- Home
- World News
- International News
- 'চিনা-মাখামাখিতে বাড়ছে আন্তর্জাতিক বিপদ', পাক বিদেশ দফতরের সতর্কতার পরও অবুঝ ইমরান
'চিনা-মাখামাখিতে বাড়ছে আন্তর্জাতিক বিপদ', পাক বিদেশ দফতরের সতর্কতার পরও অবুঝ ইমরান
- FB
- TW
- Linkdin
পাক বিদেশ মন্ত্রকের উদ্বেগ
সূত্রমতে, পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রীর দফতর-কে সতর্ক করে বলেছে, চিনের সঙ্গে সম্পর্কের নীতির ক্ষেত্রে পাকিস্তান যদি দ্রুত কোন সংশোধনী না আনে, তাহলে বিশ্বের বৃহত অর্থনৈতিক শক্তিগুলির ক্রোধের মুখে পড়তে হবে ইমরান খান-কে। কারণ, ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে বেজিং-এর অসহযোগিতার কারণে এই শক্তিগুলি এখন চিনকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইউরোপীয় দেশগুলি কূটনৈতিক পর্যায়ে চিনকে বিচ্ছিন্ন করার দিকে এগিয়ে চলেছে এবং এখনও চিনের সঙ্গে মাখামাখি করে গেলে বেজিং-এর সঙ্গে সঙ্গে সেই বিচ্ছিন্নতাকরণের কবলে পড়তে হবে ইসলামাবাদকেও।
পাক বিপদের ইঙ্গিত
চিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব, পাকিস্তানের পক্ষে ক্ষচির কারণ হতে পারে তার প্রথম ইঙ্গিত মিলেছে মাত্র দিনকয়েক আগেই। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউরোপের দেশগুলিতে পাক জাতীয় বিমান সংস্থা পিআইএ-র বিমানগুলির অবতরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অধিকাংশ পাক বিমানচালকই ভূয়ো লাইসেন্স নিয়ে বিমান চালান, পাক সংসদ থেকেই এই গুরুতর তথ্য উঠে আসার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এর পিছনে আসল কারণ ইসলামাবাদের বেজিং ঘনিষ্ঠতা, এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। কারণ ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-কে বারবার বলা হয়েছিল শুধুমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে যোগ্য পাইলটরাই ইউরোপিয় দেশের রুটগুলিতে বিমান চালাবেন। কিন্তু পাকিস্তানের সেই আবেদনে কান দেয়নি ইইউ। স্বাভাবিক সময়ে এমনটা ঘটত না বলেই মনে করা হচ্ছে।
কে বোঝায় ইমরান-কে?
কিন্তু, এতকিছুর পরেও শি জিনপিং-এর হাত ছাড়তে মা মুঠি এতটুকু আলগা করতে নারাজ ইমরান খান। সম্প্রতি তিনি সিপিইসির পক্ষে সওয়াল করে বলেছেন, এই করিডোরটি 'পাকিস্তান-চিন বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ' এবং পাক সরকার 'যে কোনও মূল্যে এর কাজ সম্পন্ন করবে'। আর একবার সিপিইসির পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলে তার ফল প্রত্যেক পাকিস্তানি পাবেন বলে আশা জোর গলা জানিয়েছেন তিনি। সিপিইসিকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি দুর্দান্ত প্রকল্প হিসাবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এই বিশাল-বহুমুখী উদ্যোগ পাকিস্তানের জন্য নিশ্চিতভাবে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে দেবে।
সিপিইসি কী? কোথায় দাঁড়িয়ে এই প্রকল্পের কাজ?
সিপিইসি হল চিনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রকল্প, যার মধ্যে রয়েছে হাইওয়ে বা মহাসড়ক, রেললাইন, বিমানবন্দর এবং সামুদ্রিক বন্দরের মতো পরিকাঠামোগত প্রকল্প। এটি চিনের মাল্টি বিলিয়ন ডলারের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'এর একটি অংশ। 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ' হল স্থল ও জলপথের একটি বিস্তৃত ব্যবসায়িক সরবরাহের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপকে চিনের সংযুক্ত করার বিশাল এক প্রকল্প। সিপিইসি করিডোর চিনা শহর কাশগড়-কে আরব সাগরের বুকে অবস্থিত পাকিস্তানের গদর বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ২০১৬ সালে সিপিইসি আংশিকভাবে চালু হয়েছিল। গদর বন্দরের মাধ্যমে চিনা পণ্যসম্ভার সামুদ্রিক পথে আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে রফতানি শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালের শেষদিকে চালু হয়েছিল বেশ কিছু বড় বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প।
পাকিস্তানে চিনা ভয়
প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন থাকলেও চিন-কে নিয়ে এখন খোদ পাকিস্তানেই ভয় বাড়ছে। অর্থনৈতিক করিডোর বা সিপিইসি-র অধীনে থাকা পাকিস্তানের অংশ থেকে বেলাগামভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠন করছে চিন। যা নিয়ে ইতিমধ্যে বেলুচিস্তানে এবং গিলগিট বালটিস্তানে চিনের বিরুদ্ধে জনমানসে ক্ষোভ জন্মাচ্ছে। সেইসঙ্গে চিনে উইঘুর মুসলমানদের সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ করা হয়, তাই নিয়েও ক্রমে চিনের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ হচ্ছে আম পাক জনতা। তার উপর সিপিইসি-তে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের চিনা প্রতিশ্রুতিও পূর্ণ করা হচ্ছে না। বালুচ ও গিলগিটের বাসিন্দাদের বদলে চিনা সংস্থাগুলি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে সস্তার চিনা শ্রমিকদের কাজে লাগাচ্ছে। স্থানীয় রীতিনীতি ও ঐতিহ্যকেও চিনা সংস্থাগুলি বিন্দুমাত্র সম্মান করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। পাকিস্তানের একাংশের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ভারতের মতো পাকিস্তানেরও সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকা দখল করতে পারে চিন।