- Home
- World News
- International News
- রাশিয়াতেই আছে বিশ্বের বৃহত্তম মিস্টি জলের হ্রদ - ৩ কোটি বছরের পুরোনো, লুকিয়ে অনেক রহস্য
রাশিয়াতেই আছে বিশ্বের বৃহত্তম মিস্টি জলের হ্রদ - ৩ কোটি বছরের পুরোনো, লুকিয়ে অনেক রহস্য
- FB
- TW
- Linkdin
বিশ্বজুড়ে এমন ২০ টি হ্রদ রয়েছে যেগুলির বয়স ১০ লক্ষ বছরেরও বেশি। এর মধ্যে অন্যতম হল রাশিয়ার বৈকাল হ্রদ। এটি আড়াই থেকে তিন কোটি বছরের পুরানো। এটিই বিশ্বের প্রাচীনতম হ্রদ।
শুধু তাই নয়, বিশ্বের গভীরতম (World's Deepest Lake) এবং বৃহত্তম (World's Largest Lake) মিস্টি জলের হ্রদও বটে। সর্বোচ্চ গভীরতা ১৬৪২ ফুট এবং আয়তন ৩১ হাজার বর্গ কিলোমিটারেও বেশি! আগেই বলা হয়েছে, বেলজিয়াম দেশটির থেকেও আকৃতিতে বড় এই হ্রদ।
প্রায় সকলেই জানেন আমাদের গ্রহ, মানে পৃথিবীর একভাগ স্থল, আর বাকি তিনভাগই জল। তবে, অনেকেরই জানা নেই, পৃথিবীর এই বিশাল জলভাগের মধ্যে ৯৭ শতাংশই সমুদ্র এবং মহাসাগরে রয়েছে। অর্থাৎ, লবণাক্ত এবং পানের অনুপযুক্ত। বাকি মাত্র ৩ শতাংশ জল পানযোগ্য।
এর মধ্যে ২.৪ শতাংশ এই পানীয় জলই আবার জমাট বেঁধে আছে হিমবাহ এবং উত্তর-দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে। মাত্র ০.৬ শতাংশ রয়েছে নদী, হ্রদ ও পুকুরে - যা আমরা ব্যবহার করতে পারি। বিশ্বের এই ব্যবহারযোগ্য পানীয় জলের প্রায় ২২-২৩ শতাংশই রয়েছে এই বৈকাল হ্রদে, সব মিলিয়ে সাড়ে ২৩ হাজার ঘন কিলোমিটারেও বেশি। এর থেকেই বোঝা যায়, বৈকাল হ্রদের বিশালতা।
রাশিয়ায় দক্ষিণ সাইবেরিয়ায় (Southern Siberia) অবস্থিত অবস্থিত এই বৈকাল হ্রদ। একে আগে রাশিয়ানরা হ্রদ না বলে, বলত বৈকাল সমুদ্র। মানব সভ্যতার একেবারে আদি সময় থেকে এই হ্রদ আকর্ষণ করেছে মানুষকে। শোনা যায়, স্বয়ং যিশু খ্রীষ্টও (Jusus Christ) নাকি এই হ্রদ এলাকায় ভ্রমণ করেছিলেন। বহু রুশ লোক সঙ্গীত ও লোককথাতেও এই হ্রদের কথা রয়েছে।
জীব বৈচিত্রে (Biodiversity) ভরপুর এই হ্রদ। হাজারের বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ এবং আড়াই হাজারের বেশি প্রাণীর আবাসস্থল। তবে বিজ্ঞানীরা বলেন, আসল সংখ্যাটা দুই ক্ষেত্রেই অনেকটাই বেশি। এদের মধ্যে এমন বেশ কিছু প্রাণী রয়েছে, যাদের বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। বহু প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৩৬ রকমের পাখি, যাদের মধ্যে ২৯ টি প্রজাতি হ্রদে সাঁতার কাটে, বহু প্রজাতির মাছ, যার মধ্যে ৬৫ টি শুধুমাত্র এই হ্রদের জলেই পাওয়া যায়।
এটি বুরিয়াত উপজাতির (Buryat Tribe) আবাসস্থলও বটে। হ্রদের পূর্ব দিকে তাদের বাস। যেখানে শীতকালে গড় তাপমাত্রা নেমে যায় -১৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে আবার, গরমকালে বেড়ে হয়ে যায় ১৪ ডিগ্রি। এই সাইবেরিয়ান উপজাতি, মূলত ছাগল, উট, গবাদি পশু, ভেড়া এবং ঘোড়া প্রতিপালন করে থাকে। ১৯৯৬ সালে বৈকাল হ্রদকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
এমনিতে এই হ্রদের জল খুব পরিষ্কার। এতটাই স্বচ্ছ যে অত্যন্ত গভীর হওয়া সত্ত্বেও জলের অনেক নীচ পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যায়। গ্রদের জলে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন মজুত রয়েছে। তবে, এর পাশাপাশি মিথেন গ্যাসও রয়েছে। যে গ্যাস গ্রিনহাউস প্রভাবের (Greenhouse Effect) জন্য দায়ী।
বিজ্ঞানীরা বলেন, হ্রদের জলে যে পরিমাণ মিথেন গ্যাস জমে রয়েছে, তা বায়ুমণ্ডলে নির্গত হলে, গোটা পৃথিবীই হুমকির মুখে পড়ত। কিন্তু, বৈকাল হ্রদের বিশেষত্ব হল হ্রদটি বরফ হয়ে গেলেও এখানকার জল বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস ছড়াতে দেয় না। হ্রদের জমাট জলের ভিতর বুদবুদ আকারে মিথেন গ্যাস জমে থাকতে দেখা যায়।
দীর্ঘদিন ধরেই পরিবেশবীদরা, বৈকাল হ্রদে দূষণের (Pollution) প্রভাব নিয়ে সতর্ক করছেন। ইতিমধ্যেই হ্রদের জল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে একান্ত হ্রদের জলে দেখতে পাওয়া বেশ কিছু মাছ, উদ্ভিদ। অন্যদিকে, ক্রমাগত বাড়ছে শেত্তলা। দাবি করা হয়, ২০১০ সাল থেকে, ১৫,০০০ মেট্রিক টনেরও বেশি বিষাক্ত বর্জ্য হ্রদে প্রবাহিত হতে দেখা গিয়েছে।