- Home
- World News
- International News
- বদলালো না সাম্রাজ্যবাদী চিন, বৈঠক শেষ হতেই সীমান্ত সমস্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে বিবৃতি বেজিংয়ের
বদলালো না সাম্রাজ্যবাদী চিন, বৈঠক শেষ হতেই সীমান্ত সমস্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে বিবৃতি বেজিংয়ের
সীমান্ত সমস্যা নিয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এল না চিন। শুক্রবার রাশিয়ার মস্কোতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহের মধ্যে বৈঠকের পরের দিনই বেজিংয়ের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হল, লাদাখে সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চিন, দু’দেশের মধ্যে যে সমস্যা হয়েছে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী ভারত। চিন নিজের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
- FB
- TW
- Linkdin
লাদাখ ইস্যুতে উত্তপ্ত ভারত-চিন সম্পর্ক। এর মাঝেই সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে যোগ দিতে রাশিয়ায় গিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এরই মাঝে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওয়েই ফেংহের অনুরোধে তাঁর সঙ্গে মস্কোর হোটেলে বৈঠক করলেন তিনি। বৈঠকে মূল বিষয়ই ছিল দুই দেশের মধ্যে চলা সীমান্ত সমস্যা।
পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা সরানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই টালবাহানা করছে চিনা। দ্রুত সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য বৈঠকে চিনকে ভারতের সঙ্গে একত্রিতভাবে কাজের পরামর্শ দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
প্রায় আড়াই ঘণ্টার লম্বা বৈঠকের পর সবারই একটাই জিজ্ঞাসা ছিল, লাদাখে ভারত-চিন সীমান্তের উত্তেজনা কি এবার প্রশমিত হবে। কিন্তু চিনের তরফে তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা গেল না।
শনিবার চিনের তরফে জারি করা এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত ও চিন সীমান্তে উত্তেজনার কারণটা পরিষ্কার। এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী ভারত। চিন নিজেদের জমির এক ইঞ্চিও ছাড়বে না। চিনের সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্য ও সীমান্ত রক্ষা করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী, সমর্থ ও তৈরি।”
এই বিবৃতিতে সীমান্ত সমস্যা মেটানোর বিষয়ে ভারতকে এগিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে চিন। বলে হয়েছে, “চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে যা আলোচনা হয়েছিল তা বাস্তবায়িত করুক ভারত এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হোক। দু’দেশেরই লক্ষ্য থাকা উচিত নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো। স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সীমান্তের সামগ্রিক অবস্থা উন্নত করতে উদ্যোগী হওয়া উচিত দুই দেশের।”
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রকের তরফে অবশ্য এই মিটিংয়ের সারমর্ম নিয়ে কিছুই সরকারিভাবে জানানো হয়নি। শুধু এটুকুই জানানো হয়েছে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে চিনের কাছে ভারত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। গালওয়ান উপত্যকায় গত কয়েক মাস ধরে উত্তেজনা প্রশমন নিয়েও দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জানানো হয়েছে, দুই দেশের মন্ত্রী ভারত-চিন সম্পর্ক ও সীমান্ত এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন।
বেজিংকে পরামর্শ দিয়ে রাজনাথ জানিয়েছেন, বর্তমানে সীমান্তে যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, তা অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণভাবে সামলানো উচিত। দু'দেশের এমন কোনও পদক্ষেপ করা উচিত নয়, যা সীমান্তবর্তী এলাকায় উত্তেজনা বৃদ্ধি করে বা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।
দু'দেশের কথা বললেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতের তরফে কোনও আগ্রাসী পদক্ষেপ করা হয়নি। চিন কোনও বেগড়বাই করলে তবেই জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনা। রাজনাথ বলেন, 'সীমান্তের ক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনী সর্বদা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু একইসঙ্গে ভারতের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সংকল্প নিয়ে কখনও যেন সন্দেহ প্রকাশ না করা হয়।'
রাজনাথ জানিয়েছেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং সেনা সরানোর প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ করার জন্য দু'পক্ষকে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, 'দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও উন্নতির জন্য ভারত-চিন সীমান্তে যে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে একমত হয়েছেন দু'দেশের নেতারা। তা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত দু'পক্ষের এবং( দু'দেশের) মতভেদ যাতে বিবাদে পরিণত না হয়, তা দেখা উচিত দু'পক্ষের।' তবে দুই দেশের সম্পর্ক যে এখনই ভাল হচ্ছে না তা চিনের বয়ানে স্পষ্ট।
এদিকে লাদাখে উত্তেজনা প্রশমনের কোলও লক্ষণ নেই। প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্ত স্প্যানগুর গ্যাপের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় চিন ও ভারত দুই দেশের বাহিনীই টহল দিচ্ছে। গত শনিবার চুমার এলাকা দিয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসার চেষ্টা করেছিল লাল ফৌজ। তাদের লক্ষ্য ছিল কালা টপ ও হেলমেটের দখল নিয়ে নেওয়া। চেপুজি ক্যাম্প থেকে কয়েকটি আর্মড ভেহিকলকে বের হতে দেখেই সতর্ক হয়ে যায় ভারতীয় বাহিনী। চিনের চেষ্টা রুখে দেওয়া হয়। এরপরেই চুসুলের কাছে ভারতের ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট প্রস্তুত হয়ে যায়। নিশানা স্থির করে বসে টি-৯০ যুদ্ধট্যাঙ্ক। এইসব দেখেই ফের নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে যায় চিনের বাহিনী।
ভারতীয় সেনা জানাচ্ছে, এই স্প্যানগুর গ্যাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই রেঞ্জের মুকপারি, মগর হিল, চুসুল থেকে থাকুং পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকা এখন ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই পাহাড়ি উপত্যকায় এখন নিজেদের সামরিক বহর বাড়াচ্ছে চিন।