বিশ্ব থেকে কবে উধাও হবে করোনার প্রকোপ, এবার সময় জানিয়ে দিল 'হু'
গোটা বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা আট লাখ পার করেছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন লাগামছাড়া ভাবে বাড়ছে। ইতিমধ্যে গোটা বিশ্বে করোনা রোগীর সংখ্যা ২ কোটি পার করেছে। কবে কমবে এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপ। তার উত্তর খুঁজছে এখন বিশ্ববাসী। চাতক পাখির মতো ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সকলে। এই অবস্থায় এই মারণ ভাইরাস পৃথিবী থেকে কবে বিদায় নেবে তা নিয়ে মুখ খুললো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'হু'।
- FB
- TW
- Linkdin
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস জানালেন, তাঁর আশা, দু’বছরের মধ্যেই বিদায় নেবে করোনাভাইরাস।
তবে এর কোনও নির্দিষ্ট কারণ দেখাননি হু-প্রধান। জানিয়েছেন, ১৯১৮ সালে যখন স্প্যানিশ ফ্লু এসেছিল, সেটি দু’বছর থেকেছিল। এ বারেও তেমনই হবে বলে তাঁর আশা।
গত বছর ডিসেম্বরে প্রথমবার ইউহানে মারণ করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। তারপর থেকে তা গ্রাস করে গোটা বিশ্বকে। স্তব্ধ হয়ে যায় জনজীবন।
চিন, ইতালি, স্পেন, ব্রিটেন, রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারত, আমেরিকা–একের পর এক করোনার গ্রাসে এসেছে। লাফিয়ে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। অব্যাহত মৃত্যুমিছিলও। এই পরিস্থিতিতে ‘হু’ মনে করছে, মারণ এই ভাইরাসের প্রকোপ আগামী দু’বছরে কমবে ।
‘হু’ প্রধানের কথায়, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জনঘনত্ব এবং জনসংযোগ অনেক বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। একজন থেকে আরেকজনের শরীরে মুহূর্তে ভাইরাসের প্রবেশ ঘটছে। তবে আমাদের কাছেও প্রযুক্তি এবং যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। যা আমাদের এই সংক্রমণকে রুখতে অবশ্যই সাহায্য করবে। আগামী দু’বছরের মধ্যেই সংক্রমণ কমে যাবে।’’
গেব্রিয়েসাস কথায়, 'করোনা ভাইরাস অতিমারি হল একটি শতাব্দীর স্বাস্থ্য সঙ্কট৷ ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু-এর চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার কারণ গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়ন৷ কিন্তু বর্তমানে এই সংক্রমণ রোখার প্রযুক্তি রয়েছে, ১০০ বছর আগে যা ছিল না৷'
হু-এর জরুরি স্বাস্থ্য সঙ্কটের প্রধান চিকিত্সক মাইকেল রায়ান জানিয়েছেন, ১৯১৮ সালের ফ্লু-এর তিনটি ঢেউ পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল৷ এর মধ্যে ১৯১৮ সালে দ্বিতীয় ঢেউয়েই অতিমারি হয়৷ কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ তবে বর্তমান সময়ে কোভিড ১৯ সেই ধারা অনুসরণ করবে না৷
১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু-এ মাত্র দু বছরে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছিল ৫ কোটি মানুষের৷ ৫০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল৷
এদিকে করোনায় মৃত্যু তালিকার এখনও শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। ৩৩ কোটি মানুষের বাস এই দেশে ইতিমধ্যে ১ লক্ষ ৭৭ হাজারেরও বেশি মারা গিয়েছেন কোভিড আক্রান্ত হয়ে।
ক্রমশই খারাপ হচ্ছে লাতিন আমেরিকার পরিস্থিতি। করোনায় মৃত্যু আড়াই লক্ষ ছাড়িয়েছে এই মহাদেশে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। গোটা বিশ্বের নিরিখে আমেরিকার ঠিক পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সাম্বার দেশ। জাইর বোলসোনারোর দেশে মারা গিয়েছেন ১ লক্ষ ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
তবে মৃত্যুতে আগেই রেকর্ড গড়েছিল ব্রাজিল। গত সপ্তাহে এক দিনে ৩ হাজার জনেরও বেশি মারা গিয়েছেন ব্রাজিলে। পেরু, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনাতেও সংক্রমণ মারাত্মক ভাবে বাড়ছে। মৃত্যু-সংখ্যার নিরিখে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মেক্সিকো। ৫৯ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এই দেশে।
ইউরোপের পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভাল। কিন্তু বিপদ এখনও কাটেনি জানিয়ে সতর্ক করেছে হু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আধিকারিক হান্স ক্লুগ জানান, অতিমারির উপকেন্দ্র এখন দুই আমেরিকার দিকে সরে গিয়েছে। কিন্তু তাতেও দৈনিক অন্তত ২৬ হাজার সংক্রমণের খবর মিলছে ইউরোপ থেকে।
কোভিড-১৯ হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে ওঠা ভারতীয়, দক্ষিণ এশীয়দের কাছে প্লাজ়মা দান করার আবেদন জানাল ব্রিটেন সরকার। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ বছরের শেষে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়বে ব্রিটেনে। তার আগে পরিস্থিতি সামলানোর মতো ব্যবস্থা করে রাখছে সে দেশের সরকার।
ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের দাবি, শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় দক্ষিণ এশীয়দের শরীরে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। তাই করোনা যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে প্রভূত অ্যান্টিবডি-মিশ্রিত প্লাজ়মা মজুত করে রাখছেন তাঁরা।
সংক্রমিতের সংখ্যা অনুযায়ী চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাশিয়া। আক্রান্ত ৯ লক্ষের বেশি। অথচ মৃতের সংখ্যা অনুযায়ী পুতিনের দেশ প্রথম দশেও নেই। এই পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ঘোষণা করেন, তাঁদের ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে গিয়েছে। যদিও জানা যায়, ভ্যাকসিনটির তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি। শুক্রবার রুশ প্রশাসন জানিয়েছে, সেই তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে আগামী সপ্তাহে। তাতে অংশ নেবেন ৪০ হাজার মানুষ।