সংক্ষিপ্ত
শিক্ষাক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছে কোভিড মহামারি
বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা সব ঘরবন্দি
এরমধ্যেই ৩৩ বছর পর মাধ্যমিক পাস করলেন এক ব্যক্তি
তিনি অবশ্য ধন্যবাদই দিচ্ছেন করোনা-কে
বিশ্বজুড়ে শিক্ষাক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছে কোভিড-১৯ মহামারি। অধিকাংশ দেশে বন্ধ স্কুল-কলেজ, ক্লাস চলছে অনলাইনে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগও নেই। তবে অন্তত একজন ছাত্র কোভিড মহামারিকে একেবারে মন থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। কোভিড এসেছিল বলেই তো ৩৩ বছর ধরে চেষ্টার পর অবশেষে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন তিনি।
হায়দরাবাদের মহম্মদ নূরউদ্দিন-এর বয়স এখন ৫১। গত ৩৩ বছর ধরে তিনি এসএসসি পরীক্ষা পাস করার চেষ্টা করছিলেন। অন্যান্য বিষয় ঠিক আছে, কিন্তু বারবার আটকে যেতেন ইংরাজিতে। নিজেই জানিয়েছেন ওই একটি বিষয়ে তিনি বড়ই দুর্বল। তবে আক্ষেপ করেছেন তাঁকে এই বিদেশি ভাষাটি পড়ানোর মতো কেউ ছিল না। তাহলে নাহয় আরও আগেই...
যাইহোক, কোভিড মহামারির জেরে অবশেষে সেই ইংরাজিরও বাধা কেটেছে, এবং পূরণ হয়েছে নূরউদ্দিনের দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মনোবাঞ্ছা। আসলে, এই বছর কোভিড-১৯ মহামারির জন্য তেলেঙ্গানা সরকার দশম শ্রেনির পরীক্ষা নিতে পারেনি। পরীক্ষা ছাড়াই দশম শ্রেণির সকল ছাত্রকে পরের ক্লাসে উন্নীত করা হয়েছে। আর তাতেই ৩৩ বছর পর উতরে গিয়েছেন ৫১ বছরের নূরউদ্দিন।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে তিনি জানিয়েছেন, আর কারোর কাছে টিউশনি নেওয়ার সুযোগ না হলেও তাঁর ভাই ও বোন তাঁকে পড়াশোনা সাধ্য মতো সাহায্য করেছে। ৩৩ বছর ধরে পাস না করতে পারলেও নূরউদ্দিনের কৃতিত্ব, তিনি কিন্তু হাল ছাড়েননি। সুকুমার রায়ের গঙ্গারাম কিন্তু ১৯ বার ম্যাট্রিকে ফেল করেই থেমে গিয়েছিল।
নূরউদ্দিন দানিয়েছেন, তাঁর এই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অদম্য বাসনার পিছনে একটি কাহিনি রয়েছে। একটি নিরাপত্তারক্ষীর কাজের জন্য তাঁর কাছ থেকে দশম শ্রেনীর ফলাফল জমা দিতে বলা হয়েছিল। তাঁর কাছে তখন সেটা না থাকলেও 'ভাগ্যক্রমে' তিনি সেই সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিটি পেয়েছিলেন। ১৯৮৯ সাল থেকে সেই চাকরিই করছেন চার সন্তানের বাবা নূরউদ্দিন।
তিনি জানেন, সরকার সবাইকে পরীক্ষা ছাড়া পাস করিয়ে দিয়েছে বলেই তিনি এই বছর এতদিনের বাধা টপকাতে পেরেছেন। তবে এই সূযোগটা তিনি হারাতে চান না। মহম্মদ নূরউদ্দিন জানিয়েছেন তিনি আরও পড়াশোনা করবেন। স্নাতক, এমনকী স্নাতকোত্তর পাঠক্রমের পড়াশোনাও করতে চান। কারণ এতবছর নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেও তাঁর বেতন মাত্র ৭০০০ টাকা। আর যদি আরও বড় চাকরি নাও জোটে, তাও তিনি জানেন, 'একজন শিক্ষিত মানুষ সর্বত্র সম্মান পান'।