সংক্ষিপ্ত
মাত্র ২০ মাস বয়সে থেমে গিয়েছে তার জীবন
খেলতে গিয়ে বারান্দা থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিল
তবে তারপর তার জন্যই প্রাণ ফিরে পেল ৫ জন ব্যক্তি
তারমধ্যে রয়েছে এক ৫ মাসের শিশুও
মাত্র ২০ মাস বয়সেই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় থেমে গিয়েছিল ছোট্ট ধনিষ্ঠার জীবন। কিন্তু, নিজে চলে গিয়েও আরও ৫ জনের প্রাণ বাঁচালো সে। তার জন্যই জীবনের স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে, তারই মতো এক কোলের শিশুও। আর এইভাবেই ভারতের সর্বকণিষ্ঠ অঙ্গদাতা হিসাবে রেকর্ড গড়ল দিল্লির রোহিনী এলাকার বাসিন্দা আশীষ কুমার ও তাঁর স্ত্রী ববিতা-র কোল থেকে অকালে হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি।
গত ৮ জানুয়ারি, অন্ধকার নেমে এসেছিল আশীষ ও ববিতা-র জীবনে। সেদিন সন্ধ্যাবেলায় তাদের দোতলার ফ্ল্যাটের বারান্দায় খেলতে খেলতে নিচে পড়ে গিয়েছিল ধনিষ্ঠা। তারপর শরীরে প্রাণ থাকলেও ছিল না চেতনা। ওই অবস্থায় তাকে তড়িঘড়ি গঙ্গারাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তাররা সবরকম চেষ্টা করেন, কিন্তু, চেতনা আর ফেরেনি ধনিষ্ঠার। ১১ জানুয়ারি তাকে 'ব্রেন ডেড' হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন ডাক্তাররা।
এই অল্প বয়সে, সন্তানের এই রকম মর্মান্তিক পরিণতিতে বাবা-মায়ের মনের অবস্থা কী হতে পারে তা বাইরে থেকে শুধু কল্পনাই করা যেতে পারে, অনুভব করা সম্ভব নয়। তবে আশীষ ও ববিতার সেই শোকে কিছুটা হলেও প্রলেপ পড়েছে। তাঁদের ছোট্ট সন্তান মারা গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু, তার হার্ট, লিভার, দুই কিডনি এবং দুই কর্নিয়া পেয়ে প্রাণ বেঁচেছে এক ৫ মাস বয়সী শিশুসহ পাঁচ-পাঁচজন ব্যক্তির।
ধনিষ্ঠার বাবা জানিয়েছেন, তাঁদের মেয়ে যখন হাসপাতালের বিছানায় অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল, সেই সময়ই তাঁরা জানতে পেরেছিলেন, বহু রোগীরই উপযুক্ত অঙ্গের অভাবে মৃত্যু হয়। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁদের মেয়ে আর বেশিক্ষণ নেই। ধনিষ্ঠার লড়াই ফুরিয়ে গেলেও আরও কয়েকজনের প্রাণ যাতে বাঁচামনো যায়, সেই কারণেই মেয়ের অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা।
ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি এক ৫ মাসের শিশুকে দেওয়া হয় ধনিষ্ঠার হৃদয়। তার কিডনি এবং লিভার পেয়েছেন প্রাপ্তবয়স্করা। ধনিষ্ঠার অঙ্গ গ্রহণ করা ৫ জনই এখন সুস্থ। আর এতে দারুণ গর্বিত আশীষ কুমার। তিনি জানিয়েছেন, ধনিষ্ঠার কথা তাঁর যখনই মনে আসবে, তখনই এতগুলো প্রাণ বাঁচানোর জন্য অকালে চলে যাওয়া মেয়ে কে নিয়ে তাঁর গর্ব হবে। কন্যা হারানোর অপরিসীম শোকের মধ্যেও এটাই তাঁর ভালোলাগার একমাত্র বিষয়। তিনি আরও বলেছেন, অনেকের বিশ্বাস অঙ্গদান করা ব্যক্তি পরের জন্মে দান করা অজ্ঞগুলি ছাড়া জন্মায়। কিন্তু এইসব অন্ধবিশ্বাস ভেঙে বেরিয়ে সকলেরই অন্যের জীবন বাঁচানোর সুযোগটা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য। করেছেন তিনি।
স্যার গঙ্গারাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এই মহৎ কাজের জন্য আশীষ ও ববিতার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। তাঁদের মতে ধনিষ্ঠার ববা-মা'এর এই সিদ্ধান্ত অন্য আরও অনেককে অনুপ্রেরণা দেবে। প্রতি বছর ভারতে গড়ে ৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত অঙ্গের অভাবে। প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় অজ্ঞদানের হার ভারতে সর্বনিম্ন। তাই এই ধরণের পদক্ষেপ যত দেখা যাবে, ততই ভালো।