- Home
- World News
- International News
- করোনা কাবু লামা-র অ্যান্টিবডিতে, মহামারি মোকাবিলায় কীভাবে বড় ভূমিকা নিচ্ছে এই প্রাণী
করোনা কাবু লামা-র অ্যান্টিবডিতে, মহামারি মোকাবিলায় কীভাবে বড় ভূমিকা নিচ্ছে এই প্রাণী
অবশেষে মিলল করোনাভাইরাসের জোরালো দাওয়াই। একদিকে যেমন করোনার টিকা তৈরির কাজে এগিয়ে চলেছেন বিভিন্ন দেশের গবেষকরা, তেমনই করোনাভাইরাসের নিরাময়ক ওষুধ তৈরির গবেষণাও চলছে। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত গবেষণায় দক্ষিণ আমেরিকার স্তন্যপায়ী প্রাণী লামা-দের থেকে দুটি স্থিতিশীল অ্যান্টিবডি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যেগুলি গবেষণাগারে সার্স-কোভ-২ বা নতুন করোনারভাইরাসটিকে কাবু করতে পারে। স্বভাবতই এই অগ্রগতি নিয়ে বিশ্বব্যপী গবেষকদের মধ্যে সাড়া পড়ে গিয়েছে। এতে করে কোভিড-১৯'এর নিরাময়ক তৈরিতে আরও একধাপ এগোনো গেল বলে মনে করা হচ্ছে।
- FB
- TW
- Linkdin
নেচার স্ট্রাকচারাল অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই 'ন্যানোবডিগুলি' - অর্থাৎ লামার দেহ থেকে পাওয়া অ্যান্টিবডিগুলি প্রোটিন এসিই২ এর সঙ্গে ভাইরাসটির মিথঃক্রিয়ায় বাধা দেয়। এই প্রোটিন এসিই২ রিসেপ্টরের মাধ্যমেই নভেল করোনভাইরাস মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গে আটকে যায়। কাজেই তাদের মিথঃক্রিয়া বাাধাপ্রাপ্ত হলে সার্স-কোভ-২ সংক্রামিতও হতে পারবে না।
চলতি মহামারির শুরু থেকেই বিজ্ঞানী ও গবেষকরা কোভিড-১৯ রোগ নিয়াময়ের কার্যকরী উপায় হিসাবে প্যাসিভ টিকাদান বা প্যাসিভ ভ্যাক্সিনেশনের কতা বলেছেন। অর্থাৎ সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের প্রকোপ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কোনও ব্যক্তির থেকে প্রাপ্ত কিংবা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ কোনও অ্যান্টিবডির মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে থাকা ভাইরাস-কে কাবু করা। ২০০২-০৩ সালে যে সার্স মহামারি দেখা দিয়েছিল, সেই ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হয়েছিল।
তবে সার্স-কোভ-২'এর ক্ষেত্রে ভাইরাসের প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এরপর সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার স্তন্যপায়ী প্রাণী লামা-দের থেকে পাওয়া অ্যান্টিবডি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসকে অকার্যকর করার ক্ষেত্রে কতটা দক্ষ, তাই নিয়ে গবেষণা চালানো হয়।
কেন লামার অ্যান্টিবডি নিয়ে গবেষণা? গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের মতো বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহেই অ্যান্টিবডিগুলির, দুটি শৃঙ্খলা থাকে - একটি ভারি ও অপরটি হালকা। কিন্তু লামার মতো উটজাতীয় প্রাণীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির একটি অতিরিক্ত ভারি শৃঙ্খলা থাকে, যাকে বলা হয় ন্যানোবডি। এই ন্যানোবডিগুলি আকারে ক্ষুদ্র হলেও স্থিতিশীল এবং সহজেই উত্পাদিত হয় এবং বহুক্ষেত্রেই প্রচলিত অ্যান্টিবডিগুলির বিকল্প হিসাবে দারুণ কার্যকর।
সার্স-কোভ-২'এর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য থেরাপিউটিক্স হিসাবে লামাদের দেহে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি করে সেখান থেকে ন্যানোবডি সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার মধ্য থেকেই দুটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ন্যানোবডিগুলি চিহ্নিত করা গিয়েছে, যারা এসিই২-এর সংস্পর্শে আসার পরও তার সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংযুক্তিতে বাধা দিতে পারে। এই দুটি ন্যানোবডির নাম দেওয়া হয়েছে এইচ১১-এইচ৪ এবং এইচ১১-ডি৪।
এরা দুজনেই মানব দেহের প্রোটিনের এসিই২ সংলগ্ন অঞ্চল কে নিশানা করে। তবে গবেষণা অনুযায়ী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এইচ১১-ডি৪'এর থেকে এইচ১১-এইচ৪ এগিয়ে। ভাইরাসের মোকাবিলার ক্ষমতার পাশাপাশি মানবদেহে অ্যান্টিবডির সঙ্গে সংযোজনেও এটি ভালো সম্ভাবনা দেখিয়েছে।
কীভাবে করোনা চিকিৎসায় কাজে লাগানো যাবে এই ন্য়ানোবডি? বিজ্ঞানীদের দাবি কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের দেহে এককভাবে ন্যানোবডিগুলিকে কিংবা মানব অ্যান্টিবডিগুলির সঙ্গে সংমিশ্রণে প্যাসিভ টিকা হিসাবে দেওয়া যেতে পারে। তবে উটজাতীয় প্রামীর দেহ থেকে প্রাপ্ত ন্যানোবডিগুলি সাধারণত মানবদেহের অ্যান্টিবডিগুলির সঙ্গে খুব একটা মিলেমিশের প্রবণতা দেখায় না। তবে যে এই ন্যানোবডিগুলিকে সহজেই মানব দেহে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা যায়।
যাঁরা টিনটিন-এর কমিকস পড়েছেন তাঁদের কাছে লামা অপরিচিত প্রাণী নয়। সূর্যদেবের বন্দি কাহিনিতে অনেকবার ক্যাপ্টেন হ্যাডকের মুখে থুতু ছিটিয়েছিল এই প্রাণী। আর আজ থুতু থেকে ছড়িয়ে পড়ে এমন একটা ভয়ঙ্কর ভাইরাসের বিরুদ্ধে অস্ত্র তৈরিতে ডাক পড়ল সেই লামা-দেরই।