সংক্ষিপ্ত

মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরেই ছিল বাড়ি

১৫০ কিলোমিটার যে পেরিয়ে এসেছে, তার কাছে এই দূরত্বটা আর কতটা

কিন্তু, এই দূরত্বটাই পার করা হল না ১২ বছরের মেয়েটার

রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে আর উঠল না জামলো মাদকাম

বাকি ছিল আর মাত্র ১৪ কিললোমিটার। কতক্ষণ লাগত বড়জোর ১ ঘন্টা। বাড়ির কাছাকাছি এসে হাঁটার গতি বেড়ে গিয়েছিল ১২ বছরের মেয়েটার। কিন্তু, তিন দিন ধরে হাঁটার পর, শেষপর্যন্ত তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল একটা অ্যাম্বুল্যান্স। অবশ্য তখন আর জামলো মাদকাম-এর দেহে প্রাণ নেই।  

করোনাভাইরাস-কে রুখতে দেশব্যাপী লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। আর সেই কারণেই ২১ দিন কোনওরকমে অপেক্ষা করার পর গত ১৫ এপ্রিল সকালে  মরিয়া হয়ে তেলেঙ্গানা থেকে ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় তার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল ১২ বছরের কিশোরী জামলো মাদকাম। শুধু সেই নয়, তাদের গ্রাম থেকে আরও ১১ জন উপার্জনের জন্য তেলেঙ্গানার এক গ্রামে লঙ্কার ক্ষেতে কাজ করতো। সকলে মিলেই প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথে পাড়ি দেওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন। লকডাউনে বাস-গাড়ি নেই, পা-গাড়িই ভরসা। তার উপর জাতীয় সড়ক দিয়ে যেতে গেলে যদি পুলিশ ধরে, তাই তিন দিন ধরে বন-বাদার দিয়েই হেঁটেছিল তারা।

গত শনিবার বিজাপুর জেলায় জেলায় প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের এই দলটি। সকালে একটু সামান্য খাবারও খেয়েছিল জামলো, কিছুক্ষণ পরই পেটে মারাত্মক ব্যথা শুরু হয়, সেই সঙ্গে হড়হড়িয়ে বমি। ধীরে ধীরে রাস্তাতেই সে নেতিয়ে পড়ে। পড়ে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরে একদম জল ছিল না, সেইসঙ্গে অপুষ্টিতে ভুগছিল। তার শরীরেও ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য-ও বজায় ছিল না। করোনভাইরাস পরীক্ষাও করানো হয়েছে, তবে ফল নেতিবাচক এসেছে।

১২ বছরের মেয়েটির বাবা অন্দোরাম মাদকাম জানিয়েছেন, মাস দুই আগেই তাঁর মেয়ে তেলেঙ্গানায় কাজ করতে গিয়েছিল। তখন ভাবেননি এই পরিণতি হবে। তার সঙ্গে গ্রামের অন্য যারা থাকত, তারা জানিয়েছে গত কয়েকদিন ধরেই ভালো করে খাওয়া দাওয়া করত না জামলো। রাজ্য সরকার তার পরিবারের জন্য এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।

লকডাউনে বিহারে ব্যাঙ-পোড়া খাচ্ছে শিশুরা, ভাইরাল ভিডিও-র পিছনে লুকিয়ে কোন সত্যি

বাতকর্মের মাধ্যমে কি ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস, তাহলে কি পশ্চাতদেশেও পরতে হবে মাস্ক

লকডাউনে বন্ধ স্নান, বাধ্য করছেন সঙ্গমে, স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশে নালিশ স্ত্রীর

লকডাউন-এর ফলে ভারত জুড়ে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি থেকে অনেক দূরে আটকে আছেন। হাতে কাজ নেই, অনেকের মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও নেই। হতাশায় অনেকেই মরিয়া হয়ে রাস্তায়  থেকে বেরিয়ে পড়চেন, দীর্ঘ যাত্রার ধকল সয়েও বাড়ি পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। আর তাতে লকডাউনের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হচ্ছে। অনেক জায়গাতেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্য এবং আশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তারপরেও বহু মানুষই তা পাচ্ছেন না। ভারতে এখনও পর্যন্ত করোনভাইরাস-এ আক্রান্ত হয়ে ৫৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে শুধুমাত্র লকডাউনের কারণেই মৃত্যুর সংখ্যাটাও এর থেকে খুব একটা কম নয়।