- Home
- World News
- Pakistan News
- ৯০ বছরেও গর্ভবতী, ১২০ বছর বাঁচে এখানকার মানুষ - কারাকোরামে লুকিয়ে রহস্যময় উপত্যকা, দেখুন
৯০ বছরেও গর্ভবতী, ১২০ বছর বাঁচে এখানকার মানুষ - কারাকোরামে লুকিয়ে রহস্যময় উপত্যকা, দেখুন
- FB
- TW
- Linkdin
হিমালয় ও কারাকোরাম - বিশ্বের দুই বৃহত্তম পর্বতমালার মাঝে, বাকি বিশ্বের থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এই উপত্যকাটির নাম হুনজা উপত্যকা। আর এখানে বসবাসকারী সম্প্রদায় পরিচিত হুনজা সম্প্রদায় হিসাবে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা এই অঞ্চলে বসবাস করছেন। কিছু কিছু গ্রাম তো হাজার বছরেরও পুরোনো। এই সুউচ্চ পার্বত্য উপত্যকাটি অত্যন্ত উর্বর। তবে এই উপত্যকা সারা বিশ্বে পরিচিত, হুনজা সম্প্রদায়ের দীর্ঘ রোগমুক্ত জীবনের কারণে।
হুনজা সম্প্রদায়ের মানুষ প্রকৃতপক্ষে কতদিন বেঁচে থাকেন, তা সত্যিকারের কেউ জানে না। চিকিত্সাগত পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের বয়স অনুমান করা হয়েছে। এই কারণে নথিভুক্ত সর্বোচ্চ বয়সের উপর বিশেষ ফোকাস করতে চান না গবেষকরা। তবে, তাদের গড় বয়স নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১২০ বছর। যা, বিশ্বের যেকোনও দেশের যেকোনও সম্প্রদায়ের চেয়ে বেশি।
শুধু তাই নয়, হুনজা জনজাতি নিয়ে যে সমস্ত গবেষণা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, বয়স ১০০ পার করলেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ একেবারে ফিট থাকেন। সেই সঙ্গে, প্রাণশক্তিতে ভরপুর এবং কার্যত সকল রোগ থেকে মুক্ত। বর্তমান সময়ের জলবায়ু পরিবর্তনেরও কোনও প্রভাব এর উপর পড়েনি। হুনজা সম্প্রদায়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটানো গবেষক, ডক্টর রবার্ট ম্যাক্রিসন জানিয়েছেন, এমন একজনও নেই যাঁর ক্যান্সার, পেটের আলসার, অ্যাপেনডিসাইটিস বা অন্য কোনও রোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে এখানকার ৬০ থেকে ৯০ বছর বয়সী মহিলারাও গর্ভবতী হতে পারেন।
ডক্টর রবার্ট ম্যাক্রিসনের মতো, বেশ কয়েক বছর হুনজা উপত্যকায় ছিলেন আরেকজন গবেষক, ডক্টর হেনরি কোয়ান্ডাও। তাঁর মতে হুনজাদের দীর্ঘায়ুর রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে সেখানকার হিমবাহের জলে। ওই জলই হুনজারা পান করেন এবং স্নান ও অন্যান্য কাজের জন্য ব্যবহার করেন। কোয়ান্ডার গবেষণায় জানা গিয়েছিল, ওই মিষ্টি জল প্রাকৃতিকভাবে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদির মতো খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এই খনিজ পদার্থগুলি শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এটা হুনজাদের বার্ধক্য না হওয়ার অন্যতম কারণ।
তবে শুধু জল নয়, হুনজাদের দীর্ঘায়ুর পিছনে তাদের খাদ্যাভ্যাসেরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল বলে এই উপত্যকায় খুব বেশি পশুপাখি দেখা যায় না। আর তারা সভ্যতা থেকে এতটাই বিচ্ছিন্ন, যে খাবার রান্না করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানী সংগ্রহও অসম্ভব। তাই হুনজারা বেশিরভাগই উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্য গ্রহণ করে। ডায়েটে প্রোটিনের মাত্রা কমই থাকে। প্রধানত কাঁচা শাকসবজি এবং ফল খেয়ে থাকে তারা। তারা যা পারে চাষ করে এবং বাকি খাদ্য সংগ্রহ করে। অ্যাপ্রিকট, চেরি, আঙ্গুর, আপেল, বরই, পীচ - এইসবই হুনজারা চাষ করে থাকে। এছাড়াও, তারা গম, বার্লি, বাজরার মতো প্রচুর শস্য খায়।
জল ও খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি, তাদের পরিশ্রমী জীবনশৈলীও তাদের দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের পিছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন গবেষকরা। হুনজা উপত্যকা একটি অত্যন্ত রুক্ষ পাহাড়ি ভূখণ্ড। হুনজাদের গ্রামগুলি একটি অপরটির থেকেও অবিশ্বাস্যভাবে বিচ্ছিন্ন এবং প্রায় প্রত্যেকটিই একেবারে খাড়া পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত। রুক্ষ, সংরকীর্ণ এবং খাড়া শৈলশিরায় চলাচল করা ছাড়া হুনজাদের আর কোনও বিকল্প নেই। চাষযোগ্য জমিও, গ্রাম থেকে ঘণ্টা দুয়েক দূরে হয়। দৈনিক এই শারীরিক কসরতই তাদের সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখে বলে মনে করেন গবেষকরা।
দীর্ঘায়ু এবং রোগমুক্ত হওার পাশাপাশি, গবেষকরা হুনজা সম্প্রদায়ের মানুষদের, পৃথিবীর সুখিতম মানুষ বলেও দাবি করেছেন। তাঁদের মতে, হুনজাদের জীবনের প্রতি একটি নির্দিষ্ট আবেগ এবং উদ্দীপনা রয়েছে। হুনজা উপজাতির সপ্রতিভতা, বুদ্ধিমত্তা এবং শারীরিক শক্তিরও প্রশংসা করেছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে এই জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে ইতিবাচকতা আসে সম্ভবত তাঁদের প্রতিদিনের কঠোর শারীরিক কসরত এবং সহজ সরল জীবনযাত্রার কারণে।
হুনজা উপত্যকার মতো প্রকৃতির কোলে থাকা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। সেখানকার অমৃত-সম হিমবাহের জলও ঘরে ঘরে মিলবে না। তবে, তারপরও দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন পেতে হুনজাদের জীবন যাপন থেকে আমরাও অন্তত তিনটি বিষয় অনুসরণ করতে পারি -
- কাঁচা ফল ও শাক-সবজি খাওয়া
- দৈনিক শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করা
- জীবন সম্পর্কে সবসময় একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা