সংক্ষিপ্ত
আম্বেদকর জাতিতে ছিলেন মহর। মহরদের তৎকালীন ভারতে 'অস্পৃশ্য' হিসাবে মানা হত। এক মহর বালক কীভাবে ভারতীয় সংবিধানের জনক হলেন, সে ইতিহাস বড়ই আশ্চর্যের। শেষজীবনে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন আম্বেদকর। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, 'ভারতীয় বৌদ্ধ মহাসভা'র। মৃত্যুবার্ষিকীতে জেনে নিন তাঁর সম্পর্কে স্বল্প জানা ১০ টি তথ্য
অনিরুদ্ধ সরকার - আম্বেদকর জাতিতে ছিলেন মহর। মহরদের তৎকালীন ভারতে 'অস্পৃশ্য' হিসাবে মানা হত। এক মহর বালক কীভাবে ভারতীয় সংবিধানের জনক হলেন, সে ইতিহাস বড়ই আশ্চর্যের। শেষজীবনে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন আম্বেদকর। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, 'ভারতীয় বৌদ্ধ মহাসভা'র। মৃত্যুবার্ষিকীতে জেনে নিন তাঁর সম্পর্কে স্বল্প জানা ১০ টি তথ্য
(১) ডঃ ভীমরাও রামজী আম্বেদকর, যিনি অধিক জনপ্রিয় ছিলেন বাবাসাহেব নামে। ১৮৯১ সালের ১৪ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবার নাম ছিল রামজী শাকপাল। যিনি ছিলেন তৎকালীন পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সুবেদার এবং তাঁর মাতার নাম ছিল ভীমাবাই।
(২) বি. আর. আম্বেদকর জাতিতে ছিলেন মহর। মহরদের তৎকালীন ভারতে "অস্পৃশ্য" হিসাবে মানা হত। শুধু তাই নয় তাঁদের মত নিচু জাতের কোনও মানুষ ভুল করে উচ্চবর্ণের বা উঁচুজাতের কোনও মানুষকে বা তাঁদের কোনো বস্তুকে স্পর্শ করলে তা অপবিত্র হিসেবে মানা হত। সেই যুগে সমস্ত বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে বাবাসাহেব প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডী পার করে এলফিনস্টোন উচ্চ বিদ্যালয়, এলফিনস্টোন কলেজ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং সবশেষে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে ডিগ্রী অর্জন করেন।
(৩) ভারত স্বাধীন হওয়ার পর আম্বেদকরকে ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী হিসেবে আমন্ত্রিত করা হয়। তারপরে তাঁকে সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।যে কারণে তিনি আজ "ভারতীয় সংবিধানের জনক" হিসেবে পরিচিত।
(৪) প্রথম জীবনে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে অ্যাকাউন্টেডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন আম্বেদকর। পরে একটি ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু অস্পৃশ্য হওয়ার কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় অল্পসময়ের মধ্যেই। পরে তিনি মুম্বইয়ের একটি কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ছাত্রদের মাঝে জনপ্রিয় হলেও তাঁর "জাতে"র কারণে তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় বৈষম্যের শিকার হতে হয়। একের পর এক চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন আম্বেদকর।
(৫) দলিত আন্দোলনে যোগ দিয়ে দলিত ও সমাজের পিছয়ে পড়া মানুষদের নেতৃত্ব দেন আম্বেদকর। আর এই আন্দোলন করতে করতে দলিতদের মূল সমস্যাগুলির কথা বুঝতে পারেন তিনি আর তা থেকেই "সংরক্ষণে"র বিষয়টি তাঁর মাথায় আসে। আর সেকারণে সংবিধান প্রণয়নের সময় ভারতের সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি তফসিলি জাতি ও উপজাতির জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণের ব্যাবস্থা করেন তিনি।
(৬) ১৯৩০ থেকে ১৯৪৫, প্রথম গোলটেবিল বৈঠক থেকে দ্বিতীয় প্রাদেশিক নির্বাচন অবধি পুরো সময়কাল জু়ড়ে অম্বেদকরের বক্তব্য ছিল, "জাতিগত সমস্যার মূল বিষয়গুলি মহাত্মা গান্ধী ও কংগ্রেস নেতাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাঁরা সবাই প্রথমে উচ্চবর্ণের অভ্যেস অনুযায়ী জাত-ব্যবস্থার ‘বাস্তব’টা মেনে নেন, আর তার পর কিছু সংস্কারের কথা বলেন।" আর সেই কারণে অম্বেদকরের সঙ্গে গান্ধীজীর একটা সময় বেশ দূরত্ব তৈরি হয়।
(৭)১৯৩২ সালে ব্রিটিশ সরকার তথাকথিত নিম্ন বর্ণের মানুষদের জন্য পৃথক ভোটাধিকারের প্রস্তাব করে। গান্ধীজি তখন ভাবেন এই জাতীয় পদক্ষেপে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারে। তাই তিনি আম্বেদকর ও বেনারসের পণ্ডিত মদন মোহন মালব্যকে ডেকে পাঠান। তাঁদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। দীর্ঘ চিন্তাভাবনা ও আলোচনার পর নিচুস্তরের মানুষদের জন্য কিছু আসন সংরক্ষিত হয়।
(৮) অম্বেদকর শেষ পর্যন্ত সাম্য বা মুক্তি খুঁজে পান বৌদ্ধ ‘ধম্ম’-এর মধ্যে। নিজেই বলেন, তাঁর সমস্ত কাজে ধম্মের ছায়া রয়েছে। ১৯৫০ সালে তিনি বৌদ্ধ ধর্মে পুরোপুরিভাবে মনোনিবেশ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি "ভারতীয় বৌদ্ধ মহাসভা" প্রতিষ্ঠা করেন এবং তারপরে ১৯৫৬ সালে তিনি 'The Buddha and his Dhamma' নামে একটি গ্রন্থ লেখার কাজ শেষ করেন।
(৯) ১৯৫৬ সালে ৬ ডিসেম্বর তিনি তার দিল্লির বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।১৯৯০ সালে তাঁকে মরণোত্তর "ভারতরত্ন" দেওয়া হয়। তাঁর স্মৃতিসৌধটি দিল্লির আলিপুর রোডে প্রতিষ্ঠিত
(১০) ১৯৩০ এর দশকে ‘জাতপাত-এর বিনাশ’ বা ‘অ্যানাইহিলেশন অব কাস্ট’ নামে তাঁর বিখ্যাত একটি লেখা জনপ্রিয় লেখিকা অরুন্ধতী রায় সম্প্রতি নতুন করে সম্পাদনা করেছেন