সংক্ষিপ্ত
ভাইরাল হয়েছে ভিডিওটি
তিন-চারজন শিশু ব্যাঙ পুড়িয়ে খাচ্ছে বিহারের একটি গ্রামে
কারণ লকডাউনের জন্য ঘরে কোনও খাবার নেই
ভিডিওটি সত্যি না ভূয়ো
দেশে ২১ দিনের লকডাউনের সীমা বাড়ানো হয়েছে। লকডাউনের ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত দারিদ্র ও অনাহারের একের পর এক করুণ ছবি উঠে আসছে। এরমধ্যে গগত কয়েকদিন ধরে সোশ্য়াল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি বিহারের বলে দাবি করে বহু মানুষ শেয়ার করছেন, এমনকী রাজনৈতিক কৌশলী প্রশান্ত কিশোরও ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। ভিডিও-য় দেখা যাচ্ছে জেহানাবাদ জেলার কিছু দরিদ্র বাচ্চা ব্যাঙের রোস্ট করে খাচ্ছে। কেন? তাদের দাবি বাড়িতে একটি শস্যের দানাও নেই দাঁতে কাটার মতো।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, তিনজন শিশু সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, আরও কয়েকজন তাদের ঘিরে দাড়িয়ে। মাইক্রোফোন এগিয়ে ধরে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করছেন। শিশুরা জানায় তারা এই মুহূর্তে ব্যাঙ পুড়িয়ে বা রোস্ট করেই খাচ্ছে। কারণ, তাদের ঘরে কোনও খাবার নেই। চারদিন ধরে এই অবস্থাই চলছে। স্কুল খোলা থাকলে তারা মিডডে মিলের খাবার পায়। এখন তাও বন্ধ। তাই প্রথমে তারা ব্যাঙগুলিকে ধরছে। তারপর মেরে একটি কাঠির আগায় বিঁধে সেগুলিকে আগুনে পুড়িয়ে নিয়ে, তাই দিয়েই পেট ভরাচ্ছে।
বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমও এই ভাইরাল ভিডিওর ভিত্তিতে লকডাউন-এর বিহারের কি চরম খারাপ অবস্থা সেই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। কিন্তু, ভিডিওটিতে ওই শিশুদের ভাবভঙ্গি দেখে অনেকেরই সন্দেহ জেগেছিল। খিদের কথা বলতে গিয়ে একটি শিশু হেসেও ফেলে। এরপরই এশিয়ানেট নিউজ বাংলা এই ভিডিওটি নিয়ে তথ্যানুসন্ধান চালায়। দেখা যাক তাতে কী বের হল। তাতে যা প্রকাশ করেছেন যে ভিডিওটি পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে ইন্টারনেটে খুঁজতে গিয়ে আরও একটি ভিডিও সামনে আসে। সেটিও বিহারের জেহানাবাদের বলেই দাবি করা হয়েছে। একটি শিশুকে দেখা যাচ্ছে ব্যাঙ পুড়িয়ে খাওয়ার কথা বলতে। অদ্ভূত ভাবে দুটি ভিডিওতেই শিশুদের বয়ান একেবারে এক।
তারপর আরও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর এলাকায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। জেলাশাসক নবীন কুমার-এর কাছে বিষয়টি পৌঁছলে, তিনি কিছু খাদ্যশস্য দিয়ে একটি দল পাঠিয়েছিলেন ওই পরিবারগুলিকে সাহায্যের জন্য। কিন্তু, তারা গিয়ে দেখেছে ওই শিশুদের বাড়িতে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য, চাল, আটা, ডাল ইত্যাদি রয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় কমিউনিটি কিচেনে ওই এলাকার সমস্ত শিশু এবং মহিলারা খাবার পাচ্ছেন।
বাতকর্মের মাধ্যমে কি ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস, তাহলে কি পশ্চাতদেশেও পরতে হবে মাস্ক
লকডাউনে বন্ধ স্নান, বাধ্য করছেন সঙ্গমে, স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশে নালিশ স্ত্রীর
'অতিরিক্ত ধান' থেকে তৈরি করা হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, করোনা রুখতে সিদ্ধান্ত মোদীর
তাহলে কেন ব্যাঙ খাওয়ার কথা বলেছিল শিশুরা? জানা গিয়েছে ভিডিওটি স্থানীয় কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তির কাজ। তারাই ওই শিশুদের হাতে ব্যাঙ নিয়ে ওইসব বলতে শিখিয়েছিল। বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে ওই শেখানো বুলি ভিডিও-তে রেকর্ড করেছিল। লকডাউনে, যেখানে সত্যি সত্যি বিভিন্ন মানুষ খাবার পাচ্ছেন না, সেখানে এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ভাইরাল করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। পুলিশ ও প্রশাসনের ধারণা, জেলা প্রশাসন ও বিহারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টাও এর পিছলে থাকতে পারে। যারা ভিডিওটি বানিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএম।