- Home
- World News
- International News
- করোনা-র বদলে শরীরকেই হামলা করছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বিপথগামী অনাক্রম্যতাই বাড়াচ্ছে বিপদ
করোনা-র বদলে শরীরকেই হামলা করছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বিপথগামী অনাক্রম্যতাই বাড়াচ্ছে বিপদ
কোভিড-১৯ জয়ী অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও পুরোপুরি শারীরিকভাবে সুস্থ হতে পারছেন না তাঁরা। এঁদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই একটি উদ্বেগজনক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করেছে আমেরিকার এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। করোনা প্রতিরোধে এখন ঘরে ঘরে অনাক্রম্যতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ খাদ্য গ্রহণ বা যোগ-ব্যায়াম চর্চা চলছে। অথচ এই গবেষকরা দাবি করছেন শরীরের এই অনাক্রম্যতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের সুস্থতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর সেইসব ক্ষেত্রে স্মরণ নিতে হচ্ছে লুপাস এবং রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগগুলির চিকিৎসার।
- FB
- TW
- Linkdin
গবেষণায় দেখা গিয়েছে গুরুতর সংক্রামিত কোভিড রোগীদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এক পর্যায়ে, 'অটোঅ্যান্টিবডি' নামে একটি অণু তৈরি করছে, যা ভাইরাসটিকে আক্রমণ করার পরিবর্তে, মানব কোষের জিনগত উপাদানগুলিকেই নিশানা করছে।
এই বিপথগামী অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া কোভিড-১৯'এর তীব্রতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে অনেক কোভিড রোগী যে প্রাথমিক অসুস্থতা সেরে যাওয়ার এবং ভাইরাসটি তাঁদের দেহ থেকে চলে যাওয়ার কয়েক মাস পরও বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন, তার মূল কারণ 'অটোঅ্যান্টিবডি'।
এই গবেষণা কোভিডজয়ী রোগীদের পরবর্তী চিকিত্সার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। লুপাস বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস-এর রোগীদের দেহে অটোঅ্যান্টিবডি সনাক্ত করার জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই গবেষণাটি স্বীকৃতি পেলে সেই পরীক্ষাগুলির মাধ্যমেই কোভিড জয়ীদের দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারা যাবে।
আটলান্টার এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজিস্ট ম্যাথিউ উডরুফ-এর নেতৃত্বে একদল গবেষক এই বিষয়টি প্রিপ্রিন্ট সার্ভার মেডিআরসিভ-এ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের গবেষণার ফলটি যথেষ্টই বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা। কারণ অন্যান্য ভাইরাল অসুখেও অনেক সময় অটোঅ্যান্টিবডি তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভাইরাল সংক্রমণের ফলে সংক্রামিত মানব কোষগুলি মারা যায়। কখনও কখনও কোষগুলির স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ার পরিবর্তে তারা সংক্রমণের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে ফুঁসে ওঠে। ভাইরাসের সাধারণ প্রতিক্রিয়ায়, বি কোষ হিসাবে পরিচিত কোষগুলি অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডি ভাইরাসের ভাইরাল আরএনএ-কে সনাক্ত করে এবং সেগুলির উপর হামলা করে। কিন্তু কিছু কিছু বি কোষ এর পরিবর্তে অটোঅ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা ভাইরাস-এর আরএনএ-র বদলে মানব কোষ-এর ডিএনএ-কে ধ্বংস করতে শুরু করে।
যা থেকে কোভিড-১৯ এর রোগীদের ক্ষেত্রেও অটোইমিউন ডিজিজ এবং অটোঅ্য়ান্টিবডি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। উড্রুফ এবং তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের কয়েকজনের দেহেও এমন অপরিশোধিত বি কোষ পাওয়া গিয়েছে। অটোইমিউন ডিসঅর্ডার নেই এমন ৫২ জন গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে অটোঅ্যান্টিবডিগুলি রোগীদের ডিএনএ-কে আক্রমণ করেছে।
ওই রোগীদের দেহে রিউম্যাটয়েড ফ্যাক্টর নামক একটি প্রোটিন এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে এমন অ্যান্টিবডি পেয়েছেন গবেষকরা। তাই কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা যেতে পারে।
এখন ওই গবেষকরা অটোঅ্য়ান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া কোভিড জয়ীদের দেহে দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়ে গবেষণা চালাবেন। কারণ দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলে সেই ক্ষেত্রে কোভিড -১৯ জয়ীদের এটা আজীবন ভোগাকতে পারে।