- Home
- World News
- International News
- নির্বাচনী দামামার মাঝেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি, ফ্লয়েডের পর ব্লেককে নিয়ে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে আমেরিকা
নির্বাচনী দামামার মাঝেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি, ফ্লয়েডের পর ব্লেককে নিয়ে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে আমেরিকা
- FB
- TW
- Linkdin
শ্বেতাঙ্গ পুলিসের হাঁটুর চাপে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর প্রতিবাদ দেখেছিল গোটা বিশ্ব। মিনিয়াপোলিস থেকে আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল সারা পৃথিবীতে। ফের জেকব ব্লেকের ঘটনায় ফুলকির আকার নিল সেই আগুন।
রবিবার আমেরিকার উইসকনসিনের কেনোশা শহরে এই জেকব ব্লেককে অকারণে গুলি করে পুলিশ। রাস্তার ধারে পার্ক করে রাখা তাঁর এসইউভি’র মধ্যে তিন সন্তানকে রেখে, কোনো একটা প্রয়োজনে গিয়েছিলেন ব্লেক। ফিরে এসে গাড়ির দরজা খুলে চালকের আসনে বসার সময়, পুলিশ পেছন থেকে তাঁকে গুলি চালিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কেউ একজন গোটা ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেন। ভিডিওটি ভাইরাল হতেই সোমবার থেকে ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে আমেরিকা। কেনোশা শহরে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।
পুলিশ পেছন থেকে গুলি করায়, গুলি লাগে ব্লেকের মেরুদণ্ডে। টুকরো টুকরো হয়ে যায় মেরুদণ্ড। তাই অস্ত্রোপচারের পরেও শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে পারবেন না কেনোশা শহরের এই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন ‘কোনো মিরাকেল না হলে’ আর হাঁটাচলা করতে পারবেন না কৃষ্ণাঙ্গ জেকব ব্লেক। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের গুলিতে পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর অস্ত্রোপচার হলেও আশার আলো এক্কেবারেই দেখা যায়নি।
জেকব ব্লেকের পারিবারিক আইনজীবী বলেন, “ব্লেকের শরীর প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে। উনি যদি আবার হাঁটতে পারেন, সেটা হবে ওর জন্য মিরাকল।”
ব্লেকের বাবা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলেকে পরপর সাতটি নয় আটটি গুলি করেছিল পুলিশ অফিসার। যদিও ঠিক ক’টি গুলি লেগেছে, তা নিয়ে ধন্দ আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা পরপর সাতটি গুলির শব্দ পেয়েছেন।
সম্প্রতি পুলিশের হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর জেরে একবার উত্তপ্ত হয়েছিল আমেরিকা। রবিবার রাতে আমেরিকার কেনোশা শহরের ঘটনা সেই নিভে আসা আগুন ঘৃতাহূতি দিয়েছে।
এক নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গের ওপর অ্যামেরিকার পুলিশের এই বর্ণবাদী হামলার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে কেনোশা। বিক্ষোভ অ্যামেরিকার অন্য শহরেও। তবে কেনোশার প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ থাকেনি। বেশ কিছু জায়গায় তা সহিংস হয়ে ওঠে। গোটা বারো সরকারি ভবনে আগুন ধরানো হয়। ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। প্রচুর দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে।
গভর্নর টনি এভার্স জরুরি অবস্থা জারি করে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেছেন। ন্যাশনাল গার্ডের সংখ্যাও দ্বিগুণ করা হয়েছে। এভার্স বলেছেন, ''আমরা কিছুতেই এই বর্ণবাদ ও অন্যায় বরদাস্ত করতে পারি না। কিন্তু একইসঙ্গে এই ধ্বংস ও ক্ষতির পথও সমর্থন করতে পারি না।''
কিন্তু মার্কিন পুলিশের কৃষ্ণাঙ্গ-নির্যাতনের জেরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শান্ত হওয়ান নাম নেই উইসকনসিন প্রদেশের কেনোশা শহরে। কার্ফুর তোয়াক্কা না-করেই পথে নেমেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। প্রতিবাদ মিছিল থেকেই পুলিশের দিকে উড়ে আসে, বাজি, বোতল। শুধু হাতাহাতি নয়, বিক্ষোভ দমনে পুলিশের বিরুদ্ধে দেদার লাঠিচার্জ ও প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানোর অভিযোগও উঠেছে।
ব্লেক যে ভালো নেই এবং তাঁর পক্ষাঘাত হয়েছে এই খবর জানার পর বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা আরো বেড়েছে। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, একটা গুলি তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে, অন্য গুলি পেটে লেগেছে। ফলে তাঁর লিভার, অন্ত্র ও পেটের অভ্যন্তরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর হাতেও গুলি লেগেছে।
এই ঘটনার পরই প্রথমে কেনোশা, তারপর লস এঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক, মিনেপোলিসে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। কার্ফু অগ্রাহ্য করে লোকে রাস্তায় নামেন। কেনোশায় গত দুই দিন ধরে যেখানে বিক্ষোভকারীরা জমায়েত হচ্ছেন, সেখানে লোহার বেড়া লাগানো হয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, প্রতিবাদ চলবে। তাঁদের প্রথম দাবি, ওই দুই পুলিশকে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। আর কালো মানুষদের ওপর অন্যায় বন্ধ করতে হবে।
তবে ব্লেকের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সকলে যেন শান্তি বজায় রাখেন। জেকব ব্লেকের মা জুলিয়া জ্যাকসনের আবেদন, ''আমি আজ যখন শহরের ভিতরে গেছি, তখন ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দেখেছি। জেকব যদি জানতে পারে, তাঁর ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে এরকম তাণ্ডব হয়েছে, তা হলে সে আদৌ খুশি হবে না। আমি সকলকে বলব, আত্মসমীক্ষা করুন। চেষ্টা করুন জেকব যাতে ন্যায় পায়। আমি প্রার্থনা করছি, জেকব যাতে ভালো হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে দেশের ক্ষতও যেন ভালো হয়ে যায়।''
সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, গুলির ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। এখনো পর্যন্ত কেন পুলিশ গুলি করল তা নিয়ে একটা কথাও বলা হয়নি। অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ব্লেকের বাবা অবশ্য বলেছেন, সরকারি তদন্তে তাঁর কোনো আস্থা নেই।
এদিকে মূলত শ্বেতাঙ্গদের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ঠিক করেছে, তাঁরা সম্পত্তি রক্ষা করবে। এই গোষ্ঠীার নাম আর্মড সিটিজেনস টু প্রোটেক্ট লাইভস অ্যান্ড প্রপার্টি। তাঁরা জানিয়েছে, সরকারি ভবন রক্ষা করা হবে। ভাঙচুর করতে দেয়া হবে না। কোমরে হ্যান্ডগান এহং হাতে এআর ১৫ অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে এই গোষ্ঠীর সদস্য কেভিন ম্যাথুসন জানিয়েছেন, তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে রক্ষা করবেন। কেউ কেউ বুঝতে পারেন না, সরকারি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে তার ভিতরে কেউ থাকলে তিনিও মারা যাবেন। অন্য ক্ষতি তো হবেই।