সংক্ষিপ্ত

  • নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী
  • বেলুড় মঠের অনুষ্ঠান থেকে বিরোধীদের আক্রমণ
  • পাকিস্তানে অত্য়াচারিত সংখ্যালঘুদের রক্ষা করবে নতুন আইন
  • বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বিরোধীরা, অভিযোগ মোদীর


স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনের অনুষ্ঠান আর বেলুড় মঠের পবিত্র ভূমিকেই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিরোধীদের জবাব দেওয়ার জন্য বেছে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকেই কড়া আক্রমণ শানালেন বিরোধীদের। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে চেয়ে নিলেন জনসমর্থন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী দাবি করলেন সংশোধিত নাগরিক আইনের জন্যই গোটা বিশ্বের সামনে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের অত্যাচারিত হওয়ার ঘটনা সামনে চলে এসেছে। 

শনিবার প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় পা দেওয়ার পর থেকেই নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ চলছিল। বিক্ষোভের আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রীর যাত্রাপথও বদলাতে হয়। নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর থেকে এ রাজ্যেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। পরে যা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে টানা প্রতিবাদে নেমেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নয়া আইন নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়ে এসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। 

শনিবার রাতে বেলুড়েই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিন সকালে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে যুব দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই সেই অনুষ্ঠান মঞ্চকে নাগরিকত্ব আইন  নিয়ে প্রচারের জন্য বেছে নিলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেশের নাগরিকত্ব দিতে এক রাতেই নতুন কোনও আইন তৈরি করেনি ভারত সরকার। যে কোনও দেশ থেকে যে কোনও ধর্মের মানুষ যিনি ভারতের উপর আস্থা রাখেন, ভারতের সংবিধান মানেন, তিনি ভারতের নাগরিকত্ব নিতে পারেন। নাগরিকত্ব আইন নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার নয়, নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পুরনো আইনেই একটি সংশোধনী। দেশ ভাগের পরে পাকিস্তানের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন সেখানকার সংখ্যালঘুরা, মহিলাদের সম্মান নিয়ে টানাটানি হয়েছে, বেঁচে থাকাই দুঃসহ হয়ে উঠছিল, তাঁদেরকে নাগরকিত্ব দিতেই আইনে বদল করা হয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী এ দিন দাবি করেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়েই নাগরকিত্ব আইনে বদল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'স্বাধীনতার পর মহাত্মা গাঁধী থেকে শুরু করে সব মহান নেতারাও এটা বলেছিলেন যে ধর্মের কারণে যাঁদের পাকিস্তানে অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত। এমন শরণার্থীদের কি মরার জন্য ওই দেশে ফেরত পাঠানো উচিত? আইন মেনে কি তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত নয়?  অন্যের ভাল করাটা কি ভুল? যদি মোদী এই কাজটি করেন, তাহলে আপনাদের সমর্থন আছে তো?' হাত তুলে তাঁকে সমর্থন জানানোর জন্যও জনতার কাছে আবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর পরেই বিরোধীদের আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদী। মনে করিয়ে দেন, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে এখনওযে কোনও ধর্মের মানুষ, যিনি ভারতীয় সংবিধান মানেন, তিনি এ দেশের নাগরিকত্ব নিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই সহজ বিষয়টা আপানারা বুঝতে পেরেছেন তো? ছোট ছোট পড়ুয়ারা বুঝতে পারছে। কিন্তু আপনারা যেটা বুঝতে পারছেন সেটা রাজনীতির কারবারীরা বুঝতে চাইছে না।' প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিরোধীরা। দেশের যুব সমাজই মানুষের ভুল ভাঙিয়ে দেবে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। 

বেলুড় মঠের মঞ্চ থেকেই উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিকেও বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিকে বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, 'উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি আমাদের গর্ব। ওখানকার রীতি নীতি, সংস্কৃতি, জনবিন্যাসের উপরে এই আইনের যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে, সেই সংস্থানও নতুন আইনে রাখা হয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী এ দিন বলেন, 'এত স্পষ্টতা সত্ত্বেও এই আইন নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিছু মানুষ এই আইন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। পাকিস্তানে যেভাবে সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার চলছে, তা নিয়ে গোটা বিশ্বে যুবসমাজই সরব হয়েছে। আমরা এই আইনে সংশোধন না আনলে গোটা বিশ্ব জানতে পারত না পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপরে কী পরিমাণ অত্যাচার চলছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। আমাদের এই আইনের জন্যই পাকিস্তানকে এবার জবাবদিহি করতে হবে।'

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের শরণার্থীদেরও নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে এ দিন মোদীর মুখে এ দিন শুধু পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের অত্যাচারের কথাই শোনা গিয়েছে। পাক বিরোধী আবেগকে হাতিয়ার করেই প্রধানমন্ত্রী এ বার নাগরিকত্ব আইনের পালে হাওয়া টানতে চাইছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বললেও এ দিন প্রধানমন্ত্রীর মুখে এনআরসি নিয়ে কোনও কথাই শোনা যায়নি।