- কুষ্টিয়ার এক গ্রামে বাঘের আবির্ভাব ঘটল
- সৃষ্টি হল মহা আতঙ্ক
- অসীম সাহসী ছেলেটিও দমবার পাত্র নয়
- কলকাতার সেরা ডাক্তার সুরেশপ্রসাদ চিকিৎসার ভার নেন
ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে ১১০ বছর আগে। তখন সমগ্র কুষ্ঠিয়ানদীয়া জেলার অন্তর্ভূক্ত। কুষ্টিয়ার একটি গ্রামে কোথা থেকে কীভাবে এক বাঘের আবির্ভাব ঘটল। গ্রামজুড়ে সৃষ্টি হল মহা আতঙ্ক। দিনের বেলাতেও মানুষ ঘর থেকে পা ফেলতে ভয় পাচ্ছে। সারা গ্রামে যখন এরকম অবস্থা গ্রামের ফণিবাবু বাঘটিকে মেরে ফেলার কথা ভাবলেন। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি বাঘটিকে মারবেন। ঘটনাচক্রে সেই সময় ফণিবাবুর ভাগনা তখন তার মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। সেও যাবে তার মামার সঙ্গে বাঘ মারতে। বাড়ির লোকতো বটেই পাড়া প্রতিবেশীরাও বারণ করলেন। কিন্তু কে শোনে নিষেধ। ফণিবাবুও যাবেন বাঘ মারতে আর সঙ্গে তার ভাগনা। ভাগনার হাতে একটি ভোজালি, তাই দিয়ে নাকি সে বাঘ মারবে। কিন্তু গোটা গ্রাম তন্ন তন্ন করে খোঁজাখুঁজির পরও তারা বাঘটির টিকিও দেখতে পেলেন না। খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে তারা জঙ্গলের পাশের মাঠে বসলেন।
আরও পড়ুন- শহিদ ক্ষুদিরামকে শ্রদ্ধা জানাতে রচিত হয় এই গান, জানুন এই গানের পিছনের কাহিনি
তবে ফণিবাবু জঙ্গলের দিকে তাঁর বন্দুক তাক করেই বসেছিলেন। হয়ত বাঘটি তাক করা বন্দুক দেখতে পেয়েছিল, তাই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে বন্দুকের দিক দিয়ে এসে বাঘটি ছেলেটির পিছন দিয়ে বের হল। বাঘ দেখামাত্রই গ্রামবাসী স্বভাবসুলভ ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। ফণিবাবু তাঁর তাক করা বন্দুক থেকে গুলিও ছোঁড়েন। কিন্তু গুলিটি বাঘের মাথা ঘেঁষে চলে যায়। ক্ষাপা বাঘটি আরও হিংস্র হয়ে ওঠে এবং তার সামনে ফণিবাবুর ভাগনার ওপর ঝাপিয়ে পরে। অসীম সাহসী ছেলেটিও দমবার পাত্র নয়। সামান্য ভোজালি দিয়ে সেও বাঘটির ওপর সমানে আঘাত চালাতে থাকে। বাঘ আর ছেলেটির মধ্যে আক্রমণ প্রতিআক্রমণ চলতে থাকে প্রায় মিনিট দশ ধরে। দু’জনেই জানে যে বাঁচতে হলে শত্রুকে হত্যা করতে হবে। তাই মরণপণ যুদ্ধ চলে। বাঘের আঁচড়ে ছেলেটির ক্ষত-বিক্ষত শরীর থেকে রক্ত ঝড়তে থাকে। এক সময় ছেলেটির পা-দুটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার মধ্যেই ছেলেটি ভোজালি দিয়ে ক্রমাগত বাঘের মাথায় আঘাত করতে থাকে। একসময় ক্ষতবিক্ষত বাঘটি মাথার আঘাতে ঝিমিয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন- কীভাবে অকালে নিভে যায় গীতা দত্তের মতো স্বর্নালী কন্ঠের শিল্পীজীবন
বাঘের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত ভাগনাকে সুস্থ করে তুলতে তার মামা বাড়ির পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চলে। তখনকার কলকাতার সেরা ডাক্তার সুরেশপ্রসাদ ছেলেটির চিকিৎসার ভার নেন। ধীরে ধীরে ছেলেটি সেরে উঠলেও তার দুটি পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ছেলেটির বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ড. সুরেশপ্রসাদ তার নাম দেন ‘বাঘা’ যতীন। আজ সেই বীর শহিদের জন্মদিন। কিন্তু আমরা ক’জন আর মনে রেখেছি তাঁকে। অন্যায় দেখলে যতীনের মাথা গরম হয়ে যেত। বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ সৈনিক পিটিয়েছেন তিনি। একাই তিন-চার জন সৈনিককে পিটিয়ে ব্যারাকে পাঠিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকারের কানে যে সে খবর যেত না তা নয়। অরবিন্দ ঘোষের সান্নিধ্যে শিখেছিলেন বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনার কৌশল। কলকাতার ১০২ নং আপার সার্কুলার রোডে গড়েছিলেন বিপ্লবী আখড়া।
কর্মসূত্রে তিনি ছিলেন বাংলার গভর্নরের ব্যক্তিগত নির্বাহী। তবে বেশিদিন বেশিদিন দু’দিক সামাল দিতে পারেন নি। যতীনের পরিকল্পনায় বিপ্লবীদের হাতে অকালেই মারা পড়তে হয় গভর্নরকে। ঐতিহাসিক হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হন যতীন। প্রলোভনের পাশাপাশি চলে তুমুল অত্যাচার, তবে মুখ খোলেননি যতীন। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে গ্রেফতারের এক বছর পর ছেড়ে দিতে হয় যতীনকে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কৌশল বদলে ফেলেন যতীন। দিদি, বৌ-বাচ্চাসহ ফিরে আদিনিবাস ঝিনাইদহ ফিরে ব্যবসায় মন দেন। ব্রিটিশ সরকার ভাবে যতীন শুধরে গেছে। কিন্তু যতীনের ভাবনা তখন সমগ্র ভারত নিয়ে। নরেন সন্ন্যাসী ছদ্মনামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে একত্রিত করতে থাকেন বিপ্লবীদের।
জার্মানদের সঙ্গে ব্রিটিশদের যুদ্ধের সময় যতীন জার্মান সরকারের সহায়তায় ভারত থেকে ব্রিটিশ বিতাড়ণের নতুন পরিকল্পনা করেছিলেন।পরিকল্পনা অনুযায়ী বুড়িবালাম নদীর তীরে চার সহযোগী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য জার্মান অস্ত্র ব্যবহার করে বালেশ্বর রেললাইন দখল করে ব্রিটিশ সৈন্যদের মাদ্রাজ থেকে কলকাতা ভ্রমণ বন্ধ করা। কিন্তু পুরস্কারের লোভে গ্রামবাসীরা পুলিশকে খবর দেয়। বিপ্লবীদের ধরে ফেলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। তবে বিনা লড়াইতে প্রাণ দেননি কেউ। যতীন মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন এবং পরদিন সকালে মারা যান। শেষ হয় এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি মহান অধ্যায়।
Read Exclusive COVID-19 Coronavirus News updates, from West Bengal, India and World at Asianet News Bangla.
খেলুন দ্য ভার্চুয়াল বোট রোসিং গেম এবং চ্যালেঞ্জ করুন নিজেকে। கிளிக் செய்து விளையாடுங்கள்
Last Updated Dec 7, 2020, 5:18 PM IST