুতো বোনকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের এক সদস্যের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে তালিবানরা। তার বাগদান হয়ে গিয়েছিল, এবং তার বাগদত্ত বর্তমানে ফ্রান্সে আছেন। বলতে বলতে এএফপির প্রতিনিধির সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মারওয়া।
আরও একজন নাম না প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কোনও আফগান পরিবারে দুজন মেয়ে থাকলে তালিবানরা তাদের একজনকে তুলে নিয়ে যায় কোনও তালিবান যোদ্ধার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য। আর যেই পরিবারে দুজন ছেলে থাকে, তাদের একজনকে তারা তুলে নিয়ে যায় যোদ্ধা হিসাবে নিয়োগ করার জন্য়।
বিধবা বিবি মা এএফপিকে জানিয়েছেন, বাড়ির দরজা খুলে দেখেছিলেন, তিনি তাঁর একমাত্র ছেলে ২০ বছরের আজিজুল্লাহ ঠিক সামনেই মরে পড়ে আছে। তার বুক ফুড়ে দিয়েছিল তালিবানি রকেটের সার্পনেল। বিবি মা বলেছেন, 'আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর, আমার ছেলেই ছিল আমার সব... আমার অভিভাবক এবং আমার আনন্দ। ওকে মৃত অবস্থায় দেখার মুহূর্তটা ছিল ভয়ঙ্কর, তখনই আমার মন মরে গিয়েছিল।'
কুন্দুজের বিচার বিভাগে কর্মরত ছিলেন, আজিজুল্লাহ। তিনি সাফ জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে এখন যেন সরকারি কর্মীদের নিধন যজ্ঞ শুরু করেছে তালিবানরা। চার থেকে পাঁচ বছর আগে চাকরি ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিদেরও খুঁজে বার করে হত্যা করা হচ্ছে। কাবুলে পালিয়ে এসেও শান্তিতে নেই আজিজুল্লাহ। কারণ তাঁর মতে তালিবানরা যেভাবে লড়াই করছে, তাতে শীঘ্রই কাবুলও তাদের দখলে চলে যাবে। 'তাহলে আমারা কোথায় পালাবো?' অসহায়ভাবে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি।
এই অসহায়তার শুরু হয়েছে চলতি বছরের মে মাসের গোড়া থেকে। ওই সময় থেকেই মার্কিন ও অন্যান্য বিদেশী বাহিনীগুলি সেনা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শুরু করেছিল। আর সেই সময় থেকেই আফগান সরকারি সেমনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ে নেমেছে তালিবানরা। গ্রামাঞ্চল অনেকদিন ধরেই তাদের দখলে ছিল। এবার একের পর এক প্রাদেশিক রাজদানী-সহ প্রাদেশিক এলাকাগুলি দখল করছে তারা।
তালিবানরা নেতৃত্ব অবশ্য বারবারই এইসব নৃশংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এমনকী, গত সপ্তাহে এইসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ হটলাইন চালু করার কথাও ঘোষণা করেছে তারা।
রাষ্ট্রসংঘসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী সংগঠন যদিও বলছে, তালিবানরা সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ করে চলেছে। এই অভিযোগগুলির তদন্তের দাবিও জানিয়েছে তারা। রাষ্ট্রসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা মঙ্গলবার বলেছে যে শুধু চলতি বছরেই আফগান যুদ্ধের কারণে ৩,৫৯,০০০ এরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। কাবুলের বিভিন্ন পার্কে, রাস্তায় যে হাজার হাজার সাম্প্রতিক শরণার্থীর ভিড় দেখা যাচ্ছে, তা এই পরিসংখ্যানকেই সমর্থন করছে।