- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- তৃণমূলের নির্বাচনী ইশতেহার - প্রশ্নের মুখে 'দিদির অঙ্গীকার', উত্তর খুঁজছে বাংলার জনতা
তৃণমূলের নির্বাচনী ইশতেহার - প্রশ্নের মুখে 'দিদির অঙ্গীকার', উত্তর খুঁজছে বাংলার জনতা
- FB
- TW
- Linkdin
পিকের মনগড়া অঙ্গীকার?
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল যে ইশতেহার প্রকাশ করেছিল, তা ছিল ১৪৬ পৃষ্ঠার একটি বিশাল নথি। আর ২০২১ সালে যে ইশতেহার তারা প্রকাশ করেছে, তা মাত্র ৫০ পাতার ঝকঝকে সুনির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক এক ইশতেহার। অর্থনীতি, সামাজিক ন্যায় এবং সুরক্ষা, যুব, খাদ্য, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুত-রাস্তা-জল - 'দিদির ১০ অঙ্গীকার' বলে এই ১০টি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইশতেহারটির পিছনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর বা 'টিম পিকে'-র ছাপ স্পষ্ট। তাই এটা দিদির ১০ অঙ্গীকার না প্রশান্ত কিশোরের মনগড়া অঙ্গীকার, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভাগ করে লাভ?
এই ইশতেহারে একেবারে আলাদা আলাদা করে নির্দিষ্ট ভোটার গোষ্ঠীগুলিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। কীভাবে? এসসি-এসটিদের জন্য ন্যূনতম আয়, দরিদ্রদের জন্য দুয়ারে রেশন বিতরণ, শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প, কৃষকদের আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করা এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি হিন্দু উপজাতি সম্প্রদায়কে ওবিসি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা - প্রত্যেকটি পদক্ষেপে এই উদ্দেশ্য একেবারে স্পষ্ট। তবে, বাস্তবে এই প্রতিটি শ্রেণির ভোটারই গত কয়েক বছরে স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতি ও একচেটিয়াকরণের শিকার হয়েছেন। এখন এইসব প্রতিশ্রুতি কি তাঁদের কানে যাবে?
কেন বাদ কর্মসংস্থান?
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ইশতেহারে কর্মসংস্থান নিয়ে নির্দিষ্ট বিভাগ ছিল। এইবার কিন্তু, এই ইস্যুটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও উল্লেখ নেই ইশতেহারে। বদলে বিভিন্ন অংশে ইঙ্গিত রয়েছে কর্মসংস্থানের। পরবর্তী ৫ বছরে বার্ষিক ৫ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। রয়েছে, আগামী ৩ বছরে বিভিন্ন বিভাগে শূন্যপদ পূরণ করে ১.১ লক্ষ সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও। তবে এইসব প্রস্তাব পূরণ কীভাবে হবে তার কোনও দিশা নেই। তাহলে কি এই অক্ষমতা ঢাকতেই তুলে দেওয়া হল কর্মসংস্থান বিভাগটি?
কেন বাদ সংখ্যালঘু উন্নয়ন?
২০১৯ সালের ইশতেহারে 'সংখ্যালঘু উন্নয়ন' নিয়ে আলাদা অধ্যায় ছিল। এবার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেই অধ্যায়ও। এইবারের নির্বাচনে মমতাকে যে বিষয়টি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি লড়তে হচ্ছে , তা হল 'মুসলিম তোষণে'র অভিযোগ। এই বিষয়টি ইশতেহারের বদল থেকেও স্পষ্ট। তাহলে কি বিজেপির আক্রমণে ব্যাকফুটে যেতে বাধ্য হচ্ছেন মমতা?
কোথায় বড় শিল্প?
ইশতেহারে শিল্প বিভাগে তৃণমূল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আগামী ৫ বছরে রাজ্যে ২০০০ বড় শিল্প ইউনিট তৈরি হবে। কীভাবে তা হবে, তা অবশ্য কেউ জানে না। প্রতিবছর শিল্পোদ্যোগীদের নিয়ে সম্মেলন হয় বাংলায়, কিন্তু, সেই সম্মেলন থেকে কোনও উল্লেখযোগ্য বড় শিল্প গড়ে উঠেছে, এমনটা দেখা যায়নি। কাজেই পরের ৫ বছরে কীভাবে বড় শিল্প গড়ে উঠবে রাজ্যে সেই প্রশ্নটা উঠেই যাচ্ছে।
খড়কুটোই আশ্রয়?
ভোটের আগে সুশাসনকে তুলে ধরতে মমমতা সরকার চালু করেছে 'দুয়ারে সরকার' এবং 'পাড়ায় সমাধান'-এর মতো সরকারী প্রকল্প। দুটিই প্রশান্ত কিশোরেরই মস্তিষ্কপ্রসূত বলে শোনা যায়। বস্তুত, তিনি মমতাকে ভোট বৈতরণী পার করানোর দায়িত্ব নেওয়ার পরই, গত বছরের শেষে এই দুটি প্রকল্প চালু করে বাংলার সরকার। এর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে এই প্রকল্প এখন বছরে দু'বার করে করা হবে, বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে। এছাড়া, শহুরে দরিদ্রদের জন্য ভর্তুকিকৃত রান্না খাবার সরবরাহের সাম্প্রতিকতম প্রকল্প 'মা ক্যান্টিন'-এর সংখ্যাও রাজ্যের ৫০টি শহরে ২,৫০০ ক্যান্টিন স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে। শেষ লগ্নে চালু করা এইসব প্রকল্পে জোর দেওয়া, প্রায় খড়কুটো আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টার সামিল, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
কেন বাদ জঙ্গলমহল, পাহাড় ও চা বাগান?
২০১৯-এর নির্বাচনী ইশতেহারে জঙ্গলমহল, পাহাড় ও চা বাগান এলাকা নিয়ে পৃথক অধ্যায় ছিল। এই বছর এই অংশকে রাখা হয়েছে 'সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সুরক্ষা' -র অধীনে। চা বাগানের উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু, পাহাড় নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট দিশা নেই। বিমল গুরুংকে ফিরিয়ে আনার পর কী পাহাড়ের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সংশয়ে তৃণমূলই? জঙ্গলমহল নিয়েই বা সরকারের ভাবনার কোনও পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এতদিন পর নন্দীগ্রাম?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই লড়ছেন নন্দীগ্রামে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী তৃণমূলেরই প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমানে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই হাইভোল্টেজ লড়াইয়ের স্বার্থেই প্রথমবার আলাদা করে নন্দীগ্রামের জায়গা হয়েছে তৃণমূল ইশতেহারে। নন্দীগ্রামকে একটি মডেল শহরে পরিণত করতে চায় তৃণমূল সরকার, এমনই এক বিশেষ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, গত ১০ বছরে তা হয়নি কেন? দিদি কি সত্য়িই ভুলে গিয়েছিলেন নন্দীগ্রামকে?