- Home
- West Bengal
- Kolkata
- ছোট্ট 'তুলি' টানেই নতুন পথ চলা, অসহায়ের মুখে খাবার তুলে দিতে 'যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন'
ছোট্ট 'তুলি' টানেই নতুন পথ চলা, অসহায়ের মুখে খাবার তুলে দিতে 'যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন'
করোনা পরিস্থিতিতে সবাই যখন রোজগার হারিয়েছে। খাবার কেনারও অর্থটুকুও নেই। তাঁদের মুখে হাসি ফোটাল যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন। পেট ভরে ভাত খাইয়ে, ক্ষিদের আগুন বুজিয়ে দিল তাঁরা। আর এমনই এক কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয় দুঃস্থ পরিবারের মেয়ে তুলির সঙ্গে। যার নিস্পাপ মুখ দেখে ভালবেসে নিজের করে নেয় যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন।
লকডাউনের দিনে রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু যাদবপুরে 'শ্রমজীবী ক্যান্টিন যাচ্ছি' বললে সাধারণত পুলিশ এখানে কিছু করে না। সেকারণেই বড় রাস্তা ধরে না এসে ভেতরের গলিপথ ধরে রিক্সাচালক রা আসেন, দূরদূরান্ত থেকে। নিঃশব্দে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নেন, চলে যান। সেইরকম ভাবেই পরিচয় ছোট্ট 'তুলি'র সঙ্গেও। জানাল যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন।
- FB
- TW
- Linkdin
লকডাউনের দিনে রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু যাদবপুরে 'শ্রমজীবী ক্যান্টিন যাচ্ছি' বললে সাধারণত পুলিশ এখানে কিছু করে না। সেকারণেই বড় রাস্তা ধরে না এসে ভেতরের গলিপথ ধরে রিক্সাচালক রা আসেন, দূরদূরান্ত থেকে। নিঃশব্দে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নেন, চলে যান। সেইরকম ভাবেই 'ওরা' আসে। 'ছোট্ট মেয়ে 'তুলি', এর আগেও লকডাউনের দিনগুলোতেও কে আসতে দেখেছি আমাদের যাদবপুর রান্নাঘরে। এক বয়স্ক মানুষ রিক্সা করে ও কে নিয়ে আসে। মেয়েটি রিক্সাতেই বসে থাকে। রিক্সাচালক লাইনে দাঁড়িয়ে প্যাকেট নেন, তারপর আবার ওরা চলে যায়'। জানাল যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন।
ছোট্ট মেয়ে 'তুলি'র কথায় অবাক যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন। জানায়, 'আজ প্যাকেট নেওয়ার পর দেখলাম ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গে বয়স্ক মানুষটির বচসা বেঁধেছে। কোন একটি বিষয় মেয়েটি কিছুতেই বুঝতে চাইছে না। মানুষটিও ক্রমে ধৈর্য হারাচ্ছেন। শেষমেশ মেয়েটিকে প্রায় থাপ্পর মারবার উপক্রম। তাড়াতাড়ি ছোট্ট মেয়েটিকে কাছে ডাকতেই, ও এসে বললো প্রথমেই 'কালকে তোমরা ভাত করবে তো?'প্রথমে অবাক হলেও পরে বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করি 'কেন, তোমার খিচুড়ি ভালো লাগে না?' ছোট্ট মেয়েটি প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় জানায় 'না, বিচ্ছিরি লাগে!'।
তুলির বাবা দুটি করে প্যাকেট নিয়ে যায়। ওরা তিনজনে ভাগ করে খায়। একদিন সকালে কোনও খাবারই জুটল না ওদের। 'বড্ড খিদে পেয়েছে, কিন্তু খাব কি?'তুলি র বাবাও অসহায়।ভাত পাবেন কোত্থেকে, পয়সাও যে নেই তেমন। 'দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের রাঁধুনি বনমালী দা, আরতি দি সব শুনছিলেন। নিজেদের জন্য রান্না করা ভাত, আর ফ্রিজে রাখা মুরগির মাংস গরম করে চট করে তৈরি হয়ে গেল তুলির প্যাকেট। রাজদ্বীপ, সৌরভ, কৌশিক, তীর্থঙ্কর, মানস, অঞ্জন চক্রবর্তী, মিন্টা, বাপী-প্রায় সকলেই কিছুক্ষণের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল', জানায় যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন।
'একলহমায় চোখে ভেসে উঠলো তিতির মুখ। বাড়ীতে মায়ের রান্না পছন্দ না হলে ঠিক এমনই হয়ে ওঠে মেয়ের মুখখানি। সদস্য জানান নিজের মেয়ের কথা। বলেন, 'তারপর আমাদের গল্প শুরু হল। জানলাম ওর নাম 'তুলি'। তবে তুলি নিজের আরও একটা নাম বলল বটে, সেটা কিছুতেই বুঝে পারা গেল না' জানান যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিনের সদস্য। বয়স্ক রিক্সা চালক আসলে তুলির বাবা। বাস্তবে হয়ত সত্যিই অতটা বয়স্ক নন। দারিদ্র্য-অভাব-দুশ্চিন্তা, মানুষকে বুড়িয়ে দেয় অনেকসময়ই। তুলির মা থাকে যাদবপুর স্টেশনে। তুলি রোজ নিজে রিক্সাতেই ঘুমিয়ে পড়ে ।
মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে তুলির হাতে 'গরম ভাত'। কি যে একটা অনাবিল হাসি হাসলো তুলি। কোন ক্যামেরায় তা ধরা যাবে না।'এইসব রান্নাঘর চালানো, ক্যান্টিন চালানো কমিউনিস্ট পার্টির কাজ নাকি, ভোট আসবে এতে, বিপ্লব হবে, শুধুই সময় আর পয়সা নষ্ট।' বাতাসে হাজার প্রশ্ন ঘুরে বেড়াক-সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া যাবে সময় মত সার্থকতার সঙ্গে খুশি মনে জানায় যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিন।
'আজ আমি বা আমরা 'তুলি'র সেই তৃপ্তির আশ্চর্য এক আলাদিনের প্রদীপের মতো 'গরম ভাত' হাতে পাওয়ার আনন্দে মশগুল। জানি না আবার কবে দেখা হবে ওর সঙ্গে
।দেখা হলে বলতাম, শুধু আজ নয় আগামী প্রত্যেকটা দিন ওর জন্য ভাতের ব্যবস্থা থাকবে আমাদের যৌথ রান্নাঘরে। আমরা যতদিন খেতে পাব, ওর জন্য অন্তত একবেলা গরম ভাতের ব্যবস্থা থাকবে আমাদের যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিনে', চূড়ান্ত বাস্তবতার সামনে এসে আবেগঘন, গলা ধরে আসল সদস্যের।