সংক্ষিপ্ত
তাঁর কাছে জাত-ধর্মের কোনও বাছবিচার নেই।
২৭ বছর ধরে বেওয়ারিশ লাশের শেষকৃত্য করে চলেছেন।
পদ্মশ্রী পেলেন শরীফ চাচা।
নেপথ্যে কিন্তু রয়েছে এক করুণ কাহিনী।
অযোধ্যার বিতর্কিত জমি কারা পাবে, এই নিয়ে হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ে কম রক্ত ঝড়েনি। অথচ অযোধ্যার পাশেই উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে এক ৮০ বছরের বৃদ্ধ রয়েছেন যাঁকে বলা যেতে পারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রক্তমাংসের এক রূপ। তাঁর নাম মহম্মদ শরীফ। লোকে তাঁকে আদর করে ডাকে 'চাচা শরীফ'। বস্তুত এই নামটিতেই তিনি বেশি পরিচিত। এই বছর প্রজাতন্ত্রদিবসের দিন পদ্মশ্রী উপাধী প্রাপক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তাঁর নাম।
৮০ বছরের মহম্মদ শরীফ বা চাচা শরীফ গত ২৫ বছর ধরে বলা হয়, উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে ও তার আশপাশের এলাকায়, নিঃস্বার্থভাবে হাজার হাজার দাবিহীন বা বেওয়ারিস মৃতদেহের শেষকৃত্য সম্পাদন করে আসছেন। পেশায় তিনি সামান্য সাইকেল মেকানিক। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগার, কিন্তু তবু মৃতদেহের সৎকার করা যেন তাঁর জীবনের ধর্ম। আর তাতে হিন্দু-মুসলমান কোনও বাছবিচার নেই। তবে মৃত ব্যক্তি কোন ধর্মের তা জানতে পারলে নির্দিষ্ট ধর্মীয় আচারবিধি মেনেই তার শেষকৃত্য সম্পাদন করেন চাচা শরীফ।
মহম্মদ শরীফ জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত তিনি ৩০০০জন হিন্দু এবং ২৫০০ জন মুসলমানের বেওয়ারিস মৃতদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন। আর এই নিঃস্বার্থ সমাজসেবার জন্যই এই বছর তাঁকে পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। তবে তাঁর এই কাজের পিছনে রয়েছে এক মর্মান্তিক ব্যক্তিগত বিপর্যয়।
পদ্ম পুরস্কার পাওয়ার খবর পাওয়ার পর চাচা শরীফ জানিয়েছেন, ২৭ বছর আগে সুলতানপুরে তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেই সময় তা জানতেও পারেননি। প্রায় এক মাস পর তিনি ছেলের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছিলেন। নিজের ছেলের শেষ কাজ করতে না পারার পর থেকেই বেওয়ারিস মৃতদেহদের ইহলৌকিক যোগ ছিন্ন করার কাজে ব্রতী হন তিনি।