- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- মমতার প্রকল্প কি সত্যিই মোদীর প্রকল্পের থেকে ভালো, না কি বঞ্চিত বাংলার মানুষ, দেখুন
মমতার প্রকল্প কি সত্যিই মোদীর প্রকল্পের থেকে ভালো, না কি বঞ্চিত বাংলার মানুষ, দেখুন
- FB
- TW
- Linkdin
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পিএম কিষাণ সম্মান নিধি চালু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রকল্পের আওতায় কোনও কৃষক পরিবার তিন কিস্তিতে বছরে ৬,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা পান। প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য়ই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে মাসচরেকের মধ্য়েই এই প্রকল্পের আওতায় সব কৃষকেই আনা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের আনুমানিক ৭১ লক্ষেরও বেশি কৃষক পরিবার আছেন। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। তাই এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দারুণভাবে উপকৃত হতে পারত পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু, দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাতেই এই প্রকল্প এখনও চালু হয়নি। বাধা দিয়েছেন মমতা। এই প্রকল্পের পুরো অর্থই দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ, সেই প্রকল্পের অর্থও কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানোর বিষয়ে আপত্তি ছিল তাঁর, দাবি করেছিলেন রাজ্য সরকারকে মধ্যস্থতাকারী করতে হবে।
সরাসরি সুবিধাভোগীদের হাতে প্রকল্পের অর্থ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগটি শুধু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই নয়, মহারাষ্ট্র-পঞ্জাবের মতো অবিজেপি রাজ্যগুলিতেও দারুণ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শেষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পটি রাজ্যে চালু করার বিষয়ে সম্মত হন। তবে, ইকোনমিক টাইমস-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী তার আগেই রাজ্যের ২২.৬ লক্ষ কৃষক পিএম-কিসান পোর্টালে নিজেদের নাম নিবন্ধিত করেছিলেন। রাজ্য সরকার তাদের নথি যাচাই না করায় কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের সুবিধা তাঁরা পাননি। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের কৃষকরা ৯,৮০০ কোটি টাকা হারিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কৃষক বন্ধু প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। তাই মমতার দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প তাঁর সরকারের প্রকল্পটিরই নকল। তবে বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিনই এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করছিল। 'কৃষক বন্ধু' প্রথমে কৃষকদের বার্ষিক নগদ ৫,০০০ টাকা সহায়তা দানের কথা বলা হয়েছিল। পরে তা বাড়িয়ে ৬,০০০ টাকা করা হয়েছে। নির্বাচনী ইস্তাহারে মমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই সহায়তার পরিমাণ বছরে ১০০০০ টাকা করা হবে। রাজ্যের সমস্ত কৃষকই এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। এর জন্য অবশ্য বছরে রাজ্যের কোষাগারে চাপ পড়ে ৩০০০ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী জন স্বাস্থ্য আরোগ্য যোজনা বা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পটির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে পরিবার প্রতি প্রিমিয়ামের ৪০ শতাংশ ব্যায়ের দায় বহন করতে হয়। প্রকল্পটির লক্ষ্য প্রায় ১০.৭৪ কোটি দরিদ্র পরিবারকে (৫০ কোটি মানুষ) পরিবার প্রতি বার্ষিক স্বাস্থ্য বিমার আওতায় নিয়ে আসা। মমতা প্রকল্পটি এই রাজ্য়ে বাস্তবায়িত করতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'আয়ুষ্মান ভারত' এবং পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্প 'স্বাস্থ্য সাথী' এক করে 'স্বাস্থ্য সাথী' নামেই চালু করবেন রাজ্যে। পরে অবশ্য স্বাস্থ্য কার্ডে নরেন্দ্র মোদীর ছবি থাকা নিয়ে আপত্তি তুলে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যে চালু করেন 'স্বাস্থ্য সাথী' প্রকল্প। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের এই সুবিধা পেতেন রাজ্যের ১.৪ কোটি মানুষ। তবে এই বছর রাজ্যের সকল নাগরিককেই এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। মমতার দাবি, আয়ুষ্মান ভারত-এর সুবিধা দেড় কোটি মানুষ পেতেন, তার সরকার এখন বাংলার ১০ কোটি মানুষ বা স্বাস্থ্য বিমা না থাকা সকলকে সাস্থ্য বিমার আওতায় আনছে। এই প্রকল্পেও প্রতি পরিবার বছরে পাঁচ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা পায়।
সমস্যা হল, পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে আসা রোগীদের চিকিত্সা করতে অস্বীকার করছে। কারণ সরকার চিকিৎসার যে মূল্য ধার্য করেছে, তা অবিশ্বাস্য রকম কম বলে দাবি করছে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা। বর্তমানে প্রকল্পটির আওতায় রাজ্যের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করায় সরকারী হাসপাতালগুলিতেও ভিড়ের চাপে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডধারী রোগীদের চিকিত্সা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় থাকা বেসরকারি হাসপাতালে এইসব সমস্যা নেই। আর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের দৌড় সীমাবদ্ধ বাংলাতেই। আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা কিন্তু গোটা ভারতেই পাওয়া যায়।