- Home
- World News
- International News
- করোনা থেকে সুস্থ হয়েও মিলছে না নিস্তার, ৭৮ শতাংশ রোগীর বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি
করোনা থেকে সুস্থ হয়েও মিলছে না নিস্তার, ৭৮ শতাংশ রোগীর বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি
- FB
- TW
- Linkdin
যাঁদের শরীরে আগে থেকেই কোনও জটিল অসুখ রয়েছে করোনায় তাঁদের ঝুঁকির আশঙ্কা সব থেকে বেশি। এই ভাইরাস শরীরের রেসপিরেটরি ইনফেকশন হিসেবে হামলা শুরু করে। তারপর আক্রান্ত হয় নার্ভাস সিস্টেম। পাচনতন্ত্র ও মস্তিষ্কেও হামলা করে করোনা জীবাণু। এমন কথা আগেই জানিয়েছিলেন গবেষকরা।
সম্প্রতি নতুন একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে করোনার দীর্ঘমেয়াদি ফল আরও বিপজ্জনক হতে পারে। করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও রোগীদের সিরিয়াস হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে, ৮০ শতাংশ মামলায় ড্যামেজ হতে পারে হৃদযন্ত্র।
জামা কার্ডিওলজি পত্রিকার একটি প্রবিবেদনে সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ওই সমীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর হার্টের নানা সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ফিরছেন হাজার হাজার মানুষ। চিকিৎসকরা দেখেছেন, এঁদের অধিকাংশের মধ্যেই হার্টের নানা সমস্যা যা আগে ছিল না, তা নতুন করে দেখা দিয়েছে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনায় এখন সুস্থতার হার অনেকটাই বেড়েছে। তবে এই ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হওয়ার পর তার ক্ষতিকর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।
জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের ১০০ করোনা রোগীর এমআরআই রেজাল্ট পরীক্ষা করেছে। এঁদের বয়স ৪০ থেকে ৫০-এর মধ্যে, করোনা আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন এঁরা। দেখা যাচ্ছে, ১০০ জনের মধ্যে ৬৭ জনের মাঝারি লক্ষণ ছিল, ঘরেই আইসোলেশনে ছিলেন। বাকি ২৩ জন ভর্তি হন হাসপাতালে। তাঁদের এমআরআই, রক্ত পরীক্ষা ও হার্ট টিস্যুর বায়প্সি সহ নানাভাবে হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা হয়।
দেখা গিয়েছে, সুস্থ হয়ে ওঠা ১০০ জনের মধ্যে ৭৮ জনের মধ্যে হার্ট ড্যামেজের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। গবেষক ক্লাইভ ডব্লিউ ইয়ান্সির বক্তব্য, এতজনের হৃদযন্ত্রে সমস্যা প্রমাণ করছে, যে করোনা সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদি ফল হিসেবে এমন অনেক কিছু সামনে আসতে পারে, যা আমরা এখনও জানি না, আর যা দুর্বল করতে পারে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশকে।
ফ্রাঙ্কফুর্টের ইউনিভার্সিটি হসপিটালের চিকিৎসক ভ্যালেন্তিনা জানিয়েছেন, কোভিড থেকে সেরে ওঠা (৪৫ থেকে ৫৩ বছর বয়সী) ১০০ জনের মধ্যে ৭৮ জনের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, তাদের হৃদপেশি কিংবা পেশির আবরণ ফুলে গিয়েছে। শতকরা ৩৬ জনের দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট ও ক্লান্তির সমস্যা, ৭১ জনের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গবেষকদের দাবি, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসে যে ধরনের জিনগত পরিবর্তন সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, তা একই সঙ্গে চিন্তার ও স্বস্তির। চিন্তার কারণ এই যে, এই পরিবর্তনের ফলে ভাইরাসের বহিরাঙ্গে প্রোটিনের কাঁটার (স্পাইক প্রোটিন) সংখ্যা বেড়েছে। ফলে তার আক্রমণের ক্ষমতাও বেড়েছে। অতি দ্রুত মানুষের কোষের সঙ্গে এটি আটকে যেতে পারছে। মূলত এই কাঁটার সাহায্যেই কোষকে আক্রমণ করে করোনা ভাইরাস
কিন্তু স্পাইক প্রোটিন মানবশরীরের কোষের মধ্যে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তার রোগপ্রতিরোধ-ব্যবস্থাকেও সজাগ করে। তখন অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। শরীরে তৈরি অ্যান্টিবডি বা বাইরে থেকে ঢোকানো প্রতিষেধক এই স্পাইক প্রোটিনকেই নিশানা করে। ফলে কাঁটার সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার অর্থ এই ভাইরাসের আরো বেশি করে অ্যান্টিবডির নিশানা হয়ে পড়া।
গত সপ্তাহেই ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ২৭ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত দিল্লিতে ২১ হাজার ৩৮৭ জনকে নিয়ে সমীক্ষা চালায়। ওই সমীক্ষায় বিগত কয়েক মাসে দিল্লির বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর কিডনি, হার্ট বা ফুসফুসের নানা সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ফিরছেন হাজার হাজার মানুষ। দিল্লি, মুম্বই-সহ দেশের বড় বড় শহরে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার ১৪-১৫ দিন পর অনেকেই সামান্য শ্বাসকষ্ট, তলপেটে ব্যথা, মাথা যন্ত্রণার মতো সাধারণ সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে আসছেন। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এঁদের অনেকের মধ্যেই নতুন করে কিডনি, হার্ট বা ফুসফুসের নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে করোনা-পরবর্তি শারীরিক সমস্যাগুলি চিন্তা বাড়াচ্ছে বিজ্ঞানীদের।
যদিও এই গবেষণাগুলি রয়েছে একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। এই ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি পরিণাম হিসেবে সিংহভাগ তথ্য এখনও হাতে আসেনি। জানা যাচ্ছে না, এই হৃদযন্ত্রের সমস্যা সাময়িক, না স্থায়ী হয়ে গেল। তবে ৪০-৫০ বছরের লোকেদের ওপর প্রভাবে পরিষ্কার, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষের পক্ষে করোনা বিপজ্জনক হতে পারে।