- Home
- World News
- International News
- কাজ করতেন মাছের বাজারে, কৃষকের ছেলের হাতেই এবার বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী অর্থনীতির স্টিয়ারিং
কাজ করতেন মাছের বাজারে, কৃষকের ছেলের হাতেই এবার বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী অর্থনীতির স্টিয়ারিং
হয়ে গেল একটা যুগের অবসান। দীর্ঘ ৮ বছর পর নতুন প্রধানমন্ত্রী পেল জাপান। সংসদীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে শিনজো আবের উত্তরসূরী হলেন ইয়োশিহিদে সুগা। বুধবারই সরকারি ভাবে সুগার নাম জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হল।
- FB
- TW
- Linkdin
শরীর ভাল যাচ্ছে না। বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সেই কারণে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অবসর নিতে চাইছিলেন শিনজো আবে। পদত্যাগের আগে আবে জাপানবাসীর উদ্দেশ্যে জানিয়েছিলেন, দেশের মানুষের জন্য সঠিকভাবে সেবা করতে পারছেন না বলেই প্রধানমন্ত্রীর পদে আর তিনি থাকতে চাইছেন না। পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন নিজেই। জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আবে।
সোমবার আবে প্রশাসনের মন্ত্রী পরিষদের মুখ্য সচিব ৭১ বছরের ইয়োশিহিদে সুগা জাপানের নতুন নেতা নির্বাচিত হন। শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত সুগা। বুধবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হল।
সংসদ সদস্যদের ভোটে জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন ইয়োশিহিদে সুগা। গত সোমবারই জাপানে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) অভ্যন্তরীণ ভোটে জয়ী হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন ৭১ বছরের সুগা । বুধবার সংসদের নিম্নকক্ষের ভোটে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হওয়ায় শেষ বাধাটুকুও দূর হলো তাঁর।
এদিন জাপানের নিম্নকক্ষ ডায়েটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোটে সহজে জিতে যান সুগা। ৪৬২ ভোটের মধ্যে ৩১৪টি গেছে তাঁর পক্ষে। নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ মিলিয়ে মোট ৫৩৪ ভোটের মধ্যে ৩৭৭ ভোটে জয়ী হন সুগা।
তবে ক্ষমতায় চূড়ায় পৌঁছানোর এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথ মোটেও সুগম ছিল না ইয়োশিহিদে সুগার জন্য। জাপানের আকিতা অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় এক কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েছেন তিনি। বাবা ছিলেন স্ট্রবেরি চাষি। ১৯৪৮ সালে জন্ম নেন তিনি।
হাইস্কুল পার করেই রাজধানী টোকিওতে পাড়ি জমান ইয়োশিহিদে সুগা। সেখানে পড়াশোনার খরচ জোগাতে কার্ডবোর্ড ফ্যাক্টরি ও মাছের বাজারে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে টোকিও হোসেই নামক এক নৈশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হন। গ্রাজুয়েশন শেষে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন সুগা, তবে সেখানে মন টেকেনি। বিশ্বকে বদলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে পরে যোগ দেন রাজনীতিতে।
আশির দশকের শেষ দিকে ইয়োকোহামার সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ইয়োশিহিদে সুগা। সেসময় রাজনৈতিক যোগাযোগ বা অভিজ্ঞতা কোনোটাই খুব বেশি ছিল না তার। শুধু ছিল দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মনোবল। স্বশরীরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তিনি। এভাবে দৈনিক ৩০০ বাড়ি করে মোট ৩০ হাজার বাড়ির দরজায় নিজে হাজির হয়েছিলেন সুগা। এলডিপির তথ্যমতে, ওই নির্বাচনী প্রচারে অন্তত ছয় জোড়া জুতা ক্ষয় হয়েছিল এই নেতার।
প্রথম নির্বাচনে জেতার সেই দৃঢ় চেষ্টা আর পরিশ্রমের অভ্যাস আর কখনোই বদলায়নি ইয়োশিহিদে সুগার। প্রকাশ্যে না এসেও বহু আলোচিত চুক্তির কারিগর তিনি। হয়ে উঠেছেন জাপানের অন্যতম সফল রাজনৈতিক নেতা ও আদর্শ। একমাত্র সুগাই শিনজো আবের যোগ্য উত্তরসূরী হতে পারেন বলে মনে করছেন জাপানের রাজনীতিবিদরা।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুগা শিনজো আবের রেখে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীত্বের ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ পূরণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীত্বের পাশাপাশি সুগা এলডিপির নেতৃত্বও দেবেন। সুগা ১৯৮৬ সালে এলডিপিতে যোগদান করেন।
বুধবার বিকেলেই নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করতে পারেন ইয়োশিহিদে সুগা। আবে সরকারের অনেক নেতাই তার মন্ত্রিসভায় থেকে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবের দেখানো পথেই তিনি চলবেন বলে ঘনিষ্ট মহলে জানিয়েছেন সুগা । নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাপানে আমলাতান্ত্রিক সংস্কার, ডিজিটালাইজেশন, কৃষি ও পর্যটনে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে নজর দিতে চেয়েছেন সুগা। এছাড়া জাপানের অর্থনীতি বিষয়ে শিনজো আবের ত্রিমাত্রিক কৌশল, যা আবেনোমিক্স নামে পরিচিত, সেটিও এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগাকে অভিনন্দন জানালেন নরেন্দ্র মোদী। ভারত-জাপান একসঙ্গে আগামিদিনে বিশেষ কৌশল ও বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বকে নয়া উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘বিশেষ কৌশলগত ও বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বকে যৌথভাবে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে জাপান ও ভারত। আমি এই প্রত্যাশায় রয়েছি।’’