সংক্ষিপ্ত
গত মে মাসে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন নয়ডার এক ডাক্তার
তারপর পুরো সুস্থ হয়ে কাজেও যোগ দিয়েছিলেন
৪৫ দিনের মাথায় ফের ধরা পড়ল করোনা
চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে এই ঘটনা
গত মে মাসে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তারপর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তার মানুষ, বন্ধুরাই বেশ কয়েকবার করোনা পরীক্ষা করিয়েচিল। প্রত্যেকবারই ফল এসেছিল নেগেটিভ। তারপর ৪৫ দিন কেটে গিয়েছে। ফের একবার অসুস্থ বোধ করায় করোনা পরীক্ষা করা হল নয়ডার গৌতম বুদ্ধনগর জেলা হাসপাতালের ওই চিকিত্সকের। ফের পজিটিভ এল তাঁর রিপোর্ট। যে ঘটনা একেবারে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।
এখনও অবধি করোনাভাইরাসের কোনও টিকা বা প্রতিসেধক কিছু বের হয়নি। তাই এই রোগের কোন চিকিত্সা নেই। তবে এখনও পর্যন্ত গবেষণা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটা চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করে দিয়েছে আইসিএমআর। করোনা পজিটিভ হলে তাঁকে হাসপাতালে বা বাড়িতে আইসোলেশনে রাখা হবে। বাড়াবাড়ি হলে আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর। আর দুইবার করোনা পরীক্ষার ফল নেতিবাচক এলে তবেই সুস্থ ঘোষণা করা হবে। তারপরও আরও দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকলেই সেই রোগীর সম্পূর্ণ মুক্তি।
নয়ডার এই চিকিৎসকের ক্ষেত্রে এই সব পদ্ধতিই যথাযথ মানা হয়েছে। তিনি ওই জেলা সুপার স্পেশালিটি পেডিয়াট্রিক হাসপাতাল ও পোস্ট গ্রাজুয়েট টিচিং ইনস্টিটিউটের বিচ্ছিন্নতা ওয়ার্ডেই নিযুক্ত ছিলেন। গত ১৫ মে তিনি করোনা ইতিবাচক হিসাবে সনাক্ত হন। ওই ওয়ার্ডেই তাঁরে ভর্তি করা হয়। দুইবার করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল নেতিবাচক আসার পর গত ৩০ মে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রোটোকল মেনে আরও দু'সপ্তাহ পৃথক থাকার পর পের কাজে যোগ দিয়েছিলেন ওই ডাক্তার।
জ্বর বা কাশি জাতীয় অতি পরিচিত কোভিড-১৯'এর লক্ষণ দেখা না গেলেও সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে তাঁর মাথা ঘোরা শুরু হয়। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে সহকর্মীরা ফের ব়্যাপিড অ্যান্টিজেন প্রযুক্তির মাধ্যমে ফের তাঁর লালারসের নমুনার করোনা পরীক্ষা করেছিলেন। ফল আসে ইতিবাচক। সেই ফলাফলকে বিশ্বাস করতে না পেরে, নিশ্চিত হতে ফের পরীক্ষাগারে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন-পলিমারাইজ চেইন বিক্রিয়া পদ্ধতিতে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গত ২৭ জুন ওই ডাক্তার ফের করোনাভাইরাস ইতিবাচক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন।
আর এতেই বিরাট ধন্দে পড়ে গিয়েছে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও জীববিজ্ঞানীরা। এতদিন তাঁরা দাবি করেছেন, কোভিড-১৯ রোগ একবার হলে ফের সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে কোভিড-১৯ বিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়, যা ওই রোগীকে বারবার সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। তাহলে ওই ডাক্তার কীভাবে রোগমুক্ত হওয়ার ৪৫ দিন পর দ্বিতীয়বার আবার সংক্রামিত হলেন, সেটা তাঁদের মাথায় ঢুকছে না।
তবে গ্রেটার নয়ডা গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস-এর বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, সম্ভবত ওই ব্যক্তি প্রথমবারই পুরোপুরি সংক্রমণ মুক্ত হননি। শরীরে ঘাপটি মেরে বসেছিল করোনাভাইরাস। অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডিগুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, সেই সময় ফের শরীরে থেকে যাওয়া ভাইরাস মাথাচাড়া দিতে পারে। এই ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
ওই ডাক্তারবাবু নতুন করে সংক্রামিতই হোন, কিংবা প্রথমবার পুরোপুরি সংক্রমন মুক্ত হননি - ঘটনা যাই ঘটুক, এই বিষয় চিকিৎসক ও গবেষকদের চিন্তা আর বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ দুটি ঘটনার মধ্যে যেটিই ঘটে থাকুক, তা চিকিৎসা পদ্ধতি পাল্টানোর দাবি রাখে।