সংক্ষিপ্ত
মণিপুরের (Manipur) গরীব ঘরের ছেলে নিংওম্বাম প্রেম আঙ্গোম (Ningombam Prem Angom) 'আয়রনম্যান' (Iron Man) হতে চায়। তাঁকে সাহায্য করছেন শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রা (Anand Mahindra)।
এটা স্বপ্ন পূরণ নয়, স্বপ্নকে সফলভাবে তাড়া করার গল্প। যারা স্বপ্ন পূরণ করতে না পারার জন্য সুযোগ-সুবিধার অভাবের কথা বলে, তাদেরকে নতুন করে অনুপ্রেরণা দেওয়ার কাহিনি। নিংওম্বাম প্রেম আঙ্গোম (Ningombam Prem Angom) দেখিয়ে দিলেন, সুযোগ-সুবিধা নয়, শেষ কথা বলে স্বপ্নকে তাড়া করার অদম্য ইচ্ছে। আর এই ইচ্ছেশক্তির জোরেই, ভারতের এক প্রান্তিক এলাকার অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মেও , ভারতের 'আয়রনম্যান' (Iron Man) হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন তিনি। সঙ্গে পেয়েছেন ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রাকে (Anand Mahindra)।
হেইরোক (Heirok) শহরের নাম অধিকাংশ ভারতবাসীরই জানা নেই। ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্য মণিপুরের (Manipur) রাজধানী ইম্ফল (Imphal) থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দূরের এক ছোট শহর এই হেইরোক। এই শহরেই জন্ম নিংওম্বাম প্রেম আঙ্গোমের। বাবা-মা রাস্তার ধারে একটি পুরি-সিঙ্গারার দোকান চালান। তাতেই পেটের খিদে মেটে প্রেম ও তাঁর পরিবারের। তবে, তাঁর মনের খিদে মেটায় রোবটিক্স (Robotics) বা রোবটবিদ্যা। ওই প্রান্তিক শহরের গরীব ঘরে বসে তাঁর রোবটিক্সের প্রতি ভালোবাসা জন্মালো কীকরে? বিস্ময়কর হলেও, তাঁর এই আগ্রহ-ভালবাসার জন্ম দিয়েছে হলিউডি সিনেমা।
২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল সায়েন্স-ফিকশন হলিউড সিনেমা 'রোবটস' (Robots 2005)। মাত্র ১০ বছর বয়সে সেই সিনেমা দেখেই প্রথম রোবট তৈরি করা শুরু করেছিলেন প্রেম। গরীব ঘরে রোবট তৈরির উপকরণ কোথায় পাবেন? প্রেম হাতে তুলে নিয়েছিলেন স্ক্র্যাপ মেটাল এবং কার্ডবোর্ড। তা দিয়েই নিজের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে শুরু করেছিলেন তিনি, রোবটিক্সে কোনও প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই। ধীরে ধীরে সেই আগ্রহ তাঁর শখে পরিণত হয়। তবে সেই শখের জন্য সারা দিনে তিনি সময় পেতেন দিনের মধ্যে মাত্র কয়েক ঘন্টা। বাকি সময় তিনি বাবা-মাকে দোকানে সাহায্য করতেন।
এখনও পর্যন্ত প্রেম কতগুলি রোবট তৈরি করেছে, তার কোনও হিসাব নেই তার কাছে। কারণ, দারিদ্র্যের কারণে নিয়মিত স্ক্র্যাপ মেটার বা কার্ডবোর্ড কেনার অর্থও ছিল না তাঁর কাছে। তাই, নতুন রোবট তৈরি করতে গেলে, তাঁকে আগের রোবটগুলি ভেঙে উপকরণ জোগার করতে হত। তবে তাঁকে বরাবর অনুপ্রেরণা দিয়ে গিয়েছে হলিউড (Hollywood) ফিল্ম। যেমন 'রিয়েল স্টিল' (Real Steel 2011) সিনেমাটি দেখে, সেখানে দেখানো বিশালাকার রোবটগুলির অনুপ্রেরণায় সে একটি রেপ্লিকা রোবট বানিয়েছিল। সেটি আদতে একটি রোবটিক মিনি ক্যান রেফ্রিজারেটর। আর আছে মার্ভেল কমিক চরিত্র 'আয়রনম্যানে'র হেলমেটের বিভিন্ন সংস্করণ, আয়রনম্যানের রোবটিক হাত ইত্যাদি।
বস্তুত, আয়রনম্যানকে সিনেমায় দেখার পরই সে নিজের লক্ষ্যটা খুঁজে পেয়েছিল। সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে প্রেম জানিয়েছিল তাঁর জীবনের লক্ষ্য আয়রনম্যান হওয়া। না, আয়রমম্য়ান স্যুট তৈরি করে তিনি মহাজাগতিক শত্রুদের মোকাবিলা করতে চান না। তাঁর লক্ষ্য আয়রনম্যানের মতো রোবট তৈরি করে কষ্টে থাকা মানুষদের জীবনকে সহজ করে তোলা। আর তাই, বর্তমানে তাঁর যাবতীয় রোবটিক্স প্রকল্পে পরিচালিত হয়, হলিউড সুপারস্টার রবার্ট ডাউনি জুনিয়র (Robert Downey Jr.) অভিনিত সুপারহিরো চরিত্রটি ঘিরেই।
একের পর এক বিভিন্ন জটিল রোবটিক্স প্রকল্প সে হাতে নেয়। আর এই বিভিন্ন ধরণের প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা সে শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রেমের তৈরি বিভিন্ন আয়রনম্যান রোবটিক্স প্রকল্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। অবশেষে, সেইসব ভিডিও নজর কেড়েছে ভারতের বিশিষ্ট শিল্পপতি, আনন্দ মাহিন্দ্রার। প্রতিভাকে লালন পালন করার ক্ষেত্রে বিশেষ নাম রয়েছে মাহিন্দ্রা গোষ্ঠীর (Mahindra Group) চেয়ারম্যানের। প্রেমের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শীঘ্রই তিনি প্রেমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রেমকে তাঁর স্বপ্নপূরণের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে, হায়দরাবাদের মাহিন্দ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Mahindra University) পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আনন্দ মাহিন্দ্রা। সেইসঙ্গে প্রেম এবং তাঁর ভাইবোনদের শিক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভারও তিনিই নিয়েছেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর জানান শিল্পপতি।
দেখে নিন আনন্দ মাহিন্দার করা টুইটটি -
কমিক চরিত্র আয়রনম্যানের বাবা ছিলেন উদ্ভাবক-শিল্পপতি। তাঁর অর্থের অভাব হয়নি। ইম্ফলের তরুণ 'ভারতীয় আয়রনম্যান', এতদিন কষ্টের মধ্যেই নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করেছেন। আনন্দ মাহিন্দ্রার ধাক্কায় একদিন তিনি কি সত্যিই মহাকাশ ছুঁতে পারবেন, ভবিষ্যতই এর উত্তর দেবে। স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি কি?