- Home
- World News
- International News
- 'কোথায় আহমদি' - তালিবানভূমি থেকে কীভাবে পালালেন আফগান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর, দেখুন
'কোথায় আহমদি' - তালিবানভূমি থেকে কীভাবে পালালেন আফগান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর, দেখুন
- FB
- TW
- Linkdin
গত ৬ অগাস্ট, পতন হয়েছিল জিরঞ্জ শহরের। সেই প্রথম আফগান জাতীয় সেনাবাহিনীর হাত থেকে কোনও প্রাদেশিক রাজধানী দখল করেছিল আফগানরা। জিরঞ্জ বিজয়ই পরবর্তী ৬ দিনে, একের পর এক প্রদেশের রাজধানীর, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের প্রদেশগুলির রাজধানীগুলির পতনের সূচনা ঘটিয়েছিল।
গত বুধবার, ১১ অগাস্ট, প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উত্তরের সবথেকে বড় শহর মাজার-ই-শরিফ দখল করেছিল তালিবানরা। বিশাল সংখ্যক আফগান সেনা থাকা সত্ত্বেও, তারা দ্রুত নিজেদের পোস্ট ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আফগান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নরের দাবি, উপর থেকেই তাদের যুদ্ধ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েঠছিল বলে গুজব রয়েছে।
নিরাপত্তার অবনতির ফলে অফগান মুদ্রাও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকগুলিও আরও খারাপ হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আজমল আহমদি। তবে তিনি দাবি করেছেন, সেই অবস্থাতেও সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক , গত সপ্তাহে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক পরিবেশকে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল করতে সক্ষম হয়েছিল।
এরপর গত বৃহস্পতিবার, ১২ অগাস্ট সকালে , আহমদি অফিসে আসার আগেই পতন হয়েছিল কৌশলগতভাবে আরেক বড় শহর গজনি। রাতে বাড়ি যাওয়ার মধ্যে তালিবানদের দখলে আসে হেরাত, কান্দাহার এবং বাগদিরা। তীব্র সংঘর্ষ চলছিল হেলমান্দ শহরে।
শুক্রবার, ১৩ অগাস্ট, আহমদি জানতে পেরেছিলেন, নিরাপত্তাজনিত পরিবেশের অবনতির কারণে তারা আর ডলারের চালান পাবেন না।
শনিবার, মুদ্রাস্ফীতি ৮১ শতাংশ থেকে প্রায় ১০০ এর কাছাকাছি পৌঁছেছিল। পরে অবশ্য ৮৬-তে ফিরে আসে। তবে তখনও তাঁর মনে একবারও এমন ভাবনা আসেনি, যে তার পরের দিনই পতন হতে চলেছে দেশের রাজধানী কাবুল-এর।
শনিবার রাতেই আজমল আহমদির পরিবার ফোন করে তাঁকে জানিয়েছিল, সরকারের অধিকাংশ পদাধিকারীরা ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আফগান নিরাপত্তা মূল্যায়ন জানিয়েছিল ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তালিবানরা কাবুলে পৌঁছাতে চলেছে এবং ৫৬ ঘণ্টার মধ্যে শহরের পতন হবে। তা মেনে আহমদি সোমবারের উড়ানের টিকিট কিনেছিলেন।
রবিবার সকাল থেকেই খারাপ খবর আসতে থাকে। ফলে, দ্রুত ব্যাঙ্ক ছেড়েছিলেন আহমদি। ডেপুটিদের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর সোজা গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে। সেখানে গিয়ে দেখেছিলেন সংসদের প্রধান থেকে শুরু করে আফগান সরকারের মাথারা সকলেই আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন এবং কারোর মধ্য়েই কোনও উদ্বেগ নেই।
চোখের সামনে দেখেছিলেন প্রাক্তন ভাইস প্রেসি়ডেন্ট দানিশ কাতারের বিমান ধরছেন। তার আগেই গুজব ছড়িয়েছিল যে আরেক ভিপি সালেহ ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়েছেন। মন্ত্রীরা এবং অন্যান্য ভিআইপিরা দুবাই এবং আরব আমিরশাহির উড়ানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দুটোই বাতিল হয়। রোববার সন্ধ্যা ৬টার কাম এয়ারের একটি ফ্লাইটের টিকিট পেয়েছিলেন আহমদি। কিন্তু, তারমধ্যেই আরে ব্রেকিং নিউজ - দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানি।
সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নরের উড়ানটিও বাতিল হয় তার জেরে। কিন্তু তাও বিমানবন্দরের কর্মচারী এবং সামরিক কর্মীরা বাদে সকলেই সেই কাম এয়ারের ফ্লাইটে উঠে বসেছিলেন, ১০০ আসনের প্লেনে ৩০০-রও বেশি যাত্রী। কিন্তু, বিমানটিতে জ্বালানিও ছিল না, কোনও পাইলটও আসেনি।
ওই বিমানটি থেকে নামার পর আহমদির চোখে পড়েছিল অন্য একটি সামরিক বিমান। সেটিকে ঘিরে ধরেও বহু মানুষ তাতে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনী, মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের সেই বিমানে তোলার চেষ্টা করছিলেন। এরমধ্যেই ভিড়ের মধ্যে কয়েকটি গুলি ছোড়া হয়েছিল। এই গোলমালের মধ্যেই আহমদিকে তাঁর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা ঠেলে বিমানটিতে তুলে দিয়েছিলেন।
তবে শেষটা এভাবে হওয়ায় তিনি আফগান নেতৃত্বকে দুষেছেন। বলেছেন, তালিবানরা কাবুল দখল করলে কীভাবে সরকারি কর্মীদের অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়, তাই নিয়ে সরকারের কোনও পরিকল্পনাই ছিল না। কেউ কারোর সহ্গে যোগাযোগ না করে, যে যার নিজের মতো কেটে পড়েছেন। রাষ্ট্রপতির ঘানিরও সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপতির ধারণাগুলি দুর্দান্ত ছিল, কিন্তু দুর্বল ছিল তার বাস্তবায়ন। তিনি নিজেও সেই দোষের অংশ বলে মেনে নিয়েছেন প্রাণ হাতে করে দেশ ছেড়ে পালানো সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর। পরে জানতে পেরেছেন, তালিবানরা তার খোঁজ করেছিল।