- Home
- World News
- International News
- তিয়ানানমেন স্কোয়ার - ৩২ বছর আগে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছিল চিন, কি ঘটেছিল দেখুন
তিয়ানানমেন স্কোয়ার - ৩২ বছর আগে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছিল চিন, কি ঘটেছিল দেখুন
- FB
- TW
- Linkdin
প্রতিবাদ-বিক্ষোভের শুরু
এই প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছিল হু ইয়াওবাং-এর মৃত্যু থেকে। একসময় তিনি ছিলেন চিনা কমিউনিস্ট পার্টির একেবারে শীর্ষপদে। তবে তিনি ছিলেন সংস্কারপন্থী। তাঁর মৃত্যুর ফলে সংস্কারের গতি ধীর হয়ে গিয়েছিল। সরকার তথা পার্টির মধ্যে বাসা বেধেছিল দুর্নীতি। ক্রমশ আয়ের অসাম্য চিনা কমিউনিস্ট সমাজে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। আর এর থেকেই ১৭ এপ্রিল তিয়ানানমেন স্কোয়ারে শুরু হয়েছিল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। মূলত গণতন্ত্র ও সংস্কারের ডাকে সেখানে জড়ো হয়েছিলেন অন্তত ১ লক্ষেরও বেশি শিক্ষার্থী। সরকারি সতর্কতা তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি।
ক্রমশ বেড়ে ওঠে ভিড়
২২ এপ্রিল, ছিল হু ইয়াওবাং-এর স্মৃতিসভা। সেই উপলক্ষে 'গ্রেট হল'এর বাইরে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৫০,০০০ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৩ জন সরকারের কাছে তাদের দাবির রূপরেখা জমা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু, কমিউনিস্ট সরকার তাদের উপেক্ষাই করেছিল। এর দুদিন পর বেজিং-এ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বয়কট করা শুরু করেছিল। ২৭ এপ্রিল সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রায় ৫০,০০০ শিক্ষার্থী তিয়ানানমেন স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিল করে। সেখানে শিক্ষার্তীদের ভিড় বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লক্ষ।
শুরু হয় অনশন ধর্মঘট
১৯১৯ সালের ৪ মে সংস্কারের দাবিতেই চিনে শিক্ষার্থী এবং বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্বে একটি গণ-আন্দোলন হয়েছিল। তার বার্ষিকীতে 'পিপলস গ্রেট হলে' এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের বৈঠকের বাইরো জোরালো প্রতিবাদ হয়। একি দিনে সাংহাই এবং আরও নয়টি চিনা শহরে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে। ১৩ মে থেকে কয়েকশো শিক্ষার্থী তিয়ানানমেন স্কোয়ারে অনশন শুরু করে।
বিব্রত চিন সরকার
১৫ মে চিন সফরে আসেন সংস্কারবাদী সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচভ। বিদেশী রাষ্ট্রনেতাদের চিনে গ্রেট হলের বাইরে ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। প্রতিবাদী ছাত্রদের বাধায় চিন সরকার তা করতে পারেনি। বরং, শিক্ষার্থীরা গর্বাচভকে 'গণতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত' হিসাবে স্বাগত জানিয়েছিল।
প্রতিবাদীদের সঙ্গে পার্টির প্রধান
তিয়ানানমেন স্কোয়ারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন, পার্টির প্রধান ঝাও জিয়াং, কট্টরপন্থী নেতা তথা তৎকালীন চিনা প্রধানমন্ত্রী লি পেং এবং ওয়েন জিয়াবাও, যিনি পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ঝাও বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে উঠে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। প্রতিবাদীরা তা শোনেনি। এরপরই ঝাও প্রতিবাদীদের সমর্থন করে পদত্যাগ করেছিলেন।
'গণতন্ত্রের দেবী'
২০ মে প্রধানমমন্ত্রী লি পেং বেজিং-এর কিছু অংশে সামরিক আইন জারি করেন। ২৩ মে লি-এর অপসারণের দাবিতে বেজিং-এ প্রায় ১ লক্ষ মানুষ মিছিল করে। তার পরের দিন শিক্ষার্থীরা তিয়ানানমেন স্কোয়ারে 'স্ট্যাচু অফ লিবার্টি'র আদলে নির্মিত দশ মিটার বা ৩৩ ফুট দীর্ঘ 'গণতন্ত্রের দেবী'র মূর্তি উন্মোচিত করেছিল। এরপরই সরকারে পক্ষ থেকে পাল্টা বিক্ষোভ নামানো হয় রাস্তায়। প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের দেশদ্রোহী হিসাবে দেগে দেওয়া হয়।
লি পেং, 'বেজিং-এর কসাই'
এরপরই বিক্ষোভকে কড়া হাতে দমন করতে নামেন 'বেজিং-এর কসাই' নামে পরিচিত প্রধানমন্ত্রী লি পেং। ৩ জুন তিয়ানানমেন স্কোয়ারে নামানো হয় কয়েক হাজার সৈন্য। তিয়ানানমেন স্কোয়ারের কয়েকশো মিটারের মধ্য়েই প্রতিবাদীদের উপর কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদকারীদের সতর্ক করা হয়, সেনা এবং পুলিশকে 'সবরকম পথ ব্যবহারের অধিকার' দেওয়া হয়েছে।
নামল ট্যাঙ্ক, চলল গুলি
পরেরদিন ভোরেই ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়ি নামে তিয়ানানমেন স্কোয়ারে। অল্প সময়েই প্রতিবাদীদের সেখান থেকে সাফ করে দেওয়া হয়। এর প্রায় চার ঘন্টা পরে, স্কোয়ারের একেবারে শেষ প্রান্তে আবার প্রচিবাদীরা জড়ো হতে গেলে, সৈন্যরা নিরস্ত্র অসামরিক শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালায়।
ট্যাঙ্ক বাহিনীর সামনে একা
৫ জুন তিয়ানানমেন স্কোয়ারে একটি ট্যাঙ্কের কনভয়ের সামনে একা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। এই ছবিটি গণতন্ত্রকামীদের উপর চিনা কমিউনিস্ট সরকারের দমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসাবে পরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।
প্রতি-বিপ্লবী
পরদিন চিনা স্টেট কাউন্সিলের মুখপাত্র ইউয়ান মু টেলিভিশনে জানিয়েছিলেন মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩০০, তাদের বেশিরভাগই সৈন্য। সরকারি হিসাবে শিক্ষার্থীরা নিহত হয়েছিলেন মাত্র ২৩ জন। সেইসময়ের চিনের সর্বময় নেতা দেং জিয়াওপিং এই অভিযানের জন্য সামরিক বাহিনীর আধিকারিকদের প্রশংসা করেছিলেন, এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতি-বিপ্লবী বলে দুষেছিলেন। বলেছিলেন, তারা চিনা কমিউনিস্ট পার্টিকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল।
পরিণতি
ঘরে, একক পার্টির শাসন বজায় রাখতে পারলেও, তিয়ানানমেন স্কোয়ারের ঘটনার জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের বড় মাপের খেসারত দিতে হয়েছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ১৯৯০ সালে চিনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ৩.৯ শতাংশে নেমে এসেছিল। সেই দেশে প্রথম স্টক মার্কেট হিসাবে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের পথ চলা শুরু হয়। তারপর থেকে কমিউনিস্ট চিন ক্রমেই পুঁজিবাদের পথে এগিয়ে চলেছে, সম্প্রসারণবাদ যাদের মূল মন্ত্র।