- Home
- West Bengal
- Kolkata
- তৃণমূল-বিজেপির 'কেন্দ্রবিন্দুতে' শুভেন্দু, বাংলার রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব কোথায়
তৃণমূল-বিজেপির 'কেন্দ্রবিন্দুতে' শুভেন্দু, বাংলার রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব কোথায়
শিয়রে একুশের বিধানসভা ভোট। চলছে আক্রমণ পালটা আক্রমণ। আর এই সময়েই রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। পাড়ার ঠেক থেকে চায়ের দোকান। সর্বত্রই আলোচনায় একজনই। তিনি শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়য়ের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এই অবস্থায় তাঁকে দলে স্বাগত জানাচ্ছে বিজেপি। বাংলার রাজনীতিতে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন শুভেন্দু?
- FB
- TW
- Linkdin
২০০৭ সালের আগে থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার গঠনের পর দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে সামলেছেন তিনি। পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনৈতিক ঘরানার ছেলে শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সনামধন্য বলে পরিচিত ছিলেন।
বেশ কয়েক মাস ধরেই তিনি দল থেকে অনেক দূরে। তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে আগেই অব্যাহতি দিয়েছিলেন। তারপর, ধীরে ধীরে ইস্তফা দেন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে। সর্বশেষ, মন্ত্রিত্ব পদও ছেড়ে দিয়েছেন শুভেন্দু।
অবশ্য তার আগে থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সমর্থনে পোস্টার পড়েছে। নিজের গড় পূর্ব মেদিনীপুরে প্রথমবার 'জনসেবক' বলে আত্মপ্রকাশ করেন শুভেন্দু। কোনও রাজনৈতিক ব্যানার ছাড়াই পোস্টার পড়ে। বিভিন্ন অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে হাজির হয়েছেন 'আমরা দাদার অনুগামী'দের আমন্ত্রণে।
সেই তখন থেকেই শুভেন্দু মন বোঝার চেষ্টা করে তৃণমূল কংগ্রেস। বর্ষীয়ান দলীয় সাংসদ সৌগত রায় তাঁর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন। তাঁর অভাব অভিযোগ যা আছে, তা পূরণ করা হবে বলে আশ্বাসও দেন। কিন্তু, শুভেন্দু তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেননি।
১ ডিসেম্বর তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়, ভোট কৌশুলী প্রশান্ত কিশোরের উপস্থিতিতে সাংসদ সৌগত রায়ের মধ্যস্থতায় শুভেন্দুর সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠকে আলোচনায় সমাধান সূত্র বেরোয়। প্রকাশ্য়ে তা জানিয়েও দেন সৌগত রায়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শুভেন্দু সৌগতকে জানিয়ে দেন, ''মাফ করবেন। একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়''।
বুধবার শুভেন্দুর এই সিদ্ধান্তে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। তাহলে শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক অবস্থান কী? কোন দলে যাচ্ছেন শুভেন্দু? তাঁর অসন্তোষের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই তাঁকে দলে স্বাগত জানাচ্ছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বরা। কৈলাস থেকে মুকুল। প্রত্যেকেই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারীর গুরুত্ব কোথায়? একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু কী হাতিয়ার আছে? যে কারণে শাসক দল তৃণমূল শুভেন্দুকে হাতছাড়া করতে চায় না। অন্যদিকে, বিজেপিও তাঁকে বারবার নিজেদের দলে স্বাগত জানাচ্ছে। কারণটা কী ?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, বাংলায় ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে শুভেন্দুর নিজের দখলে রয়েছে ১১০টি আসন। তৃণমূল স্তর থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত শুভেন্দুর অনুগামীরা রয়েছেন। তাছাড়াও, তিনি নিজেও একজন ভাল সংগঠক।
২০১১ সালে তৃণমূল সরকার গঠন করার পর, শুভেন্দুকে সাংগঠনিক কাজে লাগিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। উত্তর থেকে দক্ষিণ। বাংলার অধিকাংশ জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু। আর সেই জেলার সংগঠনগুলি শুভেন্দুর হাতের মুঠোয় রয়েছে।
জঙ্গলমহলের চার জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া। পশ্চিমাঞ্চলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থেকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন শুভেন্দু। এছাড়াও নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহের জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন শুভেন্দু।
২০১৯-এর এই জেলাগুলির ১৩টি লোকসভা কেন্দ্রে বিপুল পরিমাণে বিপর্যয় হয়েছিল তৃণমূল। সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে উথ্থান হয়েছিল বিজেপির। অন্যদিকে, হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় শুভেন্দুর জনপ্রিয়তার ধারে কাছে কোনও জনপ্রতিনিধি।
জঙ্গলমহলের চার জেলা ছাড়াও, মালদহ ও মুর্শিদাবাদে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন তার সুফলও পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এর ফলে, বাংলার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ১১০টি আসনে শুভেন্দু তাঁর শিকড় শক্ত রেখেছেন।
রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে সম্প্রতি জলঘোলা হলেও, গত ছয় মাস আগে থেকে তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থান থেকে নিজেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন শুভেন্দু। রাজনৈতিকমহলের মত, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তাঁর ভাইপো অভিষেককে জায়গা করে দিতেই শুভেন্দু নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
অন্যদিকে, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলেও শুভেন্দু অধিকারীর জনপ্রিয়তার ধারে কাছে কেউ নেই। হলদিয়া বন্দর ও শিল্পাঞ্চলে শুভেন্দুর সাংগঠনিক দক্ষতার জুড়ি মেলা ভার। কার্যত গোটা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে শুভেন্দু অধিকারীর আধিপত্য ছড়িয়ে রয়েছে।
শুভেন্দু তৃণমূল ত্যাগ করলে বিজেপিতে আসতে পারেন বলে আশাবাদী গেরুয়া শিবির। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত, মুকুল রায় যখন বিজেপিতে গিয়েছিলেন। তখন যে পরিমাণ নেতা মন্ত্রী নিয়ে গিয়েছিলেন। তারচেয়েও বেশি সংখ্যক নেতা মন্ত্রী শুভেন্দুর হাতের মুঠোর রয়েছে। আর এই জায়গাতেই আশঙ্কা করছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এত কিছু রাজনৈতিক দোলাচলের মধ্যে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেননি শুভেন্দু। আগামী ৭ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। তাকে ঘিরেও জল্পনা শুরু হয়েছে। তারপরই, শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন বলে সূত্রের খবর।