সংক্ষিপ্ত
পিসি সরকারের"অ্যাং-রে আই" নামক খেলাটি সেযুগে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল বিদেশিদের। যে খেলায় করাত দিয়ে একটি মানুষকে দিখণ্ডিত করা হত তারপর পুনরায় তা জোড়া লাগিয়ে দেওয়া হত। পিসি সরকারের এই খেলাটি দেখে বিদেশের দর্শকরা অভিভূত হয়ে পড়েন।
সিনিয়র পিসি সরকার (Senior P C Sarkar) হঠাৎ করে একদিন নিজের পদবি "সরকার" বাদ দিয়ে ইংরেজি "সোরকার" শব্দ ব্যবহার করতে শুরু করেন। যাদুবলে পদত্যাগ করিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। ৭০টির মত দেশে জাদু প্রদর্শন করে ব্যাপক খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি।জাপানে জাদু প্রদর্শন করতে করতে হঠাৎ করে মারা যান জাদুকর সরকার। সিনিয়র পিসি সরকারের অজানা কথায় অনিরুদ্ধ সরকার।
১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্থানীয় শিবনাথ হাইস্কুলে (Shivnath Highschool)। ১৯২৯ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯৩৩ সালে গণিত শাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ পাস করেন তিনি পরে জাদুকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। পিসি সরকারের বাবা ভগবান চন্দ্র সরকার (Bhagwan Chandra Sarkar) এবং মা কুসুম কামিনী দেবী (Kusum Kamini Devi)। পিসি সরকাররা ছিলেন দুভাই। তিনি ছিলেন বড়। পিসি সরকারের পুরো নাম (P C Sarkar Full Name) প্রতুল চন্দ্র সরকার (Pratul Chandra Sarkar)। ছোটো ভাই অতুল চন্দ্র সরকার বা এসি সরকার। ছোটবেলা থেকেই জাদুবিদ্যার প্রতি কৌতূহল তাঁকে এ পেশায় আগ্রহী করে তোলে। হঠাৎ করে একদিন নিজের পদবি "সরকার" বাদ দিয়ে ইংরেজি "সোরকার" শব্দ ব্যবহার করতে শুরু করেন। পদবির বানান পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেন "সোরকার শব্দটির অর্থ 'জাদুকর'। আমি একজন জাদুকর। এটাই আমার একমাত্র পরিচয়।"
সে সময়ের বিখ্যাত জাদুকর গণপতি চক্রবর্তী (Magician Ganpati Chakraborty) ছিলেন তার জাদুবিদ্যার গুরু। ষষ্ঠ শ্রেণীতে শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি বন্ধুদের প্রথম জাদু দেখানো শুরু করেন। জাদু শিল্পে পিসি সরকারের কৃতিত্ব (P C Sarkar's Achievement) হল- তিনি বহু প্রাচীন জাদু খেলার মূল সূত্র আবিষ্কার করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি সর্বপ্রথম বিদেশে গমন করেন। তিনি ৭০টির মত দেশে জাদু প্রদর্শন করে ব্যাপক খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেন। পিসি সরকারের"অ্যাং-রে আই" নামক খেলাটি সেযুগে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল বিদেশিদের। যে খেলায় করাত দিয়ে একটি মানুষকে দিখণ্ডিত করা হত তারপর পুনরায় তা জোড়া লাগিয়ে দেওয়া হত। পিসি সরকারের এই খেলাটি দেখে বিদেশের দর্শকরা অভিভূত হয়ে পড়েন। শুধু তাই না, জাদুকরের অসাধারণ প্রকাশভঙ্গি এবং বাস্তবতার জেরে অনেক দর্শক অজ্ঞান অবধি হয়ে যেত। কেউ কেউ ভয়ে হল ছেড়ে বেরিয়ে যেতেন।
পিসি সরকারের ম্যাজিকে (P C Sarkar's Magic) দ্বিখণ্ডিত সেই তরুণীর কুশল বার্তা জানতে সেসময় বিবিসি অফিসে এত টেলিফোন আসতে থাকে যে, দু'ঘণ্টা পর্যন্ত অফিসের সব টেলিফোন লাইন জ্যাম হয়ে যেত। নিউইয়র্কের টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ এই খেলাটি দেখাবার জন্য জাদুকর সরকারকে বিশেষ বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়। "ফোর্স রাইটিং" খেলাটি দেখিয়ে ভারতের সংবাদপত্র মহলে আলোড়ন ফেলে দেন জাদুকর পিসি সরকার। এছাড়া "ওয়াটার অব ইন্ডিয়া" (Water Of India) পিসি সরকারের আরেকটি জনপ্রিয় খেলা। যেটি দেখে প্রথমবার দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে যান।
পিসি সরকারের ম্যাজিক (P C Sarkar's Magic) দেখতে একবার কলকাতার ইম্পেরিয়ল রেস্তোরাঁয় সপার্ষদ হাজির হন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী ফজলুল হক (PM Fajlul Hawk)। তখন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদটিকেই অভিহিত করা হত প্রধানমন্ত্রী নামে। পিসি সরকারের কথামত, সাধারণ সাদা একটি কাগজের টুকরোয় কিছু লিখলেন হক সাহেব। আর তাতে সই করলেন। হক সাহেবের বাকি মন্ত্রী যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরাও হক সাহেবের সইয়ের নিচে সই করলেন। তারপরই হল ম্যাজিক। জাদুকরের মন্ত্রবলে, সেই সামান্য সাদা কাগজ হয়ে গেল পদত্যাগপত্র! ফজলুল হক (Fajlul Hawk) প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেন। সবাই অবাক। বিদেশে একটি দ্রুতগামী রেলগাড়ি আসার ৩৮ সেকেন্ড আগে তিনি হাতকড়া বাঁধা অবস্থায় ট্রেন লাইন থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন। আশ্চর্যের বিষয় ওই হাতকড়াটি খুলতে ১৭টি চাবি ব্যবহার করতে হত। ইংল্যান্ডের জাদুকর ফোরামের তৎকালীন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উইল গোল্ড স্টোন পিসি সরকারের এই খেলা দেখে মোহিত হয়ে তাঁকে বলেছিলেন, "তুমি জন্মসিদ্ধ জাদুকর। তোমাকে সেলাম।" ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে চিকিৎসক তাঁকে অতিরিক্ত ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ উপেক্ষা করে তিনি জাপান যান শো করতে। ১৯৭১ সালের ৬ জানুয়ারি জাপানের জিগেৎসু শহরে জাদু প্রদর্শন করতে করতে হঠাৎ করে মারা যান জাদুকর সরকার (Magician Sarkar)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। পিসি সরকারের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।পিসি সরকারের ছেলে জুনিয়র পিসি সরকার (Junior P C Sarkar) একজন বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ান। তিনিও যাদু দেখিয়ে সারা বিশ্বে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করে চলেছেন।